ডেঙ্গি নিয়ে সমস্যায় পড়লে প্রয়োজনে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী হেল্পলাইন নম্বরে ফোন করতে পরামর্শ স্বরাষ্ট্রসচিবের। ফাইল চিত্র।
ডেঙ্গি নিয়ে রাজ্য প্রশাসনের সর্তকতা চোখে পড়ল ছুটির দিনেও। রবিবার সকালে জেলাশাসকদের সঙ্গে স্বরাষ্ট্রসচিব বিপি গোপালিকা ও স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগমের দীর্ঘ ভার্চূয়াল বৈঠকের পর একটি নির্দেশিকা প্রকাশিত হয়েছে নবান্ন থেকে। সঙ্গে রাজ্য প্রশাসনের দুই শীর্ষ আমলা সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখিও হন। সাংবাদিক বৈঠকেই স্বরাষ্ট্রসচিব ডেঙ্গি হলে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার কথা বলেন। সঙ্গে জানান, পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য রাজ্য প্রশাসন সব রকম পদক্ষেপ করেছে। তবে ডেঙ্গি নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগলে ‘সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী’ হেল্পলাইনেও ফোন করতে পারেন। সেখানে অভিযোগ জানালে প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।
স্বরাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘‘ডেঙ্গি হলে সরকারি হাসপাতালে যান। আর যদি দেখেন, খুবই এমার্জেন্সি, কী করবেন ঠিক করে উঠতে পারছেন না, তা হলে 'সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী' পরিষেবায় ফোন করে সমস্যার কথা জানান। আপনারা অভিযোগ জানালেই পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘এখন দেড় হাজার ডেঙ্গি আক্রান্ত সরকারি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। ২৫-৩০ জনের অবস্থা খুবই সঙ্কটজনক। তবে মৃত্যু নিয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু জানাতে পারব না। কারণ, খুব বেশি মৃত্যু হয়নি।’’
পরামর্শ হিসাবে স্বরাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘‘এখন অনেকের ভাইরাল জ্বর হচ্ছে। তাই জ্বর হলেই পরীক্ষা করান। আর ডেঙ্গি হলে হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘ডেঙ্গি আমাদের নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে, সীমান্তবর্তী এলাকাগুলিতে সচেতনতা বাড়াতেই সতর্কতামূলক প্রচার করা হচ্ছে। কোনও সমস্যার কথা জানলেই পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’’ এই সময় রক্তের সঙ্কট দেখা দিলে প্রশাসন কী করবে, তা-ও জানিয়েছেন গোপালিকা। তিনি বলেছেন, ‘‘রক্তের সঙ্কট নিয়ে ব্লাড ব্যাঙ্কগুলির সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। সরকারি হাসপাতালে তারা পর্যাপ্ত পরিমাণে রক্ত দিতে পারবে। সরকারি হাসপাতালে আমরা রক্ত সরবরাহ করতে পারব। তাই, এ বিষয়ে ভাবনার কিছু নেই।’’
প্রসঙ্গত, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বর্তমানে স্পেন সফরে রয়েছেন, তাঁর সঙ্গেই রয়েছেন রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী। প্রশাসনিক দায়িত্বে রয়েছেন স্বরাষ্ট্রসচিব। সেই ক্ষমতাবলেই ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করছেন তিনি। নবান্ন সূত্রে খবর, জেলার প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে হুগলি, নদিয়া, হাওড়া, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, মালদহ ও মুর্শিদাবাদে ডেঙ্গি-ম্যালিরিয়ার প্রকোপ রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বৈঠকে এই জেলাগুলির প্রতি বিশেষ নজরদারি চালাতে বলেছেন স্বরাষ্ট্রসচিব। ডেঙ্গি ও ম্যালেরিয়ার মোকাবিলার জন্য প্রত্যেক জেলায় গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে জেলা প্রশাসনকেই। আর পুরসভা এলাকায় ওয়ার্ড কমিটিগুলিকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। সেই দায়িত্বও জেলাপ্রশাসনকেই দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণ থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যব্যবস্থা— সবেতেই সজাগ দৃষ্টি রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জেলাশাসকদের।
পঞ্চায়েত বা পুরসভা এলাকার কোথাও যাতে জল দীর্ঘ দিন জমে না থাকে বা সেখানে ডেঙ্গি ও ম্যালিরিয়ার মশা জন্মাতে না পারে, সে দিকেও স্থানীয় প্রশাসনকে দায়িত্ব নিয়ে নজরদারি করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি, বিভিন্ন এলাকায় ড্রোন দিয়ে সার্ভে করে নজরদারি চালাতে বলা হয়েছে। সেই পরিকাঠামো তৈরি না থাকলে দ্রুততার সঙ্গে সেই আয়োজন করে দিতে হবে জেলাশাসকদের। কোথাও ফাঁকা জমি পড়ে থাকলে তাতে নজরদারি চালিয়ে তা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে স্থানীয় প্রশাসনকেই। কোনও পুকুরে নোংরা বা কচুরিপানা জমতে দেওয়া যাবে না। যাবতীয় কাজকর্মের রিপোর্ট যথাসময়ে নবান্নকে পাঠাতে বলা হয়েছে।
অন্য দিকে, রবিবার সাংবাদিক বৈঠকে স্বরাষ্ট্রসচিব জানিয়েছেন, 'দুয়ারে সরকার'-এ অংশগ্রহণ করেছেন মোট ৮০ লক্ষ ৮৪ হাজার মানুষ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানুষ অংশগ্রহণ করেছেন মুর্শিদাবাদ, নদিয়া, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা থেকে। সাতটি প্রকল্পে সবচেয়ে বেশি আবেদন জমা পড়েছে। সামাজিক সুরক্ষা যোজনা, ঐক্যশ্রী, পরিযায়ী শ্রমিকদের রেজিস্ট্রেশন প্রকল্পে বেশি মানুষের অংশগ্রহণ লক্ষ করেছে নবান্ন। ১২ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক এই খাতে নাম নথিভুক্ত করিয়েছেন। লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পে ৬ লক্ষ ২৮ হাজার মানুষ আবেদন জানিয়েছেন। 'দুয়ারে সরকার'-এর শিবির শেষ হয়ে গেলেও, তাকে ঘিরে প্রশাসনিক কাজকর্ম চলবে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy