Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

নিচু পদই সই, প্রার্থী মেধাবীরা, বাছাই তালিকার তথ্য ঘিরে বিতর্ক

আগে যাঁরা ছিলেন ‘ওয়ার্ড মাস্টার’, সরকারি হাসপাতালে তাঁরাই এখন ‘ফেসিলিটি ম্যানেজার’ হিসেবে পরিচিত।

নবান্ন।

নবান্ন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৪:০৮
Share: Save:

সরকারি হাসপাতালের ‘ফেসিলিটি ম্যানেজার’ পদে ৮১৯ জনকে নিয়োগ করতে চেয়ে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল ওয়েস্ট বেঙ্গল হেল্‌থ রিক্রুটমেন্ট বোর্ড। ন্যূনতম যোগ্যতা, স্নাতক। তার জেরে জমা পড়ল সাড়ে তিন লক্ষ আবেদনপত্র। দেখা গেল, চাকরি পেতে মরিয়া বি-টেক, মেকানিক্যাল, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারের ডিগ্রিধারীরা! যাঁরা উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক স্তরে ৮০-৯০ শতাংশ নম্বর পেয়েছেন।

আগে যাঁরা ছিলেন ‘ওয়ার্ড মাস্টার’, সরকারি হাসপাতালে তাঁরাই এখন ‘ফেসিলিটি ম্যানেজার’ হিসেবে পরিচিত। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই পদে নিযুক্ত হলে এন্ট্রি পে হিসেবে ৭,৪৪০ টাকা এবং গ্রেড পে হিসেবে ৩,৬০০ টাকা পাওয়া যাবে। স্বাস্থ্য ভবন সূত্রের মতে, চাকরি শুরুর সময় সব মিলিয়ে হাতে আসবে প্রায় ২৫ হাজার টাকা।

এমন চাকরির জন্য উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাতকে কৃতী ছাত্রছাত্রীদের আবেদনের বহর দেখে তাজ্জব বনে গিয়েছেন স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকেরা। সম্প্রতি চাকরি প্রার্থীদের যে প্রাথমিক বাছাই তালিকা প্রকাশ করেছে রিক্রুটমেন্ট বোর্ড, তার নব্বই শতাংশ জুড়েই রয়েছেন ইঞ্জিনিয়ার ও বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ে মেধাবী ছাত্রছাত্রীরা।

স্বাস্থ্য ভবনের এক আধিকারিক জানান, প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ প্রার্থীর অনলাইন আবেদন যাচাই করে ১৬ হাজার জনকে নথি যাচাইয়ের জন্য ডাকা হয়েছে। মঙ্গলবার রিক্রুটমেন্ট বোর্ডের ওয়েবসাইটে সেই তালিকা প্রকাশ করা হয়। প্রকাশিত তালিকায় অধিকাংশ প্রার্থী উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক স্তরে বিপুল নম্বর পেয়েছেন দেখে জল্পনা শুরু হয়ে যায়। দুর্নীতির অভিযোগ তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্টের ঢল নামে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, তালিকায় গলদ আছে ভেবে তৃণমূলের এক চিকিৎসক নেতাও স্বাস্থ্য ভবনে ফোন করেন।

ফেসিলিটি ম্যানেজার পদে নিয়োগের জন্য বাছাই তালিকার একাংশ।

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে বলা হচ্ছে, যে হেতু অনলাইন আবেদনে তৎক্ষণাৎ নথি যাচাইয়ের সুযোগ নেই, সে হেতু কেউ কেউ শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পর্কে ভুল তথ্য দিয়ে থাকতে পারেন। কিছু ক্ষেত্রে খালি চোখে দেখে তা বোঝাও যাচ্ছে। যেমন, সানি লিওনি নামে আবেদনকারী রয়েছেন। আবার এক জন প্রার্থীর নাম হ্যালো মার্ডি এবং বাবার নাম হাই মার্ডি। এক আধিকারিক বলেন, ‘‘কেউ ভুল তথ্য দিলে, তা নথি যাচাইয়ের সময় ধরা পড়বে। সে ক্ষেত্রে আবেদন যে বাতিল হয়ে যাবে, তা বিজ্ঞাপনে উল্লেখ রয়েছে।’’

কিন্তু সব মিলিয়ে এই সংখ্যাটা খুব বেশি হবে না বলেই মনে করছেন স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘ওয়ার্ড মাস্টার পদের জন্য বিজ্ঞানের বিষয়ে স্নাতক বা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মেধাবী ছাত্রেরা যে আবেদন করবেন, তা অনেকে ভাবতে পারেননি।’’ উচ্চ মাধ্যমিকে ৯৯% নম্বর পেয়েছেন এমন প্রার্থীর সংখ্যাও কম নয়।

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, বাছাই তালিকায় বিজ্ঞান বিভাগে স্নাতক এবং ইঞ্জিনিয়ার মিলিয়ে আবেদনকারী অন্তত ১২ হাজার। তার মধ্যে বি-টেক, এম টেক, সিভিল ইঞ্জিনিয়ার রয়েছেন প্রায় ন’হাজার। ১৬ হাজার প্রার্থীর নথি যাচাইয়ের পরে পাঁচ হাজার প্রার্থীকে লিখিত পরীক্ষার জন্য ডাকা হবে।

ওয়েস্ট বেঙ্গল হেল্থ রিক্রুটমেন্ট বোর্ডের চেয়ারম্যান তাপস মণ্ডল বলেন, ‘‘বাছাই তালিকায় আবেদনকারীদের মধ্যে বি-টেক, মেকানিক্যাল, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারের পাশাপাশি বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ের ছাত্রছাত্রীই বেশি। ফেসিলিটি ম্যানেজার উচ্চশিক্ষিতদের চাকরি নয়। কিন্তু দেখা যাবে যাঁরা চাকরি পাবেন, তাঁরা সকলে মেধাবী।’’ যদিও অর্থনীতিবিদ অভিরূপ সরকারের মতে, ‘‘এখন অসংখ্য বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ। সেখানে ভাল-খারাপের তফাত হচ্ছে না। তা ছাড়া, সরকারি চাকরির প্রতি ঝোঁক আগেও ছিল, এখনও রয়েছে। তবে নামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোনও মেধাবী ছাত্র এই তালিকায় রয়েছেন বিশ্বাস হচ্ছে না।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Recruitment Facility Manager Application
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy