শুভাশিস মিত্র অবশ্য বলছেন ‘‘পরীক্ষা চলাকালীন পরীক্ষাকেন্দ্রের কাছে ৫০ মিটারের মধ্যে লোকজন থাকায় নিষেধ রয়েছে। কিন্তু এ নিয়ে অভিযোগ আসেনি।’’ কলকাতা-সহ সব জেলার পরীক্ষা কেন্দ্রে স্যানিটাইজ়ার, মাস্কের ব্যবস্থা ছিল। তবে পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ার অনেক স্কুলে বহু পরীক্ষার্থীর মাস্ক দেখা যায়নি।
শেষ মুহূর্তে ঝালিয়ে নেওয়া। উচ্চ মাধ্যমিক শুরুর আগে শহরের একটি পরীক্ষা কেন্দ্রের বাইরে। ছবি: সুমন বল্লভ
মাধ্যমিক শেষ হতেই অতিমারির প্রকোপ শুরু হয়েছিল। তার পরে দু’বছর কেটে গিয়েছে। শনিবার সেই ব্যাচের পড়ুয়ারাই জীবনের দ্বিতীয় বড় পরীক্ষায় বসল!
তবে কোভিড যে সমাজে ছাপ রেখে গিয়েছে, তার প্রমাণ খাস কলকাতায় না মিললেও জেলাগুলিতে কার্যত ধরা পড়েছে বলে মনে করছেন অনেকে। কারণ, বহু জেলাতেই ফর্ম পূরণ করেও অনেক পরীক্ষার্থী আসেননি। শিক্ষক মহলের সন্দেহ, অতিমারির সময় অনেক ছাত্র পড়াশোনা ছেড়ে ভিন রাজ্যে কাজের খোঁজে গিয়েছেন। ছাত্রীদের অনেকের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। সম্ভবত, গরহাজিরার পিছনে সেটাই বড় কারণ।
আলিপুরদুয়ারে ফর্ম পূরণ করেও পরীক্ষা দেননি জেলার চারশো পরীক্ষার্থী। চা বলয়ে অনুপস্থিতির হার বেশি। কোচবিহারে অন্তত ৯০০ পরীক্ষার্থী গরহাজির ছিলেন। মুর্শিদাবাদেও একাধিক স্কুল ও মাদ্রাসায় অনুপস্থিত ছিলেন কিছু পরীক্ষার্থী। পূর্ব বর্ধমানের একাধিক শিক্ষক সংগঠনের দাবি, গ্রামের দিকে অনেক স্কুলেই ১৫ শতাংশ পর্যন্ত পরীক্ষার্থী আসেননি। তুলনায় হুগলি, হাওড়া, বীরভূম, পশ্চিম বর্ধমান, দুই মেদিনীপুরে অবশ্য বেশির ভাগ পড়ুয়াই পরীক্ষা দিয়েছেন।
এ দিন সকালে কোচবিহার এবং জলপাইগুড়ির নানা এলাকায় তুমুল বৃষ্টিও হয়েছে। বৃষ্টিতে জলপাইগুড়ি জেলার কিছু পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছতে সমস্যায় পড়েন পরীক্ষার্থীরা। তবে দার্জিলিং জেলায় উপস্থিতির ৯৯ শতাংশ, উত্তর দিনাজপুরে ৯৮ শতাংশ।
এ বারের উচ্চ মাধ্যমিক নিয়ে নানা জল্পনা ছিল। কারণ, গত দু’বছরে কার্যত সে ভাবে ক্লাসঘরে পঠনপাঠন হয়নি। পড়াশোনা মূলত অনলাইনেই হয়েছে। কিন্তু এ বার উচ্চ মাধ্যমিক হয়েছে অফলাইনে। প্রথম দিন প্রথম ভাষার পরীক্ষা নির্বিঘ্নেই সম্পন্ন হয়েছে। প্রশ্নপত্র নিয়ে বড় মাপের অভিযোগ না-থাকলেও কিছু কিছু ‘উষ্মা’ প্রকাশ পেয়েছে। এ দিন যেমন প্রশ্নপত্রে ‘বাংলা সিনেমার ঋত্বিক ঘটকের অবদান’ আলোচনা করতে বলা হয়েছে। পাঁচ নম্বরের জন্য সীমিত উত্তরে ওই আলোচনা কতটা সম্ভব তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। আবার কেউ কেউ বলছেন, ‘বর্ধমানে কোন গান বেআইনি’ তার উত্তর কোথাও নেই। কেউ আবার বলছেন, ‘বাংলা ক্রিকেটের ধারায় সারদারঞ্জন রায়চৌধুরীর অবদান আলোচনা করো’, এর উত্তরও লেখা কঠিন।
উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য অবশ্য বলেন, “প্রশ্ন কঠিন নিয়ে কোনও অভিযোগ নেই। উত্তর লেখার অনেক বিকল্প থাকায় কোনও একটি প্রশ্নের উত্তর না জানলে বিকল্প প্রশ্ন ছিল।” তিনি জানান, কোথাও কোনও সমস্যা হয়নি। হোম সেন্টার নিয়ে কোথাও কোনও অভিযোগ নেই। বিশেষ পর্যবেক্ষকেরা প্রতিটা সেন্টারেই ছিলেন। মোবাইল ফোন নিয়ে ধরা পড়ার ঘটনাও নেই। উত্তরপাড়া গভর্নমেন্ট হাই স্কুলের এক শিক্ষক সৌগত বসু বলেন, “মাধ্যমিকে দেখেছিলাম, অনেকে কিছু না লিখতে পেরে চুপচাপ বসে রয়েছে। এ দিন উচ্চ মাধ্যমিকের প্রথম পরীক্ষায় তা দেখলাম না।”
নিজের স্কুলেই (হোম সেন্টার) এ বার উচ্চ মাধ্যমিক দিচ্ছেন পড়ুয়ারা। তাতে অনেকে খুশি। কিন্তু ভিন্ন সুরও আছে। যেমন হিন্দু স্কুলের এক পরীক্ষার্থী এ দিন বললেন, ‘‘এগারো ক্লাসে এই স্কুলে ভর্তি হয়েছিলাম। কিন্তু স্কুলেই তো আসতে পারিনি। একে হোম সেন্টার বলব কী ভাবে?’’ হোম সেন্টারে পরীক্ষা সুবিধাজনক কি না, সেই প্রশ্নে বেশ আপত্তিও করেছেন অনেকে। হেয়ার স্কুলের পড়ুয়া অরিত্র মজুমদারের বক্তব্য, ‘‘ঘরের মাঠ ইডেনে খেললে কি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় আম্পায়ারের কাছ থেকে আলাদা সুবিধা পেতেন?’’
জেলাগুলিতেও পরীক্ষা শান্তিতে মিটেছে। টুকটাক নকলের অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু তা ব্যাপক হয়নি। নজরদারিও কড়া ছিল। দুই ২৪ পরগনার নদী-ঘেরা এলাকাগুলিতে জলপথেও নজরদারি চলে। তবে এর মধ্যে কিছুটা ব্যতিক্রম আলিপুরদুয়ার জেলার মাদারিহাট ব্লকের একটি স্কুলে। সেখানে দেদার টোকাটুকির ঘটনায় ক্ষুব্ধ ডিস্ট্রিক্ট অ্যাডভাইজ়রি কমিটির কর্তারা। পরের পরীক্ষাগুলোতে ওই স্কুলে সর্বক্ষণের জন্য অতিরিক্ত এক জন পর্যবেক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা। তবে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অনেকে জানান, নিজের স্কুলে পরীক্ষা হওয়ায় ছেলেমেয়েরা সাবলীল ভাবে পরীক্ষা দিয়েছে। চুঁচুড়ার পরীক্ষার্থী অন্বেষা মজুমদারের কথায়, ‘‘অন্য স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নিয়ে আতঙ্ক থাকে। নিজের স্কুলে সেই সমস্যা নেই।’’
পরীক্ষার আগেই কোভিড বিধি উঠে যাওয়ায় কিছু এলাকায় ভিড় দেখা গিয়েছে। তমলুক-সহ পূর্ব মেদিনীপুরের বিভিন্ন স্কুলে আবার রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীরা বিধি ভেঙে ভিড় করে পরীক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। ছিল ছবি তোলার হিড়িক। জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) শুভাশিস মিত্র অবশ্য বলছেন ‘‘পরীক্ষা চলাকালীন পরীক্ষাকেন্দ্রের কাছে ৫০ মিটারের মধ্যে লোকজন থাকায় নিষেধ রয়েছে। কিন্তু এ নিয়ে অভিযোগ আসেনি।’’ কলকাতা-সহ সব জেলার পরীক্ষা কেন্দ্রে স্যানিটাইজ়ার, মাস্কের ব্যবস্থা ছিল। তবে পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ার অনেক স্কুলে বহু পরীক্ষার্থীর মাস্ক দেখা যায়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy