Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
মিলল আদালতের ছাড়পত্র

হোমের আশ্রয় ছেড়ে ঘরে ফিরছেন বাংলাদেশি তরুণী

পাচারের জন্য তাঁকে বাংলাদেশ থেকে হাতবদল করা হয়েছিল। অভিযোগ এমনটাই। হুগলির চণ্ডীতলায় উদ্ধার হওয়ার পর থেকেই তরুণী ছিলেন হোমের আশ্রয়ে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০১৭ ০১:১০
Share: Save:

পাচারের জন্য তাঁকে বাংলাদেশ থেকে হাতবদল করা হয়েছিল। অভিযোগ এমনটাই। হুগলির চণ্ডীতলায় উদ্ধার হওয়ার পর থেকেই তরুণী ছিলেন হোমের আশ্রয়ে। ঘটনার পাঁচ বছর পরে আদালতের ছাড়পত্র পেয়ে এখন বাংলাদেশে নিজের বাড়িতে ফেরার অপেক্ষায় দিন গুনছেন ওই তরুণী।

তরুণী জানিয়েছেন, তাঁর বাড়ি বাংলাদেশের কুমিল্লার মুরাদনগরের দালপুর গ্রামে। বছর পাঁচেক আগে ঢাকার একটি কাপড়ের দোকানে কাজ দেওয়ার নাম করে এক যুবক তাঁকে কলকাতায় নিয়ে আসেন। জনৈক রঞ্জিত সরকারের কাছে তাঁকে বিক্রি করে দেওয়া হয়। ২০১২ সালের ১০ সেপ্টেম্বর হুগলির চণ্ডীতলার চিকরণ্ড জলাপাড়ায় ওই যুবকের সঙ্গে মেয়েটিকে ঘোরাঘুরি করতে দেখে এলাকার লোকজনের সন্দেহ হয়। উত্তর ২৪ পরগনরা বনগাঁর বাসিন্দা রঞ্জিতের শ্বশুরবাড়ি চণ্ডীতলায়। গ্রামবাসীরা দু’জনকে ধরে থানায় নিয়ে যান। তরুণীর কথা শুনে এক গ্রামবাসীর লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে অপহরণের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করে চণ্ডীতলা থানার পুলিশ। রঞ্জিতকে গ্রেফতার করা হয়। পরে সে জামিন পায়

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, উদ্ধার হওয়ার পরে মেয়েটির ঠাঁই হয় লিলুয়ার একটি হোমে। বাড়ি ফেরার জন্য তিনি কান্নাকাটি করতেন। কিন্তু আইনি জটিলতায় তাঁকে বাড়ি ফেরানো সম্ভব হয়নি। মঙ্গলবার ওই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয় শ্রীরামপুর আদালতের দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক কল্লোল চট্টোপাধ্যায়ের এজলাসে। সাক্ষ্য দেন ওই তরুণী। কাজ জুটিয়ে দেওয়ার নাম করে তাঁকে পাচারের চেষ্টা করা হচ্ছি‌ল বলে আদালতকে তরুণী জা‌নান‌। সাক্ষ্যগ্রহণের পরে আদালত তাঁর বাংলাদেশে ফেরার ব্যাপারে সবুজ সঙ্কেত দেয়।

মামলার সরকারি আইনজীবী অরুণকুমার অগ্রবাল বলেন, ‘‘গ্রামবাসী এবং পুলিশের তৎপরতায় মেয়েটি পাচার হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন। বাংলাদেশ দূতাবাস মেয়েটির ওই দেশে ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে ছাড়পত্র দিয়েছে। এ বার আদালতও অনুমতি দেওয়ায় আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই তিনি বাড়ি ফিরে যেতে পারবেন বলে আশা করছি।’’

তিনি জানান, তরুণী যে বাড়িতে ফিরতে পারছেন, এতে আমাদের দেশের আইন এবং বিচার ব্যবস্থা সম্পর্কে দুই বাংলার মানুষেরই শ্রদ্ধা বাড়বে। আমরা খুবই খুশি।’’ অপর এক আইনজীবী ঘনশ্যাম অগ্রবাল জানান, আইনি সহায়তা ফোরামের তরফে তাঁকে তরুণীর আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ করা হয়। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমে ওই তরুণী যাতে দ্রুত বাড়ি ফিরতে পারেন, তাঁরা সেই চেষ্টা করবেন।

পুলিশ সূত্রে খবর, বাংলাদেশে বাড়িতে তরুণীর মা-বোন আছেন। দারিদ্রের কারণে তাঁরা ঘটনার পর থেকে এখানে আসতে পারেননি। এ দিকে হোমে থেকে রীতিমতো মুষড়ে পড়েছিলেন ওই তরুণী। এ দিন বাড়ি ফিরে যাওয়ার খবরে আদালত চত্বরেই কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, ‘‘এই দিনটার অপেক্ষায় ছিলাম। যারা আমাকে পাচারের চেষ্টা করছিল, তাদের যেন উপযুক্ত সাজা হয়। আর কোনও মেয়ের যেন ক্ষতি করতে না পারে।’’

তবে তাঁর একটাই আক্ষেপ। কিছু দিন আগে বাবা মারা গিয়েছেন। বাড়ি ফিরে আর বাবার সঙ্গে আর দেখা হবে না!

অন্য বিষয়গুলি:

Young girl Return Home
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE