Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
Higher Secondary

HS Topper: বিতর্ক চান না, তবে মুসলিম না বলে ছাত্রী বললেই খুশি হতেন, বললেন ‘প্রথম’ রুমানা

উচ্চ মাধ্যমিকের ফল ঘোষণা করতে গিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের প্রধান মহুয়া দাস বলেন, ‘‘একক ভাবে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছেন এক মুসলিম কন্যা।’’

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

পায়েল দাস
বহরমপুর শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০২১ ১২:৪৭
Share: Save:

উচ্চ মাধ্যমিকে রাজ্যে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছেন। তাঁকে নিয়ে উচ্ছ্বাস শুরু হয়েছে বৃহস্পতিবার থেকেই। কিন্তু পাশাপাশিই শুরু হয়েছে বিতর্ক। বিতর্ক এই নিয়ে যে, তাঁর ফলাফল নিয়ে বলতে গিয়ে ‘মুসলিম’ বলে পরিচয় দেওয়া কি যুক্তিযুক্ত হয়েছে। ছাত্রীর নাম রুমানা সুলতানা। শুক্রবার যিনি আনন্দবাজার অনলাইনকে বললেন, ‘‘মুসলিম না বললেই ভাল হত। একজন ছাত্রী বললেই বেশি ভাল হত। তবে আমি এটা নিয়ে কোনও বিতর্ক চাই না।’’ বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক না-করার জন্যও আবেদন জানিয়েছেন রুমানা।

বিতর্কের সূত্রপাত বৃহস্পতিবার দুপুরে। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করতে গিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের প্রধান মহুয়া দাস বলেছিলেন, ‘‘সর্বোচ্চ নম্বরের ভিত্তিতে একটা ইতিহাস সংসদে হয়েছে। সেটা একটু বলতে ইচ্ছে করছে। যিনি সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছেন একা।’’ এর পরেই মহুয়া বলেন, ‘‘একক ভাবে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছেন এক মুসলিম কন্যা। মুসলিম… মুর্শিদাবাদ জেলা থেকে একজন মুসলিম লেডি… গার্ল। তিনি একক ভাবে ৪৯৯ সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছেন।’’ সংসদের প্রধানকে প্রশ্ন করা হয়, তাঁর নামটি কি বলা যাবে। তিনি জবাবে বলেন, ‘‘ওয়েবসাইট দেখে নেবেন।’’

ওয়েবসাইটে গিয়ে রুমানার নাম দেখা যায়। তার পর থেকেই নেটমাধ্যম এবং রাজনৈতিক মহলে বিতর্ক শুরু হয়েছে। সহ-নাগরিকদের মধ্যে অনেকে অভিমত প্রকাশ করেছেন সংসদের প্রধানের পক্ষে। তাঁরা মনে করছেন, একজন মুসলিম মেয়ে এত ভাল ফল করেছেন, সেটা অবশ্যই বলা উচিত। কারণ, এখনও এ রাজ্যে মুসলিম মেয়ে এবং মহিলাদের অনেক বাধাবিপত্তির মধ্য দিয়ে যেতে হয়। জীবনের অন্যান্য অনেক বিষয়েও মতো শিক্ষার ক্ষেত্রেও। আবার অন্য পক্ষের বক্তব্য, কেন ভাল ফলাফলের জন্য কোনও কৃতী পড়ুয়ার জাত বা ধর্ম বলতে হবে! তা করলে কি সংশ্লিষ্ট পড়ুয়াকে আরও বিড়ম্বিত করা হয় না? যেন তিনি তাঁর ধর্ম বা জাতের নিরিখে পরীক্ষায় ভাল বা মন্দ ফল করেছেন!

মুর্শিদাবাদ জেলার কান্দি রাজা মনীন্দ্রচন্দ্র উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী রুমানা। বৃহস্পতিবার দিনভর শুভেচ্ছাবার্তা-সহ অন্যান্য ব্যস্ত ছিলেন তিনি। শুক্রবার সকালে বহরমপুরের জেলাশাসক দফতরের কালেক্টরেট রুমে রুমানাকে সংবর্ধনা দেন জেলাশাসক শরদ কুমার দ্বিবেদী। তার আগেই বহরমপুরে আনন্দবাজার অনলাইনকে রুমানা জানান, তাঁর ফলের কথা বলতে গিয়ে ‘মুসলিম’ শব্দটি না বললেই ভাল হত। একজন ‘ছাত্রী’ হিসেবে সম্বোধন করলেই তিনি বেশি খুশি হতেন। তবে এ নিয়ে আর বিতর্ক চাইছেন না রুমানা বা তাঁর পরিজনেরা।

রুমানার বাবা রবিউল আলম পেশায় স্কুলশিক্ষক। রবিউল মুর্শিদাবাদের ভরতপুর গয়েশাবাদ অচলা বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক। মা সুলতানা পারভিন শিক্ষিকা। তাঁরা এই বিতর্ক নিয়ে বিশেষ কোনও মন্তব্য করতে চাননি। প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালে রুমানা মাধ্যমিকে রাজ্যে পঞ্চম স্থান অধিকার করেছিলেন। উচ্চ মাধ্যমিকে ৫০০-র মধ্যে ১ নম্বর কম পেয়ে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছেন— ৪৯৯। বাবা-মায়ের থেকে শিক্ষালাভ করেই তাঁর এই সাফল্য বলে জানিয়েছেন রুমানা।

রুমনার হাতে পুরস্কার তুলে দিচ্ছেন জেলাশাসক। নিজস্ব চিত্র।

রুমনার হাতে পুরস্কার তুলে দিচ্ছেন জেলাশাসক। নিজস্ব চিত্র।

রুমানার মামা মহম্মদ নুরুল হক বলেন, ‘‘মুসলিম মেয়ে প্রথম হয়েছে বলে যাঁরা বারবার বলছেন, তাঁদের এত অবাক কেন হতে হচ্ছে? মুসলিম মেয়ে বলে কি কোনও অঘটন ঘটেছে? মেধা-বুদ্ধি-পরিশ্রমের সমণ্বয়ে প্রথম হতে হয়। আমরা গর্বিত যে, রুমানা আমাদের পরিবারের সন্তান। সে একজন ছাত্রী। একজন ছাত্রী প্রথম। লেদের থেকে এগিয়ে চলেছে মেয়েরা এটাই লক্ষণীয় এবং আনন্দের ব্যাপার। মুসলিম বলে সম্বোধন করা ঠিক হয়নি।’’ রুমানার স্কুলের এক শিক্ষিকার কথায়, ‘‘আমরা গর্বিত। আমাদের স্কুল রাজ্যে প্রথম হয়েছে। এটাই বড় পরিচয়। মুসলিম বা হিন্দু— কোনও ধর্ম নিয়ে পরিচয় হোক, এটা বাস্তবে ঠিক নয়। এই বিতর্কের এ বার অবসান হোক।’’

রুমানা নিজে বা তাঁর পরিজন অথবা শিক্ষিকারা না-চাইলেও বিতর্কের পেশ কিন্তু গড়িয়ে গিয়েছে রাজনীতির আঙিনায়। শুক্রবার সকালেই বিষয়টিকে ‘মুসলিম তোষণ’ আখ্যা দিয়ে টুইট করেছেন বিজেপি নেতা অমিত মালব্য। যিনি ঘটনাচক্রে, পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি-র সহ-পর্যবেক্ষক। তিনি লেখেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাংলায় তোষণের রাজনীতি নতুন মাত্রা পেল যখন উচ্চ মাধ্যমিকের ফল প্রকাশের সময় সর্বোচ্চ নম্বরপ্রাপ্ত মেয়েটির ধর্মপরিচয় উল্লেখ করলেন উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভানেত্রী।’ পক্ষান্তরে, বহরমপুরের সাংসদ তথা লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরীর বক্তব্য, ‘‘সংসদের সাংবাদিক বৈঠকে শ্রুতিকটূ লাগে যখন বলা হয়, প্রথম হয়েছে মুসলিম মেয়ে। ছাত্রীর নাম দেখে সে কোন ধর্মের, তা বোঝানোর দায়িত্ব কেউ না নিলে খুশি হব। ছাত্রদের থেকে ছাত্রীরা এগিয়ে চলেছে, এটা মনে রাখলেই খুশি হব।’’

এই প্রসঙ্গে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী টুইটারে লেখেন, ‘‘এক জন পড়ুয়া এক জন পড়ুয়াই। এই বিষয় নিয়ে রাজনীতি করার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Higher Secondary
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE