—প্রতীকী ছবি।
গ্রামে ঢুকতে রাস্তা থেকে এক রকম টানতে টানতেই এক কোণে নিয়ে গেলেন নাসিমা বিবি। গোপন কথা বলার মতো করে বললেন, ‘‘তিন তিন বার দুয়ারে সরকারে লক্ষ্মীর ভান্ডারের আবেদন জমা দিয়েছি। আজও মেলেনি। প্রধানের পাড়ায় যান, দেখবেন, যাঁদের পাকা বাড়ি রয়েছে, ঘর তৈরিতে টাকা পেয়েছেন তাঁরাও। দিদি দেখছেন কোথায়!”
তালিকা লম্বা। নুরাঙ্গেদ বিবির ৬০ পেরিয়েছে। দু’বার বার্ধক্য ভাতার জন্য আবেদন করেও পাননি। তবে স্বামী মোক্তার হোসেন ভাতাটা পান বলে রক্ষে। আবিদা সুলতানা, পবিতা রবিদাস, তাসলেমা বিবি, ফরিদা বিবিরা লক্ষ্মীর ভান্ডারের দাবিদার। তাঁদের আবেদনও মঞ্জুর হয়নি এখনও।
তা হলে, কাঁচা বাড়ির পাশে পাশে পাকা বাড়িগুলো কাদের? কামালুদ্দিন শেখ হেসে বলছেন, ‘‘সব ভিন্ জেলার টাকায় তৈরি।’’ মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘির বিপ্রকালী গ্রামে ঘরে ঘরে পরিযায়ী শ্রমিক। তাঁরাই গ্রামের ভোল বদলেছেন। কামালুদ্দিনের মতো অনেকে কিন্তু আবাস যোজনার তিন কিস্তির টাকা পেয়ে গিয়েছেন। কাটমানিও দিতে হয়নি। কিন্তু সে টাকায় পুরো ঘর উঠছে না। বর্ষায় ভরসা সেই টিনের চালের পুরনো বাড়ি। আবার, মহাতাব শেখ গ্রামের মুখেই একটি বাড়িতে বসে যত্ন করে বাঁশের ঝুরি বানাচ্ছিলেন। এই দিয়েই সংসার চলে। তাঁর স্ত্রী মিনা বিবির গলায় হতাশা, ‘‘আমরা আজন্ম কংগ্রেসকে ভোট দিয়েছি। লক্ষ্মীর ভান্ডার জোটেনি, জোটেনি আবাস প্রকল্পের টাকাও।’’ নাসিমা বিবি বলছেন, ‘‘প্রধান যে তৃণমূলের গো। তাই লক্ষ্মীর ভান্ডার জোটেনি।”
তাই ক্ষোভ রয়েছে এবং তা প্রকাশে অকপট গ্রামের মানুষ। এই ক্ষোভের আঁচেই সাগরদিঘিতে বিধানসভা উপনির্বাচনে বন্যেশ্বর অঞ্চলে প্রায় ৩ হাজার ভোটে পিছিয়েছিল শাসকদল। বন্যেশ্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান এনামুল হককে এ বার টিকিট দেয়নি তাঁর দল। এনামুল বলছেন, “১৫০ জনকে আবাস প্রকল্পে ঘর দেওয়া গিয়েছে। এখনও বাকি রয়েছে ১৮০টি পরিবার।’’ গ্রামে জলের অভাব যথেষ্ট। রিনা বিবি হাতে মুদির সওদা নিয়ে যেতে যেতে বলে যান, “দেড় বছর ধরে লক্ষ্মীর ভান্ডার পাচ্ছি। মাঝে তিন মাস বন্ধ ছিল। অভাব একটাই, পানীয় জলের।” এনামুল বলছেন, ‘‘জলের অভাব মেটাতে একটি পাম্প বসানো গেলেও, অন্যটির জমি মেলেনি। তবে ভোটের পরেই দু’টি সাবমার্সিবল পাম্প বসানোর টেন্ডার ডাকা হয়েছে। যারা আসবে তারা করবে।”
হাজার তিনেক বাসিন্দার গ্রামের ৯৭ শতাংশই সংখ্যালঘু। বাদশাহী সড়ক থেকে গ্রামে ঢুকতে দেড় কিলোমিটার রাস্তায় প্রায় ৪০ বছর আগে মোরাম পড়েছিল। সেই রাস্তায় বছর কুড়ি চলার পরে সংস্কারের অভাবে গজিয়ে ওঠে বুনো গাছের জঙ্গল। চলাফেরা বন্ধ হয়ে যায়। আর কেউ তা নিয়ে মাথা ঘামায়নি। সেই থেকে জমির আলপথই ছিল ভরসা। সেই জঙ্গল সাফ করেই মাসখানেক ধরে তৈরি হচ্ছে পিচের দেড় কিলোমিটার পাকা রাস্তা। সেখান থেকে গ্রামে ঢুকেছে ঢালাই রাস্তা। বর্ষায় সেই রাস্তায় অবশ্য কাদার মোটা আস্তরণে ঢাকা পড়েছে ঢালাই।
সেই রাস্তায় দাঁড়িয়ে সত্তরোর্ধ মুসলেম আলি মণ্ডল হাত মুঠি করে বলেন, ‘‘লড়াই হবে, জোর লড়াই।’’ তাঁর ছেলে এ বার বিপ্রকালীর কংগ্রেসের প্রার্থী। বহু দিনের কংগ্রেস কর্মী মুসলেম ৭টি পুকুর লিজ় নিয়েছেন। তাঁর কাছ থেকে বেরিয়ে একটু যেতেই গ্রামের রাস্তায় রুখে দাঁড়ালেন তৃণমূল প্রার্থী আবুল কাশেম মণ্ডল ও তাঁর দলবল। তাঁদেরও মুঠি শক্ত। অচেনা লোক দেখে সোজাসুজি প্রশ্ন, ‘‘কে আপনি? কী করতে এসেছেন গ্রামে? কেন বাড়ি বাড়ি ঘুরছেন?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy