Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪

ছত্রাকের রোগে ফুলচাষে ক্ষতি, বিপাকে চাষি

ঝরে পড়ছে পাতা। পচে, শুকিয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে গাছ। আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনায় ফের ছত্রাক-ঘটিত রোগে আক্রান্ত হয়েছে হাওড়ার বাগনানের ফুলচাষ। ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কায় ইতিমধ্যেই মাথায় হাত পড়েছে চাষিদের। কয়েক মাস আগেও একই ভাবে রোগাক্রান্ত হয়ে বিঘার পর বিঘা ফুলচাষ নষ্ট হয়েছিল ওই এলাকায়। ফুলচাষিদের অভিযোগ, উদ্যানপালন দফতরকে জানিয়েও গত বিশেষ লাভ হয়নি।

ক্ষতিগ্রস্ত গোলাপ খেতে চাষি। বাগনানে সুব্রত জানার তোলা ছবি।

ক্ষতিগ্রস্ত গোলাপ খেতে চাষি। বাগনানে সুব্রত জানার তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাগনান শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:৫৩
Share: Save:

ঝরে পড়ছে পাতা। পচে, শুকিয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে গাছ।

আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনায় ফের ছত্রাক-ঘটিত রোগে আক্রান্ত হয়েছে হাওড়ার বাগনানের ফুলচাষ। ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কায় ইতিমধ্যেই মাথায় হাত পড়েছে চাষিদের। কয়েক মাস আগেও একই ভাবে রোগাক্রান্ত হয়ে বিঘার পর বিঘা ফুলচাষ নষ্ট হয়েছিল ওই এলাকায়। ফুলচাষিদের অভিযোগ, উদ্যানপালন দফতরকে জানিয়েও গত বিশেষ লাভ হয়নি। তাই এ বছরে তাঁরা দিশাহারা। তাঁরা মনে করছেন, যে ভাবে ফুলগাছে রোগের প্রকোপ বাড়ছে, তাতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া না হলে পুরো চাষই নষ্ট হবে।

জেলা উদ্যানপালন দফতরের অধিকর্তা কুশধ্বজ বাগের আশ্বাস, “চাষিরা সমস্যার কথা জানালে দ্রুত ব্যবস্থা নেব। বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের সঙ্গে আলোচনা করে রোগ প্রতিরোধের ব্যবস্থা করা হবে।” একই সঙ্গে অবশ্য তিনি মেনে নিয়েছেন, গত বার ব্যবস্থা নেওয়া সত্ত্বেও ফুল চাষে রোগের সংক্রমণ ঠেকানো যায়নি।

বাগনান-২ ব্লকের ওরফুলি পঞ্চায়েতের কাঁটাপুকুর, বাঁকুড়দহ, হেলেদ্বীপ, ভুলগেড়িয়া, চাঁদগেড়িয়া-সহ বিস্তৃর্ণ এলাকায় কয়েক হাজার ফুলচাষি গোলাপ, জাড়বেড়া, চেরি, গাঁদা, ডালিয়া, করণ-সহ ২০-২৫ প্রজাতির ফুল চাষ করেন। বাজারে এখানকার ফুলের বেশ ভালই চাহিদা রয়েছে। কলকাতার মল্লিকঘাট ফুলবাজারে চাষিরা ফুল বিক্রি করেন। অন্য রাজ্যেও এখানকার ফুল বিক্রি করা হয়। চাষিরা ফুলের পাশাপাশি চারাও বিক্রি করেন। মূলত শীতের মরসুমেই ব্যবসা জমে ওঠে।

এ বার নভেম্বর নাগাদ ওই মরসুমি ফুল চাষ করেছেন তাঁরা। কিছু গাছে ফুল ধরেছে, কিছু গাছে সবে কুঁড়ি এসেছে। ফুল পুরোপুরি ফুটতে এখনও দিন পনেরো সময় লাগবে। কিন্তু শুরুতেই সিঁদুরে মেঘ দেখতে শুরু করেছেন চাষিরা। কেননা, বহু ফুল গাছের পাতা হলুদ হয়ে যাচ্ছে। গাছ শুকিয়ে যাচ্ছে।

চাষিরা জানান, রোগাক্রান্ত হওয়ার পরে গাছের পাতা হলুদ হয়ে ঝরে পড়ছে। ফুল শুকিয়ে যাচ্ছে। শুধু শুকনো গাছটিই দাঁড়িয়ে থাকছে। ওই গাছে আর ফুল হবে না। শুকনো গাছ তুলে ফেলে দেওয়ার আগেই সংক্রমণ অন্য গাছে ছড়িয়ে পড়ছে। কীটনাশক ব্যবহার করা হলেও রোগ প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না। এ ভাবেই চললে নষ্ট হবে বিঘার পর বিঘা জমির ফুল চাষ। এ জন্য আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনাকে দায়ী করেছেন ফুলচাষিরা। তাঁদের মতে, টানা শীত থাকলে ফুলের ফলন ভাল হয়। কিন্তু স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়া বা তাপমাত্রার বেশি তারতম্য হলেই ছত্রাক-ঘটিত রোগে আক্রান্ত হয় ফুলগাছ।

গত বছর ফেব্রুয়ারি-মার্চে ওই এলাকায় একই কারণে নষ্ট হয়েছিল ফুল চাষ। এ বার সেই রোগ দেখা দিয়েছে ডিসেম্বর-জানুয়ারিতেই। বাঁকুড়দহের ফুলচাষি পুলক ধাঁড়া এ বার দু’বিঘা জমিতে চাষ করেছেন। তিনি বলেন, “গত বারে ৫০ হাজার টাকা ঋণ করে ফুল চাষ করেছিলাম। সেই ঋণই এখনও শোধ হয়নি। এ বারেও ফের ঋণ করেছি। ভেবেছিলাম ভাল ফলন হলে ঋণ শোধ হয়ে যাবে। কিন্তু এই অবস্থা চলতে থাকলে ভিটেমাটি বিক্রি করতে হবে।” একই ভাবে সমস্যার কথা জানিয়েছেন ফুলচাষি ভোলানাথ ধাড়া, সুবল মান্না, সমীর খাঁড়া প্রমুখ। অভিজিৎ খাঁড়া নামে এক চাষি বলেন, “অবিলম্বে বাগনান এলাকায় উদ্যানপালন দফতরের এক আধিকারিক নিয়োগ দরকার। যাতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যায়।” পঞ্চায়েত প্রধান শ্রীকান্ত সরকার সমস্যা নিয়ে দ্রুত উদ্যানপালন দফতরের সঙ্গে কথা বলার আশ্বাস দেন।

অন্য বিষয়গুলি:

fungus attack on rose palnt southbengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy