মাথার উপর টালির চাল। আবেদন করেও পাকা ঘর মিলছে না বলে অভিযোগ। নিজস্ব চিত্র।
একদা কেন্দ্রীয় নিয়মবিধি মেনেই প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় অনেকের নাম তুলেছিল তারা। কিন্তু কেন্দ্রের নতুন বিধান অনুযায়ী, সংশোধিত তালিকায় কোনও নাম অন্তর্ভুক্তির ক্ষমতা পঞ্চায়েতের হাতে নেই। যদিও প্রশাসনের সংশোধিত তালিকায় অনুমোদন দেওয়ার দায়িত্ব পঞ্চায়েত স্তরের গ্রামসভারই। তারা মনে করলে সংশোধিত তালিকা থেকে কোনও অযোগ্য উপভোক্তার নাম বাদ দিতে পারে। কিন্তু নাম অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষমতা হারানোয় বিভিন্ন পঞ্চায়েতের কমবেশি সমস্যা হতে পারে বলে পর্যবেক্ষকদের একাংশের অভিমত। যাঁদের নাম উঠেছিল, অথচ নতুন ব্যবস্থায় তা ছাঁটাই হয়ে গিয়েছে, তাঁদের রোষের মুখেও পড়তে হতে পারে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের।
আধিকারিকদের অনেকের মতে, আবাস যোজনায় উপভোক্তার নাম বাছাইয়ের ক্ষমতা যাদের হাতে ছিল, সেই পঞ্চায়েত নতুন করে তালিকায় আর কারও নাম ঢোকাতে পারবে না— এই নিয়ম অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। অনেক আধিকারিক জানাচ্ছেন, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় বরাদ্দের অনুমোদন ফের চালু করলেও কেন্দ্র নানা শর্তে কার্যত বেঁধে ফেলেছে রাজ্য সরকারকে। সেই বাঁধনের অঙ্গ হিসেবে প্রথমে যেমন তালিকা থেকে অযোগ্যদের নাম ছেঁটে ফেলতে বলা হয়েছিল, তেমনই পঞ্চায়েতের হাত থেকে নাম ঢোকানোর ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন জেলায় গ্রামসভা ডেকে তালিকা অনুমোদনের কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে।
প্রশাসনিক কর্তাদের অনেকে জানান, ২০১১ সালের ‘সোশিয়ো-ইকনমিক কাস্ট সেন্সাস’ বা জাতি গণনার ভিত্তিতে শুরুতে আবাস যোজনার উপভোক্তা নির্বাচন হলেও পরে পঞ্চায়েতগুলি যাতে প্রয়োজন অনুযায়ী উপভোক্তার নাম তালিকায় তুলতে পারে, সেই ব্যবস্থায় সায় দিয়েছিল কেন্দ্র। সমীক্ষার বাইরে থেকে যাওয়া কোনও উপযুক্ত উপভোক্তা যাতে বঞ্চিত না-হন, সেটা নিশ্চিত করতেই এই পদক্ষেপ করা হয়েছিল। চলতি পরিস্থিতিতে এত দিন ধরে উপভোক্তার তালিকায় ঠাঁই পাওয়া বাসিন্দাদের উপযুক্ততা যাচাই করতে হচ্ছে প্রশাসনকে।
অনেক প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকের বক্তব্য, এই কড়াকড়িতেই উভয় সঙ্কট তৈরি হয়েছে রাজ্যের সামনে। তাঁদের ব্যাখ্যা, আবাস (প্লাস) প্রকল্পে অন্তত ৪৬ লক্ষ উপভোক্তার তালিকা যাচাই করতে হচ্ছে প্রশাসনকে। কেন্দ্রের বেঁধে দেওয়া শর্ত মানতে গিয়ে বাদ দিতে হচ্ছে অযোগ্যদের নাম। অথচ সেই সব নামই এক সময় তালিকাভুক্ত করেছিল বিভিন্ন পঞ্চায়েত। এখন বাদ যাওয়া সেই নাম অন্তর্ভুক্ত করার কোনও ক্ষমতা পঞ্চায়েতের না-থাকায় সংশ্লিষ্ট বাসিন্দাদের ‘রোষ’ তৈরি হতে পারে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের উপরে। আবার যত নাম বাদ যাবে, সমানুপাতিক হারে বরাদ্দও কমবে রাজ্যের খাতে। পঞ্চায়েত ভোটের আগে সেই পরিস্থিতি ‘অস্বস্তিকর’।
তবে এর ভাল দিকও দেখছেন অনেকে। রাজ্য প্রশাসনেরই অনেকে জানাচ্ছেন, এতে অন্তত ন্যায্য উপভোক্তারা আবাস যোজনার বাড়ি থেকে বঞ্চিত হবেন না। পঞ্চায়েত ভোটের আগে সেই বিষয়টি জনসমক্ষে তুলে ধরারও সুযোগ পাবে রাজ্য সরকার। তখন ত্রুটি সংশোধন করে ন্যায্য প্রাপকদের বাড়ি দেওয়ার দাবি জানাতে পারবে তারা।
গ্রামসভায় অনুমোদিত উপভোক্তা-তালিকা পৌঁছবে জেলা স্তরের কমিটির কাছে। জেলা পরিষদের সভাধিপতি, জেলাশাসক, অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) এবং কর্মাধ্যক্ষকে নিয়ে গড়া সেই কমিটি তালিকাটিকে চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়ে তা আপলোড করবে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার পোর্টালে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy