Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

এইচআইভির ভুল রিপোর্ট, বিপন্ন বধূ

দক্ষিণ কলকাতার ল্যাবরেটরিতে একটি রক্ত পরীক্ষার রিপোর্টই পাল্টে দিয়েছে তাঁর জীবন। মা হওয়ার অপেক্ষায় দিন গুনতে গুনতেই ধাক্কাটা আসে! রক্তে এইচআইভি মিলেছে ভেবে গালিগালাজ করে বউকে বাপের বাড়ি ফেলে উধাও স্বামী। পরে আরজিকরের রিপোর্টে কিন্তু দেখা গেল, কোথায় কী? আগের রিপোর্টটাই ভুল!

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

মেহবুব কাদের চৌধুরী
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৭ ০৪:৩৯
Share: Save:

দক্ষিণ কলকাতার ল্যাবরেটরিতে একটি রক্ত পরীক্ষার রিপোর্টই পাল্টে দিয়েছে তাঁর জীবন।

মা হওয়ার অপেক্ষায় দিন গুনতে গুনতেই ধাক্কাটা আসে! রক্তে এইচআইভি মিলেছে ভেবে গালিগালাজ করে বউকে বাপের বাড়ি ফেলে উধাও স্বামী। পরে আরজিকরের রিপোর্টে কিন্তু দেখা গেল, কোথায় কী? আগের রিপোর্টটাই ভুল!

উত্তর ২৪ পরগনার বাসিন্দা ওই বধূ পরে গ্রামীণ হাসপাতালেও পরীক্ষা করান। সংক্রমণ হয়নি বলে নিশ্চিতও হন। কিন্তু তাতেও পাল্টায়নি বিড়ম্বনা।

প্রতিকার চেয়ে ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের দ্বারস্থ এখন ১১ মাসের মেয়ের মা। কিন্তু আগরায় জরি-শ্রমিক স্বামী বা শ্বশুরবাড়িতে কাউকে তিনি সত্যিটা বোঝাতে পারেননি। বাদুড়িয়া এলাকায় তাঁর শ্বশুরবাড়ির মহল্লা এখনও ‘রক্তে খারাপ অসুখ ধরা’ বউকে ফেরাতে নারাজ। দায় এড়াচ্ছে পঞ্চায়েতও। এইচআইভি নিয়ে গ্রামে সচেতনতার হাল কোন তিমিরে, এই ঘটনায় তা ফের বেআব্রু হয়ে যাচ্ছে। রাজ্য এড্‌স নিয়ন্ত্রণ সোসাইটির জনৈক কর্তা মানছেন, সব স্তরে সচেতনতা গড়ে ওঠেনি। তাঁর মতে, ‘‘পঞ্চায়েত বা থানা স্তরে সজাগ টাস্ক ফোর্স থাকলে বহু বিক্ষিপ্ত ঘটনা ধরা যেত।’’ কিন্তু রবিবার মেয়েটির শ্বশুরবাড়ি গেলে তাঁর শাশুড়ি এখনও বলেন, ‘‘কী করে ঘরে নিতাম!’’ বাড়িতে শিক্ষিত বলতে এগারো ক্লাসের ছাত্রী, মেয়েটির ননদ। সে বলছে, ‘‘বড়দের কথার উপরে আমি কী বলব!’’ আর বধূর স্বামীকে আগরায় ফোন করা হলে তাঁর যুক্তি, ‘‘কলকাতার রিপোর্টকে অবিশ্বাস করি কী করে?’’ কিন্তু স্বামী-স্ত্রীর কারও এইচআইভি পজিটিভ রিপোর্ট মিললে তো অন্য জনেরও পরীক্ষা করা উচিত! যুবকের কাছে এর সদুত্তর মেলেনি।

আরও পড়ুন: রাজ্যকে বিশেষ প্যাকেজে টাকা দেওয়া বন্ধের সিদ্ধান্ত কেন্দ্রের

এড্‌স নিয়ন্ত্রণ কর্তাদের মতে, ইন্টিগ্রেটেড কাউন্সেলিং অ্যান্ড টেস্টিং সেন্টারের তকমাধারী কিছু ল্যাব ছাড়া এইচআইভি পরীক্ষা ঝুঁকির। নির্দিষ্ট পদ্ধতি না-মানলে ভুল রিপোর্ট আসতেই পারে! কিন্তু লেক মার্কেটের ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টারটির কর্তা মৃত্যুঞ্জয় দেবনাথের প্রশ্ন, ‘‘কোনও যান্ত্রিক ত্রুটি হলে আমরা কী করব?’’

গ্রামীণ স্বাস্থ্যকর্মীর পরামর্শে ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে বধূটি ৬০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন। মন্ত্রী সাধন পাণ্ডের আশ্বাস, ‘‘অভিযোগ প্রমাণ হলে কড়া শাস্তি হবে।’’ কিন্তু পরিস্থিতি তাতে পাল্টাচ্ছে না।

১০০ দিনের কাজের মজুর, হতদরিদ্র বাপের ঘরে ছটফটে মেয়েকে কোলে একলা লড়ছেন তরুণী। আদালতের লড়াইয়ে জিতে অপবাদের শোধ নিতে মরিয়া তিনি।

অন্য বিষয়গুলি:

HIV Report Diagnostic Centre
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE