প্রতীকী ছবি।
কলকাতা-সহ গোটা দেশে প্রতিদিন লাফিয়ে বাড়ছে করোনা রোগীর সংখ্যা। কিন্তু বৃদ্ধির আনুপাতিক হার বা স্ফীতি কমছে। অন্তত গত তিনদিনের পরিসংখ্যান তেমনই বলছে।
যা দেখে অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগছে, তা হলে কি চূড়ান্ত খারাপ সময় কেটে গিয়েছে? উত্তর হল, আপাতত তেমন মনে হচ্ছে। কিন্তু সেটা নিশ্চিত করে বলার সময় এখনও আসেনি। কারণ, পরিসংখ্যান মাত্র তিনদিনের। এর থেকে করোনা মোকাবিলা বা কোভিড সতর্কতার বিষয়ে কোনও নীতি রূপায়ণ করা অনুচিত হবে। তবে যে সমস্ত সতর্কতা নেওয়া হয়েছে, তা আপাতত কাজ করছে বলে মনে করা যেতে পারে।
সেই কারণেই আগামী দিনগুলিতেও সামগ্রিক সতর্কতা মেনে চলতে হবে। অর্থাৎ, দু’টি মাস্ক পরা (চিকিৎসকেরা অবশ্য বলছেন, দু’টি মাস্ক যে পরতেই হবে, এমন নয়। বাধ্যতামূলক ভাবে পরতে হবে এন-৯৫ মাস্ক। কাপড়ের মাস্ক বা সার্জিক্যাল মাস্ক এই সংক্রমণ ঠেকাতে পারবে না), ভিড় একেবারেই এড়িয়ে চলা, ঘন ঘন স্যানিটাইজার ব্যবহার করা— এ সবই জারি রাখতে হবে। নইলে চূড়ান্ত খারাপ সময় কেটে যাওয়া তো দূরস্থান, বৃদ্ধির আনুপাতিক হার আবার ঊর্ধ্বগতি হবে।
বিশেষজ্ঞদের আরও বক্তব্য, যদি আগামী দিনেও দৈনিক বৃদ্ধির আনুপাতিক হার এই ভাবে কমতে থাকে, তা হলে জোরের সঙ্গে বলা যাবে যে, সবচেয়ে খারাপ সময় কাটতে চলেছে। গত তিনদিনের বৃদ্ধির আনুপাতিক হারে কমতিকে ‘আশাব্যঞ্জক’ বলা যেতে পারে। প্রসঙ্গত, এর সঙ্গে চিকিৎসাবিজ্ঞান বা চিকিৎসাশাস্ত্রের কোনও সম্পর্ক নেই। এ একেবারেই অঙ্ক এবং পরিসংখ্যান-নির্ভর অনুমান।
ওয়াকিবহালরা এমনও মনে করছেন, সংক্রমণ যত দ্রুত ছড়াবে, তত দ্রুত গণ রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা (হার্ড ইমিউনিটি) বৃদ্ধি পাবে। ভাইরাসও যত দ্রুত নিজের বৃদ্ধি ঘটাবে, ততই তার বিনাশ ত্বরাণ্বিত হবে। ফলে সে অর্থে সংক্রমণ বৃদ্ধির ফলে ভাইরাসেরও শক্তিক্ষয় হবে।
শুক্রবার সারা দেশে নতুন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ লক্ষ ৪১,৯৮৬। এর মধ্যে মহারাষ্ট্রে ৩৬,২৬৫। পশ্চিমবঙ্গে ১৮,২১৩। কর্ণাটকে ৮,৪৪৯। তামিলনাড়ুতে ৬,৯৮৩ এবং কেরলে ৫,২৯৬ জন। যদি শহরে আক্রান্তের সংখ্যা দেখা যা, তা হলে সবচেয়ে উপরে মুম্বই— ২০,৯৭১ জন। দিল্লিতে ১৭,৩৩৫ জন। কলকাতায় ৭,৪৮৪ জন। বেঙ্গালুরুতে ৬,৮১২ জন। চেন্নাইয়ে ৩,৭৫৯ জন এবং তিরুঅনন্তপুরমে ১,১১৬ জন।
শুক্রবার গোটা দেশে সংক্রমণের হার ছিল ৯ শতাংশের একটু বেশি। পশ্চিমবঙ্গে সংক্রমণের হার ছিল ২৬ শতাংশের বেশি। দিল্লিতে প্রায় ১৭ শতাংশ। কেরলে ৮ শতাংশের সামান্য বেশি। তামিলনাড়ুতে সাড়ে সাড়ে ৫ শতাংশ এবং কর্ণাটকে ৪ শতাংশের সামান্য বেশি।
ফলে এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, করোনা সংক্রমণ প্রতিদিনই বাড়ছে। কিন্তু তারই পাশাপাশি বৃদ্ধির আনুপাতিক হার গত তিনদিনে কমেছে। অর্থাৎ, করোনার গতিবৃদ্ধি কমেছে। এই অতিমারি কতদিন চলবে, তা গতির হারের উপরেই নির্ভর করে। ফলে গত তিনদিনের গতির আনুপাতিক হার থেকে এমন ভবিষ্যদ্বাণীর কথা ভাবা যেতে পারে যে, সবচেয়ে খারাপ সময়টা কেটে গেলেও গিয়ে থাকতে পারে। বিষয়টি একেবারেই সংখ্যানির্ভর। যেমন সংখ্যার উপর নির্ভর করে অর্থনীতি-সহ যাবতীয় বিষয় সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়ে থাকে। কিন্তু একইসঙ্গে এ-ও ঠিক যে, তিনদিনের বৃদ্ধির আনুপাতিক হার ওই ভবিষ্যদ্বাণী করার পক্ষে একেবারেই যথেষ্ট নয়।
দক্ষিণ আফ্রিকায় ওমিক্রনের প্রাদুর্ভাবের পর বলা হয়েছিল, করোনার এই রূপ ১০০ বা ২০০ মিটার দৌড়তে পারবে। ম্যারাথন দৌড়ের ক্ষমতা এর নেই। সেই অনুযায়ীই দেখা যাচ্ছে, আক্রান্তেরা মোটামুটি ভাবে পাঁচ দিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠছেন।
এখন দেখার, এই ধারা বজায় থাকে কি না। একইসঙ্গে, বৃদ্ধির আনুপাতিক হারের হ্রাসও জারি থাকে কি না। আগামী এক বা দেড় সপ্তাহে তেমন হলে তখন আশার আলো আরও জোরাল হয়ে দেখা দিতে পারে। তবে গত তিনদিনের বৃদ্ধির আনুপাতিক হার বা স্ফীতি যে কমতির দিকে, তা ঠিক। তবে তার মানেই যে সমস্ত সতর্কতা বিসর্জন দিতে হবে, তা একেবারেই নয়। বরং সমস্ত কোভিড সুরক্ষাবিধি অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলতে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy