Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Teachers Recruitment Scam

এমন দুর্নীতি আগে দেখেনি বাংলা! ৩৬০০০ শিক্ষকের চাকরি বাতিলের নির্দেশে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়

শুক্রবার বিচারপতির রায়ে এক ধাক্কায় শিক্ষক থেকে আপাতত পার্শ্বশিক্ষক হয়ে গিয়েছেন ৩৬ হাজার প্রাথমিক শিক্ষক। নতুন করে ইন্টারভিউ পাশ করলে তাঁরা চাকরি ফিরে পাবেন। না-হলে চাকরি খোয়াতে হবে।

Justice Abhijit Ganguly

২০১৬ সালের প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে যে ভাবে ইন্টারভিউ হয়েছিল তার সঙ্গে কার্যত স্থানীয় ক্লাব পরিচালনার মিল পেয়েছেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০২৩ ০৭:৫২
Share: Save:

শুধু পদ্ধতিগত ত্রুটি নয়, ২০১৬ সালের প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে যে ভাবে ইন্টারভিউ হয়েছিল তার সঙ্গে কার্যত স্থানীয় ক্লাব পরিচালনার মিল পেয়েছেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। এই বেনিয়মের সঙ্গে দুর্নীতির সম্পর্ক থাকার কথাও একেবারে উড়িয়ে দেননি তিনি। অ্যাপ্টিটিউড টেস্ট না-হওয়ার পাশাপাশি ইন্টারভিউয়ে কী ভাবে নম্বরের অসঙ্গতি আছে তা-ও রায়ে উল্লেখ করেছেন তিনি। বিচারপতির রায়ে বলা হয়েছে, শিক্ষাগত যোগ্যতার জন্য বরাদ্দ নম্বরে একেবারে তলানিতে ঠাঁই পাওয়া প্রার্থীরা ইন্টারভিউয়ে কার্যত ১০-এ ১০ পেয়েছেন! কোর্টের পর্যবেক্ষণ, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক এবং টেট-এ ধারাবাহিক ভাবে খারাপ ফল করা পড়ুয়া কী ভাবে পুরো নম্বর পাওয়ার মতো ইন্টারভিউ দিলেন তার সদুত্তর মেলেনি। তার ফলেই এই পুরো প্রাথমিক নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে বিচারপতির মন্তব্য, “এত বড় দুর্নীতি পশ্চিমবঙ্গ আগে দেখেনি।”

শুক্রবার বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের রায়ে এক ধাক্কায় শিক্ষক থেকে আপাতত পার্শ্বশিক্ষক হয়ে গিয়েছেন ৩৬ হাজার প্রাথমিক শিক্ষক। নতুন করে ইন্টারভিউ পাশ করলে তাঁরা চাকরি ফিরে পাবেন। না-হলে চাকরি খোয়াতে হবে। সেই রায়ের প্রতিবাদে পথে নামলেন সেই শিক্ষকদের একাংশ। প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অফিসে স্মারকলিপি জমা দেওয়ার আগে উন্নয়ন ভবনের সামনে জড়ো হয়েছিলেন হাজার খানেক শিক্ষক। তাঁদের বক্তব্য, তাঁরা অ্যাপ্টিটিউড টেস্ট দিয়ে নিয়মমাফিক চাকরি পেয়েছেন। এখন তাঁদের রুটিরুজি কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। অনেকেই চাকরি পেয়ে সংসার পেতেছেন, ঋণ নিয়েছেন। পার্শ্বশিক্ষকের হারে বেতন পেলে সংসার চলবে না। শিলিগুড়িতেও এক দল শিক্ষক পথে নেমে বিক্ষোভ দেখান। দক্ষিণ দিনাজপুরে প্রায় হাজার জনের চাকরি গিয়েছে। তাঁদের বক্তব্য, সব নিয়ম মেনেই ইন্টারভিউ হয়েছিল। অন্য কোথাও গোলমাল হলে নির্দোষদের চাকরি নিয়ে টানাটানি হবে কেন? এ ব্যাপারে তাঁরাও আদালতের দ্বারস্থ হবেন বলে জানিয়েছেন।

প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের কর্তারা অবশ্য নিয়োগ বাতিল হওয়া শিক্ষকদের পাশেই দাঁড়িয়েছেন। ‘বেনিয়মের জেরে নিয়োগ বাতিল’, হাই কোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে পর্ষদ সুপ্রিম কোর্টে যাবে সেই ইঙ্গিত শুক্রবারই দিয়েছেন সভাপতি গৌতম পাল। নিয়োগে অনিয়মের কথাও মানতে চাননি তিনি। মাত্র ১২০ জন মামলাকারীর জন্য পুরো ইন্টারভিউ কেন বাতিল হল সেই প্রশ্ন তুলেছেন পর্ষদের কর্তারা। এত দিন পরে বেনিয়মের কথা মনে পড়ল কেন সেই প্রশ্নও তুলেছেন পর্ষদের অনেকে। যদিও চাকরিপ্রার্থীদের বক্তব্য, পর্ষদ তো তালিকাই বের করেনি। মামলার জেরে ইন্টারভিউয়ের নম্বর প্রকাশ করতেই পর্ষদের কারচুপি ধরা পড়ে গিয়েছে। “এখন ফেঁসে গিয়ে পর্ষদ কর্তারা শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করছেন,” মন্তব্য এক চাকরিপ্রার্থীর।

নিয়োগ বাতিল নিয়ে পূর্ব মেদিনীপুরের এগরায় সিপিএমের আইনজীবী-সাংসদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের বক্তব্য, “শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করতে পরিকল্পিত ভাবে দুর্নীতি করা হয়েছে। শিক্ষকদের যাতে সমাজে সম্মান না-থাকে সেই চেষ্টা করা হয়েছে।” উত্তর দিনাজপুরে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, “৩৬ হাজার জনের পরিবার কী ভাবে চলবে? তৃণমূল পশ্চিমবঙ্গকে এমন জায়গায় নিয়ে যাচ্ছেযেখানে লোকে রাস্তায় নেমে মারামারি করবে।”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy