Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

গেট আগলে পার্বতী, তথ্যচিত্র রেলের

বুধবার তাঁকে নিয়ে সাড়ে চার মিনিটের তথ্যচিত্র প্রকাশ করেছে দক্ষিণ-পূর্ব রেল। সেখানে বছর পঁয়ত্রিশের পার্বতী বলছেন, ‘‘মনের জোর থাকলে সব সম্ভব হয়ে যায়।’’

পার্বতী ডোম। ছবি: সুজিত মাহাতো

পার্বতী ডোম। ছবি: সুজিত মাহাতো

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল
আদ্রা শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০১৯ ০১:৫২
Share: Save:

আলো নিভিয়ে ঘুমিয়েছে পুরুলিয়া শহর। হুইসল বাজিয়ে পেরিয়ে যাচ্ছে ট্রেন বা মালগাড়ি। রেলগেটের পাশে এক ফালি ঘরে সবুজ আর লাল পতাকা নিয়ে রাত জাগছেন পার্বতী। ড্রাইভারদের দিচ্ছেন নিশ্চিন্তির সঙ্কেত। বছর দু’য়েক ধরে দক্ষতার সঙ্গে এই কাজ করে আসছেন পার্বতী ডোম। পুরুলিয়ার ‘রেলগেট ওম্যান’।

বুধবার তাঁকে নিয়ে সাড়ে চার মিনিটের তথ্যচিত্র প্রকাশ করেছে দক্ষিণ-পূর্ব রেল। সেখানে বছর পঁয়ত্রিশের পার্বতী বলছেন, ‘‘মনের জোর থাকলে সব সম্ভব হয়ে যায়।’’

যাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রমে নিত্যদিন দূর-দূরান্তের যোগাযোগ গড়ে ওঠে, সেই সমস্ত কর্মীদের কথা তথ্যচিত্রে প্রকাশ করছে দক্ষিণ-পূর্ব রেল। সেই তালিকায় সাম্প্রতিক সংযোজন পার্বতী। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সঞ্জয় ঘোষ জানান, এখনও পর্যন্ত সাত জন কর্মীকে নিয়ে এমন তথ্যচিত্র করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ছ’জনই মহিলা। পুরুলিয়া থেকে পার্বতীই একমাত্র। সঞ্জয়বাবু বলেন, ‘‘যে সমস্ত কাজ এক সময়ে পুরুষদের একচেটিয়া ছিল, এখন মহিলারাও অনায়াস দক্ষতায় সে সব সামলাচ্ছেন। রেল তাঁদের স্বীকৃতি দেওয়ার চেষ্টা করছে।’’

কিন্তু স্বীকৃতির পাশাপাশি, নিরাপত্তার প্রশ্নও রয়েছে। গত এক বছরে আদ্রা ডিভিশনেই বেশ কিছু জায়গায় রেলগেটের দায়িত্বে থাকা পুরুষ কর্মীর (‌গেটম্যান) উপরে হামলা হয়েছে। সেখানে পার্বতীর নিরাপত্তা কতটা? সঞ্জয়বাবু বলেন, ‘‘রেলগেটে সিসিটিভি (‌ক্লোজড সার্কিট) ক্যামেরা রয়েছে। সিগন্যালিং রুম থেকে ওই এলাকায় সর্বক্ষণ নজর রাখা হয়। পার্বতীর সঙ্গে ফোনেও যোগাযোগ রাখেন অন্য কর্মীরা। আর আরপিএফ তো টহল দেয়-ই।’’ তবে ‘‘সাবধানের মার নেই,’’ বলছেন পার্বতী। জুড়ছেন, ‘‘রাতে গেটের পাশের ঘরে ভিতর থেকে তালা দিয়ে দিই। ট্রেন এলে খুলি। ফের তালা দিই।”

ছোট থেকে অভাবের কারণে স্কুলে যাওয়ার সুযোগ জোটেনি। স্বামী জুগনু ডোম ছিলেন রেলকর্মী। অসুস্থতায় তাঁর মৃত্যুর দু’বছর পরে, ২০১৭ সালে রেলে কাজ পান পার্বতী। কাজ পাওয়ার আগে এলাকার এক শিক্ষকের সুবাদে অক্ষর পরিচয় পর্ব, নাম সই করতে শেখা। প্রথমে দিন পনেরোর প্রশিক্ষণ। তার পরে আদ্রা ডিভিশনের পুরুলিয়া স্টেশনের অদূরে কাটিন রেলগেটে ‘পোস্টিং’। অন্য দিনগুলিতে কাজ থাকে দিনে। তবে সপ্তাহে দু’দিন রাত ১০টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত ‘ডিউটি’ পড়ে তাঁর। জানান, রাতের ‘ডিউটি’তে প্রথম প্রথম ঘুম পেত। ভয়ও যে করত না, এমন নয়। সে সময়ে ঘুম আর ভয় কাটানোর একটা টোটকা ছিল—সন্তানদের মুখ। এখন ছেলে দেব দশম শ্রেণিতে পড়ে। মেয়ে দীপিকা অষ্টম শ্রেণিতে। পুরুলিয়ার রেল কলোনিতে তিন জনের সংসার।

নজর রেল লাইনে। পার্বতী বলে চলেন, ‘‘আমার ভুলে অঘটন হতে পারে। নিজের বিপদ তার কাছে তুচ্ছ। কাজটা ঠিক করে করার সেটা আর একটা টোটকা।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy