প্রতীকী ছবি।
জিজ্ঞাসাবাদের নোটিস পাঠালেই পাল্টা উকিলের চিঠি। সেই সব চিঠির সারাংশ: করোনা আবহে মক্কেল জিজ্ঞাসাবাদে হাজির হতে অক্ষম। পরিস্থিতির উন্নতি হলে তদন্তের স্বার্থে সমস্ত রকম সহযোগিতা করা হবে।
রাজ্যে বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার আর্থিক কেলেঙ্কারির তদন্তে গত তিন মাসে বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তির কাছে নোটিস পাঠিয়ে এমনই জবাব পেয়েছেন সিবিআইয়ের তদন্তকারীরা।
সিবিআই সূত্রের খবর, লকডাউনের প্রথম পর্যায়ে অধিকাংশ অফিসার বাড়ি থেকে কাজ করছিলেন। কিন্তু তদন্ত গতি হারাবে, এই আশঙ্কায় দিন পনেরো পর থেকে করোনা বিধিনিষেধ মেনে সল্টলেকে সিজিও কমপ্লেক্সে নিয়মিত যাতায়াত শুরু করেন তদন্তকারীরা। প্রায় রোজই দায়িত্বপ্রাপ্ত শীর্ষ আধিকারিকেরা তদন্তকারীদের সঙ্গে আলোচনা করতে থাকেন। কারণ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সময়মতো তদন্ত রিপোর্ট জমা দেওয়ার তাগিদ রয়েছে। লগ্নি-তদন্তে নিযুক্ত সিজিও কমপ্লেক্সের এক শীর্ষ আধিকারিক বলেন, ‘‘সারদা ও রোজ ভ্যালির মতো লগ্নি সংস্থার তদন্তে একের পর এক ‘প্রভাবশালী’ ব্যক্তির নাম সামনে এসেছে। তদন্ত শেষের মুখে। কয়েক মাসের মধ্যেই আদালতে চূড়ান্ত চার্জশিট পেশের পরিকল্পনা ছিল। সেক্ষেত্রে হয়তো তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে জিজ্ঞাসাবাদের পরে কিছু ‘প্রভাবশালীকে’ গ্রেফতারও করা যেত। কিন্তু করোনা আবহে জিজ্ঞাসাবাদই করা যাচ্ছে না। এক শীর্ষ আধিকারিক বলেন, ‘‘জরুরি ক্ষেত্রে ভিডিয়ো-বৈঠকে জিজ্ঞাসাবাদের ব্যবস্থা আছে। কিন্তু ‘প্রভাবশালীদের’ ক্ষেত্রে তদন্তে উঠে আসা তথ্যপ্রমাণের বেড়াজালে বেঁধে ফেলে দোষ স্বীকারে বাধ্য করাতে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। ভিডিয়ো-বৈঠকে তেমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করা যায় না। দিনের পর দিন জিজ্ঞাসাবাদ করার পরেও জাল কেটে ‘প্রভাবশালীদের’ বেরিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। সেই জন্যই এ ক্ষেত্রে ভিডিয়ো-বৈঠকে জিজ্ঞাসাবাদ এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে।’’
সারদা, রোজ ভ্যালির আর্থিক অনিয়মের মামলায় সুদীপ্ত সেন, দেবযানী মুখোপাধ্যায়, গৌতম কুণ্ডুর মতো মূল অভিযুক্তেরা জেলে আছেন। তদন্তে পাওয়া তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে ‘প্রভাবশালী’ ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতের অনুমতি প্রয়োজন। লগ্নি সংস্থার সঙ্গে ‘প্রভাবশালীদের’ যোগসাজশের সূত্র যাচাই করার জন্য জেলে গিয়ে মূল অভিযুক্তদের জেরা করা দরকার। কিন্তু করোনা বিধিনিষেধের জেরে জরুরি মামলা ছাড়া আদালতে কোনও আবেদনই গ্রহণ করা হচ্ছে না। সেই জন্য তদন্ত গতি হারাচ্ছে।
নিজাম প্যালেসে সিবিআই দফতরের এক ডিআইজি-সহ আট জন করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পরে ২২ জন কর্মী-অফিসারকে নিভৃতবাসে যেতে হয়। ফলে ১৫ জুন পর্যন্ত ওই দফতর কার্যত বন্ধ ছিল। এখন ধীরে ধীরে কাজকর্ম শুরু হচ্ছে।
জিজ্ঞাসাবাদ বন্ধ থাকা সত্ত্বেও তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চলছে বলে জানান এক তদন্তকারী। তাঁর কথায়, তদন্তে প্রাপ্ত তথ্যপ্রমাণ যাচাইয়ের পরে রিপোর্ট তৈরি করা গুরুত্বপূর্ণ কাজ। কোন অভিযুক্তকে গ্রেফতারের পরে তথ্যপ্রমাণ সুনির্দিষ্ট রিপোর্ট আকারে আদালতে পেশ করা হয়। এখন সেই সব রিপোর্ট তৈরির কাজ চলছে।
পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেই সারদা, রোজ ভ্যালি-সহ বিভিন্ন লগ্নি সংস্থার সঙ্গে নাম জড়িয়ে যাওয়া ‘প্রভাবশালী’ ব্যক্তিদের নোটিস দিয়ে তলব করা হবে। রিপোর্ট তৈরি করা থাকলে ‘প্রভাবশালীদের’ সামনে তা পেশ করা হবে। তাঁদের বিরুদ্ধে তখন আইনি পদক্ষেপ করতে সুবিধে হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, হাইকোর্টের নির্দেশে এখন কয়েকটি মামলায় ‘প্রভাবশালীদের’ মুখোমুখি বসে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। আদালতের নির্দেশ থাকায় ওই ‘প্রভাবশালীরা’ জিজ্ঞাসাবাদ এড়াতে পারছেন না। তবে ওই সব মামলা লগ্নি সংস্থা সংক্রান্ত নয়। করোনা পরিস্থিতির একটু উন্নতি হলেই শীর্ষ আদালতের অনুমতি নিয়ে ‘প্রভাবশালীদের’ মুখোমুখি বসে জিজ্ঞাসাবাদের চেষ্টা হবে। সিবিআইয়ের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘করোনা সঙ্কটে তদন্ত প্রক্রিয়া হয়তো কিছুটা গতি হারিয়েছে। তা বলে আইনের ফাঁক গলে কোনও ‘প্রভাবশালী’ ব্যক্তিই পার পাবেন না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy