কাজ বন্ধ। মৌড়িগ্রামের ইন্ডিয়ান অয়েল ডিপোর সামনে গাড়ির ভিড়। বুধবার দীপঙ্কর মজুমদারের তোলা ছবি।
অপবাদ বা অভিযোগ, এত দিন সবই ছিল তাঁদের বিরুদ্ধে। কিন্তু এ বার অভিযোগকারীর ভূমিকায় তাঁরাই! কর্তারা অভিযুক্ত।
ট্যাঙ্কার থেকে তেল পাচার নিয়ে চালক ও খালাসিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। অভিযোগ, তাঁদের যোগসাজশেই জাতীয় সড়ক বা রাজ্য সড়কের আশেপাশে গোপন ঠেকে ট্যাঙ্কার থেকে তেল বিক্রি করে দেওয়া হয়। এ বার সেই চালক-খালাসিরাই কিন্তু তেল সংস্থার কর্তাব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তেল চুরির অভিযোগ তুললেন। শুধু অভিযোগ তোলা নয়, বিক্ষোভ দেখিয়ে দিনভর কাজ বন্ধ করে দিলেন। এবং পুলিশের কাছেও অভিযোগ দায়ের করলেন সংস্থার কর্তাদের বিরুদ্ধে।
বুধবার এই ঘটনা ঘটেছে হাওড়ার মৌড়িগ্রামে ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন বা আইওসি-র ডিপোয়। পেট্রোল-ডিজেলের ট্যাঙ্কার-চালকদের অভিযোগ, ট্যাঙ্কারে কত তেল আছে, তা মাপার যন্ত্র ‘ক্যালিব্রেটার’-এ কারচুপি করে প্রতি হাজার লিটারে ৪০ লিটার তেল কম দেওয়া হচ্ছে। ফলে পাম্পে তেল সরবরাহের সময় চুরির দায়ে পড়তে হচ্ছে চালক-খালাসিদের। তাঁদের অভিযোগ, এই ধরনের চুরিতে ডিপোর কিছু কর্তা জড়িত। অবিলম্বে তাঁদের গ্রেফতার করতে হবে।
পুলিশি সূত্রের খবর, চালক ও খালাসিরা এ দিন সকাল থেকে কাজ বন্ধ করে মৌড়িগ্রাম ডিপোর সামনে অবস্থান-বিক্ষোভ শুরু করেন। ডিপোর কাছেই রাজ্য সরকারের অধীন একটি তেল মাপক সংস্থায় ভাঙচুর চালানো হয়। কুশপুতুল পোড়ানো হয় সংস্থার কর্তাদের। ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষোভকারীদের নেতৃত্ব দেন মৌড়িগ্রাম ট্যাঙ্কার ওয়ার্কার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি, স্থানীয় তৃণমূল নেতা মাসুদ আলম খান।
কাজ বন্ধ করে বিক্ষোভ কেন?
মাসুদ বলেন, “ক্যালিব্রেটারে কারচুপি করে ট্যাঙ্কারে তেল কম দেওয়া হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে।” তিনি জানান, কয়েক দিন আগে উল্টোডাঙায় তেল মাপার একটি সংস্থায় দু’টি গাড়িতে তেলের মাপ নেওয়ার পরে বিষয়টি ধরা পড়ে। দেখা যায়, প্রতি এক হাজার লিটারে ৪০ লিটার কম রয়েছে। সংগঠনের পক্ষ থেকে মৌড়িগ্রাম ডিপোর তিন কর্তার বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না-নেওয়া পর্যন্ত অবস্থান-বিক্ষোভ চলবে। তবে কেরোসিনের ট্যাঙ্কারে তেল কম দেওয়ার অভিযোগ না-থাকায় সেই সব ট্যাঙ্কারের চালকেরা এ দিনের বিক্ষোভে সামিল হননি। কিন্তু কাজ বন্ধ থাকায় ডিপোর চত্বরে এবং সংলগ্ন রাস্তার দু’ধারে তেল কিনতে আসা যানবাহনের লাইন পড়ে যায়। তবে আইওসি-র একটি সূত্রের দাবি, এ দিন ট্যাঙ্কারগুলি পেট্রোল ও ডিজেল সরবরাহের কাজ না-করলেও রাজ্যে এর প্রভাব পড়েনি। কিন্তু তিন-চার দিন ধরে কর্মীদের বিক্ষোভ-অবস্থান চললে সমস্যা হতে পারে।
মৌড়িগ্রাম ডিপোর কর্তারা বিক্ষোভ বা কাজ বন্ধের ব্যাপারে মুখ খুলতে চাননি। সেখানকার এক পদস্থ কর্তা বলেন, “পরিবহণকর্মীরা এ দিন সকাল থেকে কেন কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন, তা আমি জানি না। তাঁরা পুলিশের কাছে কী অভিযোগ করেছেন, তা-ও জানি না।” ওই কর্তা জানান, রোজ তাঁদের ডিপো থেকে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় ৩৫০-৪০০ ট্যাঙ্কার তেল সরবরাহ করা হয়।
মৌড়িগ্রাম ডিপোর পদস্থ কর্তারা কর্মী-বিক্ষোভ নিয়ে কিছু কথা বলতে না-চাইলেও আইওসি-র জনসংযোগ আধিকারিক অলোককুমার সিংহ বলেন, “তেল মাপার যন্ত্রে কারচুপির যে-অভিযোগ উঠছে, তা ভিত্তিহীন। তেল কম দেওয়ার অভিযোগ আমাদের কাছে নেই। আমরা এই বিষয়ে পরিবহণকর্মীদের সঙ্গে কথা বলব।” আইওসি সূত্রের খবর, অচলাবস্থা কাটাতে সংস্থার জেনারেল ম্যানেজার (পূর্বাঞ্চল) বিজয়কুমার বর্মা আজ, বৃহস্পতিবার বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy