Advertisement
১১ জানুয়ারি ২০২৫

সংস্কার নেই, দখলদারদের দাপটে বিপন্ন নিকাশি, বর্ষায় প্রমাদ গোনে উলুবেড়িয়া

শহর বেড়েছে, কিন্তু সেই অনুযায়ী ঢেলে সাজা হয়নি নিকাশি ব্যবস্থা। যার ফলে বেহাল নিকাশির কারণে বর্ষায় নাকাল অবস্থার সম্মুখীন হতে হচ্ছে উলুবেড়িয়া মহকুমার বাসিন্দাদের। নগরায়নের দাপটে জমি, পুকুর ভরাট করে একের পর এক নির্মাণ হয়েছে। এমনকী বেআইনি নির্মাণের আগ্রাসন দখল করে নিয়েছে নিকাশি নালাও। তাই মহকুমা শহরের বহু এলাকাতেই নিকাশি নালা বলতে কিছুর অস্তিত্ব নেই। বছরের অন্য সময় তো বটেই, বর্ষা এলেই তাই জলবন্দি হওয়ার আশঙ্কায় প্রমাণ গোনেন শহরবাসী।

এ ভাবেই দখল হয়ে যাচ্ছে নিকাশির অন্যতম প্রধান মেদিনীপুর খাল। ছবি: সুব্রত জানা।

এ ভাবেই দখল হয়ে যাচ্ছে নিকাশির অন্যতম প্রধান মেদিনীপুর খাল। ছবি: সুব্রত জানা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০১৪ ০০:৫৮
Share: Save:

শহর বেড়েছে, কিন্তু সেই অনুযায়ী ঢেলে সাজা হয়নি নিকাশি ব্যবস্থা। যার ফলে বেহাল নিকাশির কারণে বর্ষায় নাকাল অবস্থার সম্মুখীন হতে হচ্ছে উলুবেড়িয়া মহকুমার বাসিন্দাদের।

নগরায়নের দাপটে জমি, পুকুর ভরাট করে একের পর এক নির্মাণ হয়েছে। এমনকী বেআইনি নির্মাণের আগ্রাসন দখল করে নিয়েছে নিকাশি নালাও। তাই মহকুমা শহরের বহু এলাকাতেই নিকাশি নালা বলতে কিছুর অস্তিত্ব নেই। বছরের অন্য সময় তো বটেই, বর্ষা এলেই তাই জলবন্দি হওয়ার আশঙ্কায় প্রমাণ গোনেন শহরবাসী।

শহরের জল নিকাশির সমস্যার সমাধানে বাম আমলে পরিকল্পনা করা হয়েছিল ভূগর্ভস্থ নিকাশি নালা ও বুস্টিং পাম্প তৈরির। যার মাধ্যমে জমা জল নিকাশি নালা বা নদীতে ফেলে দেওয়া যাবে। শহরের কোন কোন এলাকা দিয়ে নিকাশি নালা তৈরি করা হবে তার নকশাও তৈরি করা হয়েছিল। প্রয়োজন ছিল বুস্টিং পাম্প বসানোর জায়গা। বাম আমলের পর তৃণমূল সরকারে এলেও আজ পর্যন্ত জায়গা খোঁজা আর শেষ হয়নি। ফলে পুরো পরিকল্পনাই এখন বিশ বাঁও জলে।

প্রতি বছর বর্ষা এলেই জল যন্ত্রণার আশঙ্কায় ভুগতে থাকেন উলুবেড়িয়াবাসী। আর সেই সঙ্গে শুরু হয়ে যায় বেহাল নিকাশি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলির একে অন্যকে দোষারোপের পালা। উলুবেড়িয়া পুরসভা সূত্রের খবর, ২০০৯ সালে জেএনএনইউআরএম প্রকল্পে প্রায় ২০০ কোটি ব্যয়ে এই প্রকল্প তৈরির কতা হয়। সেই অনুযায়ী কেএমডিএ-র এক সংস্থাকে দিয়ে পরিকল্পনা করা হয়। তৈরি করা হয় ডিটেলস প্রোজেক্ট রিপোর্ট (ডিপিআর)। সেখানে বলা হয়েছিল উলুবেড়িয়া পুর এলাকার প্রায় সাড়ে তিনশো কিলোমিটার ভূ-গভর্স্থ পাইপলাইন তৈরি করা হবে। পুর এলাকার সমস্ত জমা জল খোলা নিকাশি নালা দিয়ে সেই ভূ-গর্ভস্থ নিকাশি নালায় পড়বে। ১২টি জায়গায় তৈরি করা হবে বুস্টিং পাম্প। সেই পাম্পের মাধ্যমেও ভূগর্ভস্থ নিকাশি নালার জল বুস্টিং করে নিয়ে যাওয়া হবে ভাগীরথী নদীর তীরবর্তী ট্রিটমেন্ট প্লান্টে। তার পর তা ফেলা হবে নদীতে। পুরসভার দায়িত্ব ছিল ওই ১২টি বুস্টিং পাম্প স্টেশন তৈরির জন্য জায়গা নির্দিষ্ট করা। কিন্তু বাম, তৃণমূল কোনও পুরবোর্ড সেই জায়গা নির্ধারণ করতে পারেনি। শুধু বুস্টিং পাম্প স্টেশনের জায়গাই নয়, ভাগীরথীর ধারে ট্রিটমেন্ট প্লান্ট তৈরির জায়গারও ব্যবস্থা করতে পারেনি পুরসভা। যদিও পুরসভার চেয়ারম্যান পারিষদ (জল) আকবর শেখের দাবি, বুস্টিং পাম্প এবং ট্রিটমেন্ট প্লান্টের জায়গা তাঁরা টিক করে ফেলেছিলেন। তবে তা সরকারকে জানানো হল না কেন? এ প্রশ্নের কোনও জবাব মেলেনি তাঁর কাছে। আর এই কারণেই পুরো বিষয়টি নিয়ে পুর কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার অভিযোগ তুলেছেন মহকুমাবাসী।

কচুরিপানায় মজে গিয়েছে
পুকুর।—নিজস্ব চিত্র।

এক সময় নিকাশি নালা ছিল।
তবে এখন অদৃশ্য।—নিজস্ব চিত্র।

পুর এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, আগের যে নিকাশি নালাগুলি রয়েছে, সেগুলির দীর্ঘদিন ধরে কোনও সংস্কার হয়নি। তার উপর যখন পুরসভায় যে দল ক্ষমতায় এসেছে তাদের পরোক্ষ মদতে নিকাশি নালাগুলি জবর দখল হয়েছে। একের পর এক তৈরি হয়েছে বেআইনি নির্মাণ। কিন্তু রাজনৈতিক স্বার্থে কি বামেরা, কি তৃণমূল কেউই তাতে বাধা দেয়নি। এমনকী নিকাশি নালা জবকদখলমুক্ত করতে কোনও পদক্ষেপও করা হয়নি।

পুরসভা সূত্রের খবর, ২৯টি ওয়ার্ডের জল মূলত গৌরী গঙ্গা খাল, বনস্পতি খাল, রাজাপুর খাল, মেদিনীপুর ক্যানাল-সহ ৬-৭টি বড় নিকাশি খালের মাধ্যমে বয়ে গিয়ে ভাগীরথীতে পড়ে। গৌরীগঙ্গা খালে পড়ে বাউড়িয়া এলকার জল। বনস্পতি ও মেদিনীপুর ক্যানালে পড়ে ঊলুবেড়িয়া পুর এলাকার বৃহৎ অংশের জল। বাজার পাড়া, নোনা, উলুবেড়িয়া হাসপাতাল এলাকার জল উলুবেড়িয়া স্টেশন রোডের পাশ থেকে দু’টি নিকাশি নালার মাধ্যমে রেল লাইনের পাশ বরাবর গিয়ে বনস্পতি খালে পড়ত। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, নিকাশি নালাদু’টি ২০ থেকে ২৫ ফুট চওড়া ছিল। কিন্তু জবরদখল হতে হতে এখন তার অস্তিত্বই হারাতে বসেছে। যার ফলে বৃষ্টি হলে জল না সরায় তাঁদের জলবন্দি হতে হয়। স্থানীয় বাসিন্দা ক্ষিতি বিশ্বাস অবৈধ নির্মাণ নিয়ে সরাসরি পুরসভার বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন। তিনি বলেন, “পুরসভার মদতেই বাড়ছে অবৈধ নির্মাণ। প্রতিবাদ করে কোনও লাভ হয় না। তাই মানুষ প্রতিবাদ করে না। মাঝে পড়ে ভুগছেন সাদারণ মানুষ।”

পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান কংগ্রেসের সাইদুর রহমানের কথায়, “পুর এলাকার ছোট ও মাঝারি নিকাশি নালা সংস্কারে সাড়ে চার কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছিল ২০০৯-২০১০ সাল নাগাদ আমার সময়ে। কিন্তু তৃণমূল পুরবোর্ড গঠনের পর নিকাশি নালা সংস্কারের নামে টাকা নয়ছয় করেছে। কোনও কাজই হয়নি।” পুরসভার বর্তমান চেয়ারম্যান তৃণমূলের দেবদাস ঘোষ বলেন, “কী কাজ শুরু হয়েছে না হয়েছে তা মানুষই বলবে। আর অবৈধ নির্মাণ নিয়ে যে সমস্ত অভিযোগ উঠেছে তার সবই হয়েছে বাম আমলে। কারণ ১৯৮২সাল থেকে তারাই ক্ষমতায় ছিল। আমরা তো সবে পাঁচ বছর হল এসেছি।” পুরসভার বিরোধী দলনেতা সিপিএমের সাবিরুদ্দিন মোল্লা পাল্টা বলেন, “আমরা অবৈধ নির্মাণ রুখে দিয়েছিলাম। তৃণমূলের আমলে ফের সে সব শুরু হয়েছে।”

পুর এলাকার নিকাশি ব্যবস্থা নিয়ে এই রাজনৈতিক চাপান-উতোরে এ বারও বর্ষায় জলবন্দি হওয়ার সিঁদুরে মেঘ দেখতে শুরু করেছেন উলুবেড়িয়ার মানুষ।

অন্য বিষয়গুলি:

uluberia drainage system faliure jnnurm project
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy