কুণাল ঘোষ এবং তাঁর এক্স হ্যান্ডলে সেই পোস্ট। ছবি: আনন্দবাজার আর্কাইভ থেকে।
তিনি গ্রেফতার হয়েছিলেন সারদা মামলায়। তাঁকে গ্রেফতার করেছিল বিধাননগর কমিশনারেট অর্থাৎ রাজ্য সরকারের পুলিশ। সেই গ্রেফতারির ১০ বছর পূর্ণ হওয়ার দিনে বৃহস্পতিবার সকালে এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে আবেগঘন পোস্ট করলেন তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। তাঁর সেই পোস্ট নিয়ে শাসক শিবিরে জল্পনা এবং আলোচনা শুরু হয়েছে।
সেই পোস্টে যেমন তাঁর লড়াইয়ের কথা লিখেছেন কুণাল, তেমনই দিয়েছেন ভবিষ্যতের বার্তাও। যেখানে কুণাল স্পষ্ট বলেছেন, তাঁকে ‘চক্রান্তমূলক ভাবে’ গ্রেফতার করা হয়েছিল। লিখেছেন, ‘‘রাজ্য, কেন্দ্র দুই সরকারের এজেন্সির বিরুদ্ধেই লড়াই চলছে।’’ পাশাপাশিই জানিয়েছেন, তিনি আর কখনওই সাংসদ বা বিধায়ক হবেন না। দলের তরফে কোনও জনপ্রতিনিধিই হবেন না। শুধু সাংগঠনিক কাজে থাকবেন। কুণালের বক্তব্য, ‘‘আমি তৃণমূল কংগ্রেস করছি এটা প্রমাণ করতে যে, মন থেকেই দলটা করে এসেছি। আমি এক জন সৈনিক এবং কুণাল ঘোষ বেইমান নয়। আমি দলের এমপি, এমএলএ হব না। দলের তরফে জনপ্রতিনিধি হব না। যত দিন ইচ্ছে থাকবে, সসম্মানে দলের সাংগঠনিক কাজ করব। তার পরে জীবন যে ভাবে বলবে, সেই ভাবে চলব। গ্রেফতারের দিনগুলো এবং আমার ঘাড়ে কলঙ্ক চাপানোর পর্ব ভুলিনি, ভুলব না।’’
বৃহস্পতিবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে লোকসভা নির্বাচনের লক্ষ্যে সাংগঠনিক বৈঠক ডেকেছেন তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কয়েক মাস আগেই রাজ্য তৃণমূলের তরফে কুণালকে দলের তমলুক সাংগঠনিক জেলার সংগঠন দেখার ভার দেওয়া হয়েছিল। সেই থেকে হলদিয়া, নন্দীগ্রাম, খেজুরি ইত্যাদি জায়গায় কুণাল যাতায়াত বাড়িয়েছেন। এমনকি, হলদিয়ায় একটি অস্থায়ী বাসস্থানও নিয়েছেন তিনি। তখন থেকেই গুঞ্জন যে, শুভেন্দু অধিকারীর ‘খাসতালুক’ বলে পরিচিতি তমলুক লোকসভা আসনে কুণালকে প্রার্থী করতে পারে তৃণমূল। কিন্তু গ্রেফতারির ১০ বছর পূর্তিতে সেই জল্পনায় কার্যত জল ঢেলে দিয়ে কুণাল প্রকাশ্যেই ঘোষণা করে দিলেন, তিনি দলের তরফে জনপ্রতিনিধি হবেন না। তবে এ-ও ঠিক যে, রাজনীতিতে ‘চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত’ বলে কিছু হয় না। কুণালকে নিয়ে দলের অন্দরে জল্পনা রয়েছে মানিকতলা বিধানসভা কেন্দ্রটি নিয়েও। সাধন পাণ্ডের প্রয়াণে ওই আসনটি খালি হয়েছিল। সেখানে এখনও ভোট হয়নি। লোকসভার সঙ্গে সেখানেও নির্বাচন কমিশন ভোট করায় কি না, তা যেমন দেখার, তেমনই এ-ও দেখার যে, ভোট হলে মানিকতলা আসনে তৃণমূল কাকে প্রার্থী করে। বস্তুত, কুণালের নাম নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছিল গত রাজ্যসভা ভোটের সময়েও। তবে কুণালের বৃহস্পতির পোস্টে সে সমস্ত জল্পনার উপরেই দাঁড়ি পড়ল বলে অনেকের অভিমত।
প্রসঙ্গত, কুণাল যখন গ্রেফতার হন, তখন তিনি ছিলেন রাজ্যসভায় তৃণমূল সাংসদ। তখন বিধাননগর কমিশনারেটের কমিশনার ছিলেন পুলিশকর্তা রাজীব কুমার। গোয়েন্দাপ্রধান ছিলেন অর্ণব ঘোষ। গ্রেফতারের আগে কুণাল কান্নায় ভেঙে-পড়ে সাংবাদিক বৈঠক করেছিলেন। তার পরে কুণালের সাড়ে তিন বছর হাজতবাস, জামিন পাওয়া এবং তার পর ধীরে ধীরে ফের রাজনীতিতে সামনে আসার ঘটনায় অনেকেই তাঁকে ‘কামব্যাক ঘোষ’ বলে অভিহিত করেন। এক্স পোস্টে বৃহস্পতিবারের তারিখটি (২৩.১১.২৩) উল্লেখ করে কুণাল লিখেছেন, ‘‘ঠিক দশ বছর আগে আজকের তারিখে বিনা দোষে চক্রান্তমূলক ভাবে আমাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। অনেকে ভেবেছিল আমি ধ্বংস হয়ে যাব। ঈশ্বরের আশীর্বাদে এখনও আছি। মিথ্যা সাক্ষী, মিথ্যা মামলায় জর্জরিত থেকেও আইনে লড়ছি। জীবনযুদ্ধে লড়ছি। সাংবাদিকতা, লেখালিখি, রাজনীতিতে আছি, লড়াই করছি। রাজ্য, কেন্দ্র দুই সরকারের এজেন্সির বিরুদ্ধেই লড়াই চলছে।’’
যে ভাবে কুণাল কেন্দ্রীয় এজেন্সির সঙ্গে রাজ্যের এজেন্সিরও উল্লেখ করেছেন, তা-ও অনেকে ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলে মনে করছেন। পাশাপাশিই কুণাল লিখেছেন, ‘‘আমার এবং আমার ঘনিষ্ঠদের সে দিনের চোখের জল, আর্তনাদ বৃথা যাবে না। সময় তা প্রমাণ করবে। ঈশ্বরের বিচার থেকে ষড়যন্ত্রীরা বাদ যাবে না।’’
প্রসঙ্গত, সারদা মামলার তদন্তেই কয়েক বছর আগে আইপিএস অফিসার তথা কলকাতা ও বিধাননগরের প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার রাজীবের সঙ্গে মুখোমুখি জেরায় বসানো হয়েছিল কুণালকে। সেটি হয়েছিল মেঘালয়ের শিলংয়ে। এখন অবশ্য রাজীব আর পুলিশি প্রশাসনে নেই। তিনি রাজ্য সরকারের আমলা হিসেবে কর্মরত। কুণালের এক্স পোস্টে নাম না-করে ‘মিথ্যা সাক্ষী’, ‘মিথ্যা মামলা’ ‘ষড়যন্ত্র’ ইত্যাদি শব্দের উল্লেখ নিয়েও তৃণমূলের অন্দরে আলোচনা এবং জল্পনা শুরু হয়েছে। এক্স হ্যান্ডলের পোস্টে কুণাল এ-ও স্পষ্ট করেছেন যে, তাঁকে যে ঝড়ঝাপটা পোহাতে হয়েছে, তা তিনি আমৃত্যু মনে রাখবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy