আলিপুর কোর্ট চত্বরে পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সোমবার। ছবি: সুমন বল্লভ।
নিয়োগ-দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতারির পরে মন্ত্রিত্ব গিয়েছে। সেই সঙ্গে সাসপেন্ড করেছে দল। আর এক জেলবন্দি নেতা অনুব্রত মণ্ডলের পাশে তৃণমূল এখনও পর্যন্ত যে ভাবে দাঁড়িয়েছে, তা-ও সে ভাবে দেখা যায়নি তাঁর ক্ষেত্রে। কিন্তু এই সমস্ত কিছুর পরেও সোমবার প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিলেন, দলের সঙ্গেই রয়েছেন তিনি।
সোমবার আলিপুর আদালতে তাঁর হাজিরার দিন ছিল। আদালতে ঢোকার মুখে সাংবাদিকরা নানা প্রশ্ন করলে, তাঁদের খানিকটা ধমকের সুরে ‘চুপ করুন’ বলে ওঠেন পার্থ। কিন্তু বেরনোর সময়ে ফের প্রশ্নের মুখে প্রথমে বলেন, “সবাই ভাল থাকুন।” তার পরেই বলেন, “আমি দলের সঙ্গে রয়েছি। সঙ্গেই থাকব।”
এ দিন আর এক মামলার শুনানিতে জামিনের জন্য কাতর আবেদন জানিয়েও জেল থেকে ছাড়া পাননি পার্থ। কিন্তু আলিপুর আদালতে তদন্তের গতি নিয়ে ফের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে সিবিআই-কে। সম্প্রতি অনুব্রতকে আসানসোল আদালতে তোলার পরে বিচারকের প্রশ্ন ছিল, কত দিন ধরে চলবে তদন্ত? এ দিন পার্থের ক্ষেত্রেও কার্যত সেই একই প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে সিবিআই-কে। জিজ্ঞাসা করা হয়েছে, তদন্ত কি অনির্দিষ্ট কাল চলবে? উত্তরে তদন্ত শেষ করতে অন্তত ৬ মাস সময় চেয়ে নিয়েছে তদন্তকারী সংস্থাটি ।
এ দিন এসএসসি-র গ্রুপ-সি এবং নবম-দশম শ্রেণির নিয়োগ মামলায় পার্থ-সহ অভিযুক্তদের ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত ফের জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন আলিপুরে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক।
এ দিন দু’টি মামলায় পার্থ, এসএসসি-র প্রাক্তন উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিংহ, মধ্যশিক্ষা পর্ষদের অপসারিত সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়, এসএসসি-র চেয়ারম্যান তথা উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুবীরেশ ভট্টাচার্য, এসএসসি-র প্রাক্তন সচিব অশোক সাহা, প্রসন্ন রায়, প্রদীপ সিংহদের আদালতে পেশ করা হয়। তখনই বিশেষ আদালতের বিচারক শেখ কালাউদ্দিন সিবিআইয়ের তদন্তকারী অফিসার মলয় দাসের কাছে জানতে চান, তদন্ত শেষ করতে কত দিন সময় লাগতে পারে? অফিসার বলেন, ‘‘বড় ষড়যন্ত্র। প্রচুর জন জড়িত। গ্রুপ-সি মামলায় ৩৫০ জনের বিরুদ্ধে বেআইনি নিয়োগের অভিযোগ জমা পড়েছিল কলকাতা হাই কোর্টে। তাঁদের মধ্যে এখনও ১০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা গিয়েছে। প্রায় প্রতিদিন নতুন তথ্য উঠে আসছে। যাচাইয়ে সময় লাগছে।’’ সিবিআইয়ের আইনজীবীও বলেন, ‘‘তদন্ত-জাল বহু দূর বিস্তৃত।’’
বিচারকের প্রশ্ন, গ্রুপ-সি মামলায় প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ এবং সরকারি দফতরের একাধিক প্রাক্তন ও বর্তমান আধিকারিকের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করার সময়ে রাজ্য সরকারের অনুমতি নেওয়া হয়েছিল? তদন্তকারী অফিসার জানান, অনুমতির জন্য আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু জবাব পাওয়া যায়নি।
সিবিআইয়ের আইনজীবী আদালতে বলেন, ‘‘গ্রুপ-সি মামলার এফআইআরে এসএসসি-র প্রাক্তন চেয়ারম্যান সৌমিত্র সরকার দুর্নীতিতে জড়িত রয়েছেন বলে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। কিন্তু তদন্তে দেখা যায়, সৌমিত্র দুর্নীতিতে শামিল হতে চাননি বলে পার্থ প্রাক্তন উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদের মাধ্যমে জোর করে তাঁকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেছিলেন। সেই কারণে সৌমিত্রকে গ্রেফতার করা হয়নি। স্বচ্ছতা বজায় রেখে তদন্ত করা হচ্ছে। সেই কারণে প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হচ্ছে।’’
উল্টো দিকে পার্থের আইনজীবী সেলিম রহমান বলেন, ‘‘হাই কোর্টের তদন্তের নির্দেশের অপব্যবহার করছে সিবিআই। চার্জশিট জমা দেওয়ার পরেও তদন্তে অসহযোগিতার অভিযোগ তুলে জেলে আটকে রাখছে।’’ শান্তিপ্রসাদের আইনজীবী সঞ্জয় দাশগুপ্তের অভিযোগ, ‘‘শান্তিপ্রসাদের সঙ্গে নিয়োগ-দুর্নীতির কোনও যোগ নেই। বেআইনি ভাবে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’’ আইনজীবী তমাল মুখোপাধ্যায় যে কোনও শর্তে সুবীরেশের জামিনের আবেদন করেন। প্রসন্নের আইনজীবী অনির্বাণ গুহ ঠাকুরতা বলেন, ‘‘নিয়োগ-দুর্নীতিতে প্রসন্নের যোগ নেই।’’ বাকি অভিযুক্তদের আইনজীবীরাও জামিনের আবেদন করেন। এ দিন আদালতে সুবীরেশের মেয়ে ও স্ত্রী এসেছিলেন। কিছুক্ষণ স্ত্রী ও মেয়ের সঙ্গে কথা বলার পরে সুবীরেশকে কাঁদতে দেখা যায়।
এ দিনই আবার বিচার ভবনে ইডি-র মামলার শুনানিতে পার্থকে সশরীরে হাজির করানোর কথা ছিল। কথা ছিল, আলিপুর থেকে ব্যাঙ্কশালে বিচার ভবনে নিয়ে যাওয়ার। কিন্তু পরে ঠিক হয়, আলিপুর থেকেই ভার্চুয়াল শুনানিতে হাজির করা হবে পার্থকে। আলিপুরের বিশেষ আদালতে সিবিআইয়ের দু’টি মামলার শুনানি চলাকালীন তাই বিচারকের অনুমতি নিয়ে দুপুর আড়াইটে নাগাদ বিচার ভবনেই আদালতের একটি কক্ষ থেকে ইডি-র মামলার ভার্চুয়াল শুনানিতে অংশ নেন পার্থ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy