ঘটনাস্থল: শিবপুরের কয়লা ডিপো এলাকার এখানেই হামলা হয় ভীম ভট্টরাইয়ের উপরে। (ইনসেটে) হাওড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে তখনও বেঁচে ভীম। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র
পেটের সামনে জামাটা রক্তে ভিজে গিয়েছে। ধারালো অস্ত্র দিয়ে প্রায় ৮ ইঞ্চি কাটা পেট থেকে নাড়িভুঁড়ি বেরিয়ে এসেছে। সেই অবস্থাতেই সাত সকালে পেট চেপে ধরে প্রকাশ্য রাস্তায় ছুটছেন এক যুবক। মাঝেমাঝে পড়ে যাচ্ছেন। কিছু ক্ষণ পরেই কোনও রকমে উঠে দাঁড়িয়ে আবার ছুটছেন। সবাই দেখছেন সেই ঘটনা। প্রায় দেড় কিলোমিটার এ ভাবে ছোটার পরে শেষ পর্যন্ত আর দৌড়তে পারেননি রক্তাক্ত ওই যুবক। প্রায় অচৈতন্য অবস্থায় রাস্তাতেই লুটিয়ে পড়েন। এলাকার লোকজন ঘটনাটি দেখতে পেয়ে নিজেদের উদ্যোগে গুরুতর জখম ওই যুবককে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কিছু ক্ষণ পরে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮ নাগাদ এমনই ঘটনা ঘটেছে হাওড়ার ফোরশোর রোড সংলগ্ন শালিমারের কয়লা ডিপো এলাকায়। পুলিশ জানিয়েছে, মৃত যুবকের নাম ভীম ভট্টরাই। বাড়ি অসমের করবি আংলং জেলার পশ্চিম উমালোফারগাঁওয়ে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানিয়েছে, বছর চৌত্রিশের অসমিয়া যুবকটি গুয়াহাটি-বেঙ্গালুরু (ভায়া হাওড়া) এক্সপ্রেসে হাওড়া স্টেশন এসে পৌঁছন সোমবার গভীর রাতে। পুলিশ জানিয়েছে, মৃত যুবকের পকেট থেকে পাওয়া ট্রেনের টিকিট থেকে দেখা গিয়েছে ওই ট্রেনেই তাঁর বেঙ্গালুরু যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মঙ্গলবার সকালে তাঁকে দেখা যায় শিবপুর বাজারের কাছে। সেখানে একটি হোটেলে চাকরি চাইলে হোটেল মালিক ২০০ টাকা দৈনিক বেতনে রেখে দেন। কিন্তু এর পরে তাঁর রক্তাক্ত ও প্রায় অচৈতন্য দেহ মেলে শালিমারের ৯ নম্বর পিটিআর সাইডিং-এ। এলাকার বাসিন্দারা তাঁকে একটি টোটো করে হাওড়া জেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে ওই যুবকের মৃত্যু হয়। অসমিয়া ওই যুবকের রহস্য-মৃত্যু ঘিরে তোলপাড় পড়ে যায় হাওড়ায়।
এ দিন শিবপুর বাজারের কাছে রাজনারায়ণ রায়চৌধুরী ঘাট রোডে যে মাছ-ভাতের হোটেলে ওই যুবককে কাজে লাগানো হয়েছিল সেই হোটেলের মালিক বিজয় গুপ্ত বলেন, ‘‘ছেলেটি আমার কাছে এসে কাজ চেয়েছিল। আমারও হোটেলে লোকজন কম। আমি ওই যুবককে ২০০ টাকা রোজে রেখে দিই।’’
বিজয় জানান, তিনি ওই যুবককে বিশ্রাম নিতে বলে নিজে কাজ করছিলেন। কিন্তু মিনিট কুড়ির মধ্যে কোমর থেকে প্যান্ট নামিয়ে ‘মর গ্যয়া, মর গ্যয়া’ বলে ফোরশোর রোডের দিকে দৌড়তে শুরু করেন ওই যুবক। বিজয় বলেন, ‘‘এলাকার লোকজনের থেকে পরে জানতে পারি, ওর পেট কাটা ছিল। নাড়িভুঁড়ি সব বেরিয়ে এসেছিল।’’
পুলিশ জানায়, রাস্তার সিসি ক্যামেরা থেকে দেখা গিয়েছে রাজনারায়ণ রায়চৌধুরী ঘাট রোড থেকে শালিমার পিটিআর সাইড পর্যন্ত প্রায় দু’কিলোমিটার রাস্তা দৌড়ে আসতে গিয়ে বারবার রাস্তায় পড়ে যান ওই যুবক। শেষে ৯ নম্বর পিটিআর সাইডিং-এ পড়ে গিয়ে আর উঠতে পারেননি।
ওই ৯ নম্বর পিটিআর সাইডিংয়ে যিনি ওই গুরুতর জখম যুবককে তুলে নিয়ে হাসপাতালে যান সেই রুনা সিংহ বলেন, ‘‘ওকে আমরা জিজ্ঞাসা করেছিলাম কে মারল। উত্তরে কোনও রকমে জানিয়েছিল, ‘ছেলেরা মেরেছে।’ কিন্তু কারও নাম জানাতে পারেননি।’’
কিন্তু কে বা কারা ওই যুবককে পেটে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপালো বা ওই যুবক বেঙ্গালুরুর টিকিট কেটে কেন হাওড়ায় নেমেছিলেন সে প্রশ্নের উত্তর রাত পর্যন্ত মেলেনি। হাওড়া সিটি পুলিশের ডিসি (দক্ষিণ) স্বাতী ভাঙালিয়া বলেন, ‘‘কী ভাবে ঘটনাটি ঘটেছে তা এখনও পরিষ্কার হয়নি। তদন্ত চলছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy