এখানেই তৈরি হওয়ার কথা কমিউনিটি হল (বাঁদিকে)। (ডানদিকে) তারাপদ দে উদ্যান। সরকারি অনুষ্ঠানের সময় ছাড়া যা বন্ধই থাকে। ছবি: রমাপ্রসাদ গঙ্গোপাধ্যায়।
শীতের ডোমজুড় মানেই মেলার ডোমজুড়। আর মেলা মানেই প্রাচ্যভারতী ক্রীড়াঙ্গন।
১০ ডিসেম্বর, বুধবার, থেকে শুরু হয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবেশ মেলা। শেষ হবে সেই নববর্ষের উত্সব দিয়ে। তার মধ্যে একে একে আসবে বইমেলা, গোল্ড কাপ ফুটবল, থানা ফুটবল লিগ, ডোমজুড় উত্সব। একমাত্র বিজ্ঞান মেলা ছাড়া সব অনুষ্ঠানই হয় প্রাচ্যভারতী ক্রীড়াঙ্গনে। প্রায় প্রতি মাসে টুকটাক সেমিনার, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নানা স্কুলের ক্রীড়া প্রতিযোগিতাও অনুষ্ঠিত হয় এই মাঠে। এই কয়েক মাস প্রতিদিন দুই থেকে চার হাজার লোকের চাপ পড়ে প্রাচ্যভারতী স্টেডিয়ামে।
এই লাগাতার চাপে ক্রমশই খারাপ হচ্ছে মাঠের অবস্থা। স্থানীয় ফুটবলার আনন্দ পালের দাবি, “পরপর মেলার পর মাঠের অবস্থা এতটাই খারাপ হয়ে যায় যে প্র্যাকটিস করতে গেলেও চোট পাওয়ার ভয় থাকে।”
সমস্যা স্বীকার করেও মেলা কমিটিগুলির পাল্টা দাবি, শহরের প্রাণকেন্দ্রে এই মাঠ ছাড়া অন্য কোথাও বড় মেলা আয়োজন করা সম্ভব নয়। একটা কমিউনিটি হল থাকলে মাঠের উপর চাপ কমত। তার উদ্যোগও তো শুরু হয়েছিল। ডোমজুড় থানার উল্টো দিকের একটি জমিতে মাথা তুলেছিল কয়েকটি স্তম্ভ। নকশায় ছিল, দোতলা বাড়ির নীচে থাকবে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা, উপরে থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের প্রেক্ষাগৃহ। কিন্তু কাজ এগোয়নি। সেই জমি এখন আগাছা ও আবর্জনায় ভর্তি। ডোমজুড় পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ সুবীর চট্টোপাধ্যায় (টিঙ্কাই) জানান, জেলা পরিষদের উদ্যোগে ওই কমিউনিটি হল তৈরির কাজ শুরু হয়েছিল। দ্রুত কাজ শেষ করার জন্য জেলা প্রশাসনের কাছে দরবার করা হচ্ছে। জেলা পরিষদের এক সদস্যের আবার পাল্টা দাবি, ওই জমির মালিকানা নিয়ে সমস্যা রয়েছে। তা মেটাতে হবে পঞ্চায়েত সমিতিকেই।
কিন্তু কমিউনিটি হল যদি বা হয়, তাতে বড়দের ফুটবল মাঠের চাহিদা মিটবে। কী হবে কচিকাঁচাদের? খুদেদের সময় কাটানোর জন্য নেই কোনও ভাল পার্ক। ডোমজুড় পঞ্চায়েত সমিতির অধীনে ‘তারাপদ দে উদ্যান’-এর পরিকাঠামো ভেঙে পড়েছে। কেন বছর পাঁচেক খন্ডহর হয়ে পড়ে রয়েছে পার্কটি?
ডোমজুড় পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি বাবলু মণ্ডল আশ্বাস দিয়েছেন, ‘‘তারাপদ দে উদ্যানকে সাজিয়ে তুলতে কয়েকটি সংস্থার সঙ্গে আমরা প্রাথমিক ভাবে কথা বলেছি। শীঘ্রই কাজ শুরু হবে।’’
কিন্তু খোঁজ করে জানা গেল, পার্কটি নতুন করে সাজাতে আগ্রহী এক ব্যবসায়ী এগিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু তাঁর কাছে প্রাথমিক ভাবে চড়া হারে মাসিক ভাড়া দাবি করেছিল পঞ্চায়েত সমিতি। তাতেই পিছিয়ে গিয়েছেন ওই ব্যবসায়ী। “পার্কটিকে ব্যবহারযোগ্য করতে যা টাকা খরচ হবে, অত ভাড়া দিলে পোষাবে না।” এমনই জানালেন নাম প্রকাশে অনাগ্রহী ওই ব্যবসায়ী। যদিও পঞ্চায়েত সমিতির দাবি, সঠিক পদ্ধতিতে আবেদন করলে কম ভাড়াতেই ওই পার্ক ‘লিজ’ দেওয়া হবে।
খেলাধুলোর সঙ্গে সব বয়সের মানুষের প্রয়োজন বিনোদনের ব্যবস্থা। ১৯৪৭ সালে ‘পথের দাবি’ সিনেমা দিয়ে শুরু হয়েছিল ‘রূপছবি’ প্রেক্ষাগৃহ বছর দু’য়েক হল বন্ধ। টিমটিম করে চালু রয়েছে শহরের এক প্রান্তে ‘বাণীশ্রী’ প্রেক্ষাগৃহটি। সিনেমা দেখতে হলে এখানকার বেশির ভাগ মানুষই কলকাতা যান। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, শহরে একটি শীততাপনিয়ন্ত্রিত প্রেক্ষাগৃহ তৈরি হোক। যেখানে সিনেমা দেখা ছাড়াও প্রয়োজনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করা যাবে। সেই সঙ্গে দরকার আধুনিক রেস্তোরাঁ। পুরসভা হওয়ার পথে পা বাড়িয়েছে ডোমজুড়, কিন্তু এখনও সপরিবারে বাইরে খেতে হলে ডোমজুড়ের মানুষকে হাওড়া শহর অথবা কলকাতা যেতে হয়।
‘পুরশহর’ তকমার জন্য ডোমজুড়ের দরকার সুরক্ষিত, উন্নতমানের হোটেলও। রাত কাটানোর জন্য একটিও ভাল লজ বা হোটেল নেই। এমনকী মেলা দেখতে আসা মানুষজনের পক্ষে ব্যবহারযোগ্য শৌচাগার খুঁজে পাওয়াই মুশকিল। বাসস্ট্যান্ড, বাজার, মেলাপ্রাঙ্গণ, কোথাও পরিষ্কার টয়লেট মেলে না। ‘স্বচ্ছ শহর’ হওয়ার থেকে বহুদূরে ডোমজুড়। সেই সঙ্গে রয়েছে সুরক্ষার প্রশ্নও। বহু রাস্তায় পথবাতি নেই। ডোমজুড় বাজার এলাকা বাদ দিলে রাত নামলেই শহরটাকে যেন গিলে নেয় অন্ধকার।
এ ছাড়াও রয়েছে দৃশ্য দূষণের সমস্যা। শহরের যত্রতত্র লাগানো রয়েছে আবাসন প্রকল্প, গয়নার দোকান-সহ বিভিন্ন লাভজনক সংস্থার হোর্ডিং। স্থানীয় একটি পত্রিকার সম্পাদক সোমনাথ চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘শহরে সরকারি সম্পত্তির উপরেও বেশ কিছু হোর্ডিং লাগানো রয়েছে। এই হোর্ডিংগুলি থেকে কর আদায় করুক ব্লক প্রশাসন। আর তা না হলে সেই সব হোর্ডিং সরিয়ে দেওয়া হোক। তাতে অন্তত দৃশ্যদূষণ হবে না।’’
পঞ্চায়েত সমিতির দাবি, নতুন বছরের গোড়ায় শহরে লাগানো সব বেআইনি হোর্ডিং খুলে নেওয়া হবে। নতুন করে হোর্ডিং লাগাতে গেলে ব্লক প্রশাসনের অনুমতি নিতে হবে। কিন্তু এত দিন তা হয়নি কেন, সে প্রশ্ন থাকছেই।
ডোমজুড়ের বিডিও তমোঘ্ন কর বলেন, ‘‘নাগরিক পরিষেবা সংক্রান্ত সব দাবিগুলির বিষয়েই আমরা ওয়াকিবহাল রয়েছি।” তাঁর দাবি, ডোমজুড় হাসপাতালের কাছে ও মুম্বই রোডের ধারে অঙ্কুরহাটিতে দু’টি যাত্রী প্রতীক্ষালয় তৈরি করা হবে। রাস্তার পাশে ত্রিফলা আলো বসানোর জন্য শীঘ্রই টেন্ডার ডাকা হবে।
আপাতত সরকারি এই আশ্বাসটুকুই পুঁজি ডোমজুড়ের।
শেষ
কেমন লাগছে আমার শহর? নিজের শহর নিয়ে আরও কিছু
বলার থাকলে আমাদের জানান। ই-মেল পাঠান district@abp.in-এ।
subject-এ লিখুন ‘আমার শহর ডোমজুড়’।
ফেসবুকে প্রতিক্রিয়া জানান: www.facebook.com/anandabazar.abp
অথবা চিঠি পাঠান ‘আমার শহর’,
হাওড়া ও হুগলি বিভাগ,
জেলা দফতর,
আনন্দবাজার পত্রিকা,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা ৭০০০০১ ঠিকানায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy