আক্রান্ত: আর্সেনিক থাবা বসিয়েছে নীলরতনের শরীরেও। নিজস্ব চিত্র
গায়ে, হাতের তালুতে কালো ছোপ, চুলকানি, পেটের— এ সবে ভুগছিলেন পরিবারের সকলে। চিকিৎসকের কাছে গিয়ে প্রথম দিকে রোগের কারণ বোঝা যাচ্ছিল না। পরে মূত্র পরীক্ষায় ধরা পড়ে, আর্সেনিক বাসা বেঁধেছে শরীরে।
কী ভাবে তাঁদের শরীরে আর্সেনিক-বিষ ঢুকল, ভেবে পাচ্ছিলেন না ভাঙড় ১ ব্লকের প্রাণগঞ্জ পঞ্চায়েতের দক্ষিণ কালিকাপুর বাসিন্দা নীলরতন নস্কর। তাঁর পরিবারে চারজনেরই শরীরে ছড়িয়েছে আর্সেনিকের বিষ।
প্রশাসনের কাছে খবর পৌঁছয়। নীলরতনের বাড়ির উঠোনে বসানো নলকূপের জল পরীক্ষা করে দেখা যায়, তাতে আর্সেনিকের মাত্রা খুবই বেশি। নীলরতন বলেন, ‘‘বাড়ির একমাত্র নলকূপটি প্রশাসন সিল করে দিয়েছে। পরিবর্ত কোনও নলকূপের ব্যবস্থা নেই। বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে সরকারি একটি নলকূপ আছে। তবে সেটিও এখন ব্যবহারের অযোগ্য।’’
আর্সেনিকের বিষ ছড়াচ্ছে শরীরে
ভাঙড় ১ ৪০০টি নলকূপের জলের মধ্যে আর্সেনিক রয়েছে ৪%
ভাঙড় ২ ৪৫০টি নলকূপের জলের মধ্যে আর্সেনিক রয়েছে ৫%
তথ্য: বেসরকারি সংস্থা
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা
• বড়ালি তাঁতিপাড়া • মরিচা লেবুতলা • মাধবপুর
•কাশীনাথপুরের দাসপাড়া
• মোল্লাপাড়া • ভোগালি ২ অঞ্চলের পাঁচগাছিয়া • উত্তর কাঁঠালিয়া • বেঁওতার হাতিশালা মণ্ডলপাড়া
ভাঙড়ের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে আর্সেনিকে আক্রান্ত বেশ কিছু পরিবার। ভাঙড় ২ ব্লকের ভোগালি ১ পঞ্চায়েতের নাংলা গ্রামের বাসিন্দা জলধর মণ্ডলের শরীরে গত বছর আর্সেনিকের জীবাণু ধরা পড়ে। ভাঙড় ১ ও ২ ব্লকের বড়ালি তাঁতিপাড়া, মরিচা লেবুতলা, মাধবপুর, কাশীনাথপুরের দাসপাড়া, মোল্লাপাড়া, ভোগালি ২ অঞ্চলের পাঁচগাছিয়া, উত্তর কাঁঠালিয়া, বেঁওতার হাতিশালা মণ্ডলপাড়া-সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় পানীয় জলে আর্সেনিক রয়েছে। ০.০১, ০.০৭, ০.০১৪ মিলিগ্রাম মাত্রায় আর্সেনিক রয়েছে নলকূপের জলে।
ভাঙড়ের একটি সংস্থা দীর্ঘ দিন ধরে জেলা তথা রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় পানীয় জলে আর্সেনিকের মাত্রা পরীক্ষার কাজ করে আসছে। চলতি বছরে তাদের একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ভাঙড় ১ ব্লকের বিভিন্ন এলাকার প্রায় ৪০০টি নলকূপের ৪ শতাংশের জলে আর্সেনিক রয়েছে। ভাঙড় ২ ব্লক এলাকার প্রায় ৪৫০টি নলকূপের জল পরীক্ষা করে তারা। তার মধ্যে ৫ শতাংশ নলকূপের জলে আর্সেনিকের প্রভাব দেখা গিয়েছে।
ভাঙড়ের বিভিন্ন এলাকার মানুষ বাড়ি থেকে দূরের আর্সেনিকমুক্ত নলকূপ থেকে পানীয় জল সংগ্রহ করছেন। অধিকাংশ এলাকায় সরকারি ভাবে আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জলের ব্যবস্থা না থাকায় অনেকেই কেনা জল খাচ্ছেন। বেঁওতাওয়ারি গ্রামের আসাদুর জামান বলেন, ‘‘গ্রামে জলে আর্সেনিকের প্রভাব রয়েছে। তাই পানীয় জলের জন্য ২০ লিটারের জলের জার কিনি। আর্সেনিকমুক্ত নলকূপ থেকে জল এনে গৃহস্থালির কাজে লাগানো হয়।’’
গ্রামে বসেছে আর্সেনিক মুক্ত নলকূপ। নিজস্ব চিত্র
অভিযোগ, সরকারি ভাবে যে সব নলকূপ বসানো হয়েছে, সেগুলির জলের আর্সেনিক-পরীক্ষা ঠিকমতো হয় না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়, সাড়ে ৩০০-৭০০ ফুটের নলকূপের জলে আর্সেনিকের প্রভাব রয়েছে। সরকারি ভাবে গভীর নলকূপ বসানোর কথা বলা হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্থানীয় নেতারা নিজেদের ইচ্ছে মতো একটি গভীর নলকূপের বদলে দু’টি অগভীর নলকূপ বসিয়ে দিচ্ছেন।
ব্লক প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত এলাকায় যে সব সরকারি নলকূপ বসানো হয় তার জলের আর্সেনিক পরীক্ষার জন্য পঞ্চায়েত থেকেই একজন কর্মী ঠিক করে দেওয়া থাকে। তাঁর কাজ পরীক্ষার জন্য জলের নমুনা ভাঙড়ের ওই সংস্থায় নিয়ে যাওয়া।’’
স্থানীয় সূত্রে জানা গেল, জলের নমুনা পরীক্ষা করতে নিয়ে যাওয়ার জন্য ওই কর্মীকে ১৫০ টাকা করে দেওয়া হয় বলে জানা গিয়েছে। কারা জলের নমুনা নিয়ে যাবেন, তা ঠিক করতে না পারায় অনেক পঞ্চায়েতই জলের আর্সেনিক পরীক্ষা ঠিকমতো করায় না বলে অভিযোগ। অনেক পঞ্চায়েত প্রধানই আবার নিজের পছন্দের লোককে দিয়ে ওই কাজ করাতে চায়। সে ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হয়।
ভাঙড়ের ওই সংস্থার কর্ণধার এমএ ওয়াহাব বলেন, ‘‘বিভিন্ন ক্ষেত্রে জল পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, ভাঙড়ের বিভিন্ন এলাকার জলে আর্সেনিকের প্রভাব রয়েছে। প্রশাসনের উদ্যোগ না থাকায় অনেকে নিজেদের অজান্তেই আর্সেনিকযুক্ত পানীয় জল ব্যবহার করছেন। প্রশাসনের উচিত অবিলম্বে সরকারি ভাবে আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জলের ব্যবস্থা করা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy