Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
TMC

‘সেতু’ ভেঙেছে দলের, চর্চা তৃণমূলের অন্দরে

‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’, ‘কন্যাশ্রী’, ‘রূপশ্রী’র মতো সামাজিক প্রকল্প ছাপিয়েও কেন মানুষের ক্ষোভ এ ভাবে সামনে আসছে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে শাসক দলের অন্দরে।

TMC

—প্রতীকী ছবি।

রবিশঙ্কর দত্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৫:৫৯
Share: Save:

নীচের কথা মাথায় পৌঁছয় না! সন্দেশখালির ‘বিদ্রোহ’ নিয়ে এই চর্চাই দানা বেঁধেছে তৃণমূল কংগ্রেসের অন্দরে। শুধু তা-ই নয়, ইডির উপরে হামলার দীর্ঘ দিন পর পর্যন্ত গোটা ঘটনা নিয়ে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ‘শৈথিল্য’কে এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী করছে শাসক দলেরই একাংশ। রাজনৈতিক পথ ছেড়ে কেবল পুলিশ-প্রশাসনকে এগিয়ে দেওয়ায় এই জট নিয়ে আশঙ্কাও রয়েছে দলের অন্দরে।

সন্দেশখালির বিক্ষোভে বিরোধীদের ‘উস্কানি’ নিয়ে তৃণমূল প্রকাশ্যে সরব। কিন্তু দলের অন্দরে তৃণমূলের একাংশ ত্রুটিও মানছে। জেলা স্তরের নেতারা অনেকেই জানেন, এই অশান্তির পিছনে স্থানীয় স্তরে কোণঠাসা দলেরই কিছু নেতার ভূমিকা রয়েছে। স্থানীয় রাজনীতি ও প্রশাসনে ‘একচ্ছত্র ক্ষমতাবান’ হয়ে ওঠা শেখ শাহজাহানের বিরোধীরাও এই আলোচনায় রয়েছেন। এবং সেই কারণেই ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর ‘কুকর্মে’র তালিকা ক্রমশ সামনে আসছে বলেও মনে করছেন তাঁরা। দলের এই অংশের দাবি, যে বিক্ষোভ এই মুহূর্তে কার্যত তৃণমূল-বিরোধী হয়ে উঠেছে, তার মধ্যে তৃণমূল সমর্থকের সংখ্যা নেহাত কম নয়। এই অবস্থায় শুধু পুলিশকে সামনে রেখে সমস্যার সমাধানের চেষ্টা নিয়েও সংশয় আছে দলে।

‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’, ‘কন্যাশ্রী’, ‘রূপশ্রী’র মতো সামাজিক প্রকল্প ছাপিয়েও কেন মানুষের ক্ষোভ এ ভাবে সামনে আসছে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে শাসক দলের অন্দরে। বিশেষ করে, লোকসভা ভোটের আগে এই পরিস্থিতিতে রাজনীতির অভিমুখ নিয়েও দলের অন্দরে চর্চা শুরু হয়েছে। শাহজাহানের বাড়িতে ইডির হানা বা অফিসারদের উপরে হামলার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে মহিলাদের পথে নেমে পড়ার ঘটনা। রাজ্য দলের এক নেতার কথায়, “সন্দেশখালি তো আছেই। এই ঘটনার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে অন্যত্রও।” সদ্য রাজ্য বাজেটে সরকার যে সব জনমোহিনী সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেছে, এই চর্চায় সে সব পিছনে চলে যাওয়ার আশঙ্কাও করছে দলের এই অংশ।

শাহজাহান ও তাঁর দলবলের কাজকর্ম সম্পর্কে শীর্ষ নেতৃত্ব অন্ধকারে কেন? দলের অন্য এক নেতার কথায়, “আসলে জেলার নেতাদের উপরে সব দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার ভুলই এই পরিস্থিতি তৈরি করেছে। জেলার সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা শাহজাহানের উপরে দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছেন।” সেই ‘স্নেহ-সম্পর্কে’র সূত্রেই নাম এসেছে প্রাক্তন মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের। আর তাঁর উপরে দীর্ঘ সময় এই উত্তর ২৪ পরগনা জেলার দায়িত্ব ছেড়ে রেখেছিলেন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। জেলার এক নেতার কথায়, “মাছের ভেড়ি আর ইট ভাটার বিপুল টাকার এই অঞ্চলে পঞ্চায়েতের ক্ষমতা নিয়ে দলের ভিতরে টানাপড়েন ছিল। নির্বাচনেও সন্দেশখালির দুই ব্লকে দলের অন্য কারও কথা শোনাই হয়নি!” প্রার্থী বাছাইয়ে শাহজাহানের পছন্দেই সিলমোহর দেওয়া হয়েছে। এমনকি, নির্বাচনের পরে পদাধিকারী বাছাইয়ের পদ্ধতিও ছিল একই।

এত দিন কেউ কেন অভিযোগ করেনি, এই যে তৃণমূল সামনে আনছে— তার জবাবও আছে দলের অন্দরেই। দলেরই এক নেতার কথায়, “দলের শীর্ষ নেতৃত্বের প্রশ্রয়ে শক্তিশালী শাহজাহান সাম্রাজ্য ফেঁদেছিলেন সন্দেশখালি সংলগ্ন এলাকা জুড়ে। মহকুমা স্তর পর্যন্ত প্রশাসন চলত তাঁর কথায়। সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পের টেন্ডার থেকে রূপায়ণ পর্যন্ত সব সিদ্ধান্তে শাহজাহানের প্রশ্নহীন ভূমিকায় এই পরিবেশ তৈরি হতে বাধ্য।”

অন্য বিষয়গুলি:

TMC sandeshkhali West Bengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy