সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
শালবনিতে জিন্দল গোষ্ঠীর জমির পাশে তৈরি হবে শিল্প পার্ক। এই সিদ্ধান্তে অনুমোদন দিল রাজ্য মন্ত্রিসভা। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে স্পেন সফরে গিয়ে শালবনিতে ইস্পাত কারখানা গড়ার কথা জানিয়েছিলেন ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। তখন থেকেই জল্পনা ছিল— তা হলে কি জিন্দলদের পাশের জমিতে কারখানা গড়তে চলেছে সৌরভের সংস্থা? বৃহস্পতিবার মন্ত্রিসভায় শিল্প পার্ক তৈরির সিদ্ধান্তের পর সেই জল্পনাই আরও জোরালো হল।
বৃহস্পতিবার কালীঘাটের বাড়িতে মন্ত্রিসভার বৈঠক ডেকেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই বৈঠকের পর রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম জানান, শালবনিতে জিন্দলদের যে জমি দেওয়া আছে, তা বাদে বাকি জমিতে শিল্প পার্ক গড়ে তোলা হবে। এক হাজার ৯৭৯ একর জমিতে গ়ড়ে উঠবে সেই পার্ক। বাকি ১৩২ একর জমিতে থাকবে বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য। ফিরহাদ বলেন, ‘‘শালবনিতে ৪,১০২ একর জমি রয়েছে। সেখানে জেডব্লিউএস গ্রুপের প্রকল্প রয়েছে। বাকি জমিতে শিল্প পার্ক তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’ যদিও ওই পার্কেই সৌরভদের সংস্থা ইস্পাত কারখানা গড়ে উঠবে কি না, তা স্পষ্ট করেননি পুরমন্ত্রী।
গত সেপ্টেম্বরে স্পেনের মাদ্রিদ শহরে অনুষ্ঠিত বাণিজ্য সম্মেলনে সৌরভ জানান, তিনি দীর্ঘ দিন ধরেই একটি ইস্পাত সংস্থার সঙ্গে জড়িত। এর আগে তাঁরা দু’টি ইস্পাত কারখানা করেছেন। একটি আসানসোলে, অন্যটি পটনায়। তৃতীয়টি খুলতে চলেছেন শালবনিতে। তাতে ইতিমধ্যে রাজ্যের ছাড়পত্র মিলেছে। সৌরভই জানান, শালবনির ওই কারখানায় প্রস্তাবিত লগ্নি ২,৫০০ কোটি টাকা। কাজের সুযোগ তৈরি হবে অন্তত ছ’হাজার জনের জন্য। সেই সময় সৌরভের কথাতেই ইঙ্গিত মেলে, তাঁর সংস্থার ইস্পাত কারখানা জিন্দলদের ‘অব্যবহৃত’ জমিতে তৈরি হতে চলেছে। যদিও কোনও পক্ষ থেকেই তা আনুষ্ঠানিক ভাবে স্পষ্ট করা হয়নি।
বড় মাপের ইস্পাত কারখানার প্রতিশ্রুতি সেই বাম আমল থেকে শুনছে পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনি। সেই সময় জমি পেয়েছিল জিন্দল গোষ্ঠী। ২০০৮ সালের নভেম্বরে জিন্দলদের প্রস্তাবিত ইস্পাত কারখানার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তবে সে দিনই ফেরার পথে তাঁর কনভয়ে ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণ হয়। শুরু হয় মাওবাদীদের আন্দোলন-পর্ব। জিন্দলেরা ইস্পাত কারখানার পরিকল্পনা বাতিল করে। তার পর দেড় দশক অতিক্রান্ত। ইস্পাত কারখানার বদলে সিমেন্ট কারখানা গড়ার প্রস্তুতি দেয় জিন্দলেরা। ২০১৮ সালে সেই কারখানার উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তখন থেকেই খালি পড়ে রয়েছে বিশাল জমি।
সরকারি সূত্রে খবর, বাম জমানায় শালবনিতে জিন্দল গোষ্ঠীকে ৪১০১.৯৭ একর জমি দেওয়া হয়েছিল। ভূমি দফতরের পর্যবেক্ষণ, এখনও পর্যন্ত তার ৮৪৯.০২ একরে তৈরি হয়েছে সিমেন্ট কারখানা। রঙের কারখানা গড়ার কাজও শুরু হয়েছে। সব মিলিয়ে মোট জমির ২০.৭০% ‘ব্যবহৃত’ হয়েছে। বাকি ৩২৫২.৯৫ একর পড়ে রয়েছে ‘অব্যবহৃত’ অবস্থায়। শতাংশের নিরিখে তা ৭৯.৩০। মাস কয়েক আগেই শালবনিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা জানিয়েছিলেন, শিল্পায়নের জন্য পাওয়া জমির ‘অব্যবহৃত’ অংশ রাজ্য সরকারকে ফেরত দিচ্ছে জিন্দল গোষ্ঠী। সেখানেই নতুন শিল্প গড়ে তোলা হবে। ঘটনাচক্রে, তার পরেই সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের লগ্নি-প্রস্তাব।
পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী যে দিন ‘অব্যবহৃত’ জমিকে শিল্পের কাজে লাগানোর কথা বলেছেন, তার পর থেকেই শালবনিতে জিন্দলদের প্রকল্পের মধ্যে থাকা জমির মাপজোক শুরু হয়। জমি জরিপের কাজ করেছে রাজ্যের ভূমি দফতর। প্রকল্প এলাকায় তিন দিন ধরে জমি জরিপের কাজ চলেছে। তার সবিস্তার রিপোর্টও পাঠানো হয়েছে রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগমে। জেলা প্রশাসনের একটি সূত্রের দাবি, ওই জমিতেই সৌরভের কারখানা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও সরকারি ভাবে তা এখনও জানানো হয়নি। সৌরভ বা তাঁর সংস্থাও এ ব্যাপারে কিছু জানাননি প্রকাশ্যে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy