Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

‘প্রসূন-রোগের’ ভিন্ন চিকিৎসা, এ বার পুলিশ পিটিয়ে গারদে

নিচুতলার পুলিশকর্মীদের আশঙ্কাই সত্যি হল! আর তা হল, সাংসদ প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লোকসভা কেন্দ্র হাওড়ার বালিতে। এখানেও কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশকে পেটালেন বাইক-আরোহী এক মহিলা। লেকটাউনের ট্রাফিক কনস্টেবল তারাগতি বিশ্বাসের ‘অপরাধ’ ছিল, নিয়ম ভেঙে ইউ-টার্ন নেওয়ায় তিনি সাংসদের গাড়ি আটকেছিলেন। আর বালিতে পুলিশকর্মীদের অপরাধ, হেলমেটহীন ওই মহিলাকে ১০০ টাকার কেস দিতে চেয়েছিলেন।

শান্তনু ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:৪৯
Share: Save:

নিচুতলার পুলিশকর্মীদের আশঙ্কাই সত্যি হল!

আর তা হল, সাংসদ প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লোকসভা কেন্দ্র হাওড়ার বালিতে। এখানেও কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশকে পেটালেন বাইক-আরোহী এক মহিলা। লেকটাউনের ট্রাফিক কনস্টেবল তারাগতি বিশ্বাসের ‘অপরাধ’ ছিল, নিয়ম ভেঙে ইউ-টার্ন নেওয়ায় তিনি সাংসদের গাড়ি আটকেছিলেন। আর বালিতে পুলিশকর্মীদের অপরাধ, হেলমেটহীন ওই মহিলাকে ১০০ টাকার কেস দিতে চেয়েছিলেন। প্রসূনবাবুর বিরুদ্ধে পুলিশ অবশ্য এখনও কোনও ব্যবস্থা নিতে পারেনি। তবে বালিতে ঘটনার পরেই গ্রেফতার হয়েছেন অভিযুক্ত দম্পতি।

সাংসদ প্রসূনবাবু কার্যত পার পেয়ে যাওয়ায় পুলিশের নিচুস্তরে অসন্তোষ দানা বাঁধছিল। নিজেদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে শঙ্কিত এক পুলিশকর্মী বলেছিলেন, ‘‘এর পরে তো রাস্তায় যে কেউ আমাদের চড়-থাপ্পড় মেরে যাবে।’’ এ বার সেটাই ঘটল।

তবে লেকটাউনের ঘটনায় প্রসূনবাবুকে এখনও পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ করা না হলেও বালিতে পুলিশকে মারধরের অভিযোগে পম্পা দত্ত ও তাঁর স্বামী উত্তম দত্তকে গ্রেফতার করে সোমবার তাঁদের হাওড়া আদালতে তোলা হয়। হাওড়া সিটি পুলিশের এক কর্তা বলেন, “সরকারি কাজে বাধা দেওয়া, কর্তব্যরত পুলিশকে মারধর ও সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করার অভিযোগে ওই দম্পতিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনার ভিডিও সংগ্রহ করা হয়েছে।”

পুলিশ সূত্রের খবর, ১৮ জানুয়ারি, রবিবার সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ মাইতিপাড়া সাব ট্রাফিক গার্ডের এক এএসআই তুষারকান্তি বৈদ্য ও সিভিক ভলান্টিয়ার সুরজিৎ হালদার বালি ঘাটে গাড়ি চেক করছিলেন। তখন দক্ষিণেশ্বরের দিক থেকে বালি ব্রিজ পেরিয়ে একটি মোটরবাইক বালি ঘাটের কাছে আসে। তাতেই বেলঘরিয়ার ওলাইচণ্ডীতলার বাসিন্দা উত্তমবাবু ও পম্পাদেবী ছিলেন। মোটরবাইকের চালক উত্তমবাবুর মাথায় হেলমেট থাকলেও পম্পাদেবীর মাথায় হেলমেট ছিল না। তাই মোটকবাইকটি আটকান তুষারকান্তিবাবু। এর পরেই ওই অফিসার উত্তমবাবুকে তাঁর গাড়ির কাগজপত্র দেখাতে বলেন। অভিযোগ, ওই যুবক নিজের ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখাতে পারেননি। তা ছাড়াও তিনি যে সমস্ত কাগজপত্র দেখান, তার অধিকাংশেরই মেয়াদ উত্তীর্ণ।

অভিযোগ, কাগজপত্র ঠিক না থাকায় ওই মোটরবাইকটির বিরুদ্ধে কেস দিতে গেলে ট্রাফিক অফিসারের হাত থেকে সমস্ত কাগজপত্র ছিনিয়ে নেন উত্তমবাবু। এর পরেই উত্তমবাবুকে কেন কেস দেওয়া হবে, ঘুষ নেওয়ার জন্য এ সব করা হচ্ছে বলে গালিগালাজ করতে শুরু করেন পম্পাদেবী।

পুলিশ জানায়, ওই দম্পতি চেঁচামেচি শুরু করতেই পুরো ঘটনাটি সরকারি ক্যামেরায় ভিডিও রেকর্ডিং করতে শুরু করেন সিভিক ভলান্টিয়ার সুরজিৎ। তখনই দম্পতির এক জন বলে ওঠেন, ‘আবার ছবি তোলা হচ্ছে, কীসের ছবি তুলছিস?’ অভিযোগ, এর পরেই পম্পাদেবীর হাতে থাকা ব্যাগ দিয়ে ক্যামেরার উপরে আঘাত করলে ওই সিভিক ভলান্টিয়ারের হাত থেকে ক্যামেরাটি পড়ে যায়। ক্যামেরা তুলতে গেলে ওই সিভিক ভলান্টিয়ারকে চড়-ধাক্কা মারতে থাকেন পম্পাদেবী। অভিযোগ, তখন বাধা দিতে গেলে তুষারবাবুকে ধাক্কা মেরে, পেটে ঘুষি মেরে তাঁর হাত থেকে কম্পাউন্ড বই (গাড়ির কেস লেখার ফর্মের বই) ও অন্যান্য গাড়ির কাগজপত্র ছিনিয়ে নিয়ে মুচড়ে ছুঁড়ে ফেলে দেন পম্পাদেবী। ওই পুলিশ অফিসার বলেন, “কেন তিনি এ সব করছেন জানতে চাওয়ায় ওই মহিলা আমাকে চড় মারেন।”

পুলিশ জানায়, চেঁচামেচিতে বালি ঘাটের অন্য দিকে কর্তব্যরত এক মহিলা কনস্টেবল এবং এক মহিলা সিভিক ভলান্টিয়ার ছুটে এসে পম্পাদেবীকে ধরতে গেলে তাঁদেরও মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। এর পরে দু’জনে মহিলাকে চেপে ধরলেই তিনি পথে অচৈতন্য হয়ে শুয়ে পড়েন। ততক্ষণে স্থানীয়েরা ও মাইতিপাড়া ট্রাফিকের ওসি মৃণালকান্তি দে এবং আইসি বালি ট্রাফিক কল্যাণ চক্রবর্তী-সহ অন্য অফিসারেরা ঘটনাস্থলে যান। পম্পাদেবীকে ট্যাক্সিতে উত্তরপাড়া হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিছু পরেই অবশ্য তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE