(বাঁ দিকে) সুকান্ত মজুমদার এবং শুভেন্দু অধিকারী। —ফাইল চিত্র
ভোটে জিততে গেলে সংগঠন মজবুত করাই একমাত্র রাস্তা। ইডি-সিবিআই দেখিয়ে বা কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোটে জেতা যাবে না! দলীয় কর্মিসভায় গিয়ে এই বার্তাই দিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার। সদ্যসমাপ্ত লোকসভা ভোট এবং রাজ্যের চারটি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে ভরাডুবির পর সুকান্তের এই বার্তায় জল্পনা তৈরি হয়েছে। দলের অন্দরেই প্রশ্ন উঠেছে, লোকসভা-পূর্ববর্তী সময়ে দল যে ‘কৌশলে’ চলছিল, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী যে বার্তা দিতেন প্রকাশ্যে, সেই ‘পথ’ থেকেই কি সরে আসার কথা বলছেন সুকান্ত?
সুকান্তের এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না তৃণমূল। শাসকদলের নেতা কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘বিলম্বিত বোধোদয়! এ কথা তো আমরাই অনেক আগে থেকে বলে আসছি। আসলে রাজ্য বিজেপির ব্যাপারটা হচ্ছে বিরিয়ানির মশলা দিয়ে চচ্চড়ি রাঁধার মতো।’’
গত লোকসভা ভোটে রাজ্যে শাসকদলের কাছে পর্যুদস্ত হয়েছে বিজেপি। তার রেশ কাটিয়ে উঠতে না-উঠতে উপনির্বাচনেও চারটি কেন্দ্রেই বিশাল ব্যবধানে হেরেছে তারা। লোকসভা ভোটের নিরিখে তিন কেন্দ্রে ‘লিড’ থাকা সত্ত্বেও জিততে পারেনি পদ্মশিবির। এই পরিস্থিতিতে দলীয় নেতা-কর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করার দিকে নজর দিয়েছেন নেতৃত্ব। রবিবার হুগলির হিন্দমোটর ও পান্ডুয়ায় কর্মিসভায় গিয়েছিলেন সুকান্ত। দু’জায়গাতেই দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তাঁর বার্তা, সব ছেড়ে আগে দলের সাংগঠনিক শক্তি মজবুত করার লক্ষ্যে ঝাঁপানো জরুরি। হিন্দমোটরের সভা থেকে সুকান্ত বলেন, ‘‘মোদীজি এসে ম্যাজিক ছড়িয়ে দেবেন আর আমরা শ্রীরামপুর জিতে যাব, এটা হবে না। অনেকেই বলে, দাদা সিবিআইকে বলুন, ওকে অ্যারেস্ট করিয়ে নিতে। তা হলেই আমরা জিতে যাব। হবে না! অনেকে বলে, ওকে জেলে ঢুকিয়ে দিন, জিতে যাব। তা-ও হবে না!’’
সুকান্তের যুক্তি, অনুব্রত মণ্ডলও তো জেলে রয়েছেন। তার পরেও তো বীরভূম দখল করতে পারেনি বিজেপি। লোকসভা ভোটে বীরভূমের দু’টি আসনেই হেরেছে তাঁদের দল। বিজেপির রাজ্য সভাপতির কথায়, ‘‘অনুব্রত মণ্ডল তো ছিলেন। আছেন তো জেলে? বীরভূম জিতেছি আমরা?’’ এর পরেই তাঁর স্পষ্ট বার্তা, ‘‘আপনি পরিশ্রম করে যদি সংগঠন তৈরি করতে পারেন, তা হলে জিতবেন। আর যদি পরিশ্রম করে সংগঠন তৈরি করতে না পারেন, যাকে খুশি অ্যারেস্ট করুন, কোনও দিন জিততে পারবেন না।’’ পান্ডুয়াতেও সুকান্তের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট করিয়েও কিছু হবে না! জিততে হলে দলীয় নেতা-কর্মীদেরই আরও সক্রিয় হতে হবে। সুকান্ত বলেন, ‘‘ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে। তবে সেটা বিরিয়ানির মশলার মতো। বিরিয়ানির চাল আর মাংস দলের কর্মীদেরই হতে হবে। তবেই ভাল বিরিয়ানি হবে।’’
ঘটনাচক্রে, ২০২১ সালে বিধানসভা ভোটের পর থেকেই রাজ্যে বিভিন্ন ঘটনা ও দুর্নীতির অভিযোগের তদন্তভার ইডি-সিবিআইয়ের হাতে গিয়েছে। ‘ভোট-পরবর্তী হিংসা’ থেকে শুরু করে নিয়োগ দুর্নীতি, গরু পাচার, কয়লা পাচার, রেশন দুর্নীতি মামলায় শাসকদলের একাধিক নেতা-মন্ত্রী গ্রেফতার হয়েছেন দুই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার হাতে। এই পরিস্থিতিতে তৃণমূল অনেক দিন ধরেই অভিযোগ করে আসছে, ইডি-সিবিআইকে ‘হাতিয়ার’ এ রাজ্যে ভোটে জিততে চাইছে বিজেপি। এ ক্ষেত্রে তাদের নিশানায় মূলত থাকেন শুভেন্দুই। কারণ, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুকে নানা জনসভা, কর্মিসভা থেকে তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে ইডি-সিবিআই ডেকে তদন্ত করানোর হুমকি দিতে শোনা গিয়েছে। তারিখ বেঁধে দেওয়ারও কথা শোনা গিয়েছে শুভেন্দুর মুখে। রাজ্য বিজেপির বাকি নেতাদের একাংশও হেঁটেছেন সেই পথে। সুকান্তের মুখেও অবশ্য ‘ইডি-সিবিআই হুমকি’ শোনা গিয়েছে নানা সময়ে! কিন্তু তার পরেও রাজ্যে বিশেষ কোনও সুবিধা হয়নি বিজেপির। বরং ২০১৯ সালের তুলনায় সদ্যসমাপ্ত লোকসভা ভোটে দলের ফল খারাপই হয়েছে। রাজ্যে ছ’টি আসন হারিয়েছে তারা। এই পরিস্থিতিতে সুকান্তের ‘ইডি-সিবিআই নির্ভরতা কাটিয়ে সংগঠনে জোর দেওয়ার বার্তা’ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে পদ্মশিবির। কারও কারও প্রশ্ন, শাসকদলের নেতাদের বিরুদ্ধে ইডি-সিবিআইকে দিয়ে তদন্ত করানোর ‘হুমকি’ দিয়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করার যে ‘কৌশল’ নিতে দেখা যেত শুভেন্দুকে, সুকান্ত কি সেই ‘কৌশল’ থেকে সরে আসার বার্তাই দিলেন?
কুণাল অবশ্য সুকান্তকেই বিঁধেছেন। তিনি বলেন, ‘‘যে সুকান্তবাবু এ সব বলছেন, তিনিও তো বলতেন, ‘এর বাড়িতে সিবিআই যাবে, ওর বাড়িতে সিবিআই যাবে।’ তিনিও তো এই ভাইরাস থেকে মুক্ত নন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy