ক্ষতি: শিবপুর জেটিঘাটের হাল এমনই। নিজস্ব চিত্র
নদীর উপরে জেটি বানাতে খরচ হল কোটি কোটি টাকা। কিন্তু সব টাকাই কার্যত জলে গেল!
পরপর দু’বার জেটি বানানো হলেও বানের তোড়ে তা ভেসে গিয়েছে। আর তৃতীয় বার প্রায় এক বছর ধরে জেটি বানানোর পরে জানা গেল গোটা নকশাটাই ভুল। এমনই অবস্থা শিবপুর লঞ্চঘাটের।
রাজ্যের প্রধান প্রশাসনিক দফতর নবান্ন-তে উঠে যাওয়ার পরে জলপথে যোগাযোগের উন্নতির জন্য গঙ্গার ফেরিঘাটগুলি সংস্কারের নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই মতো বছর তিন বছর আগে সেচ দফতর প্রায় এক কোটি টাকা ব্যয়ে শিবপুর ফেরিঘাটের সংস্কার করেছিল। কিন্তু গত তিন বছরের মধ্যে বানের ধাক্কায় দু’বার জেটিটি ভেঙে পড়ে। শেষ ঘটনাটি ঘটে ২০১৬ সালের ৭ এপ্রিল। কোটালের বানে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হয় লঞ্চঘাট। লোহার শিকল ছিঁড়ে ভেসে যায় পন্টুন ও গ্যাংওয়ে (জেটির হাঁটাচলার রাস্তা)। সে দিন থেকেই বন্ধ হয়ে যায় শিবপুর থেকে চাঁদপাল ঘাটে লঞ্চ চলাচল। ফলে তীব্র সমস্যায় পড়েন নিত্যযাত্রীরা।
শিবপুর লঞ্চঘাট দিয়ে মূলত হুগলি নদী জলপথ পরিবহণ সমবায় সমিতির লঞ্চ চলাচল করে। জেটিটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বও ওই সংস্থারই। বারবার জেটি ভেঙে যাওয়ায় সংস্থার পক্ষ থেকে শিবপুর লঞ্চঘাটটি পুরো কংক্রিটের করার জন্য আবেদন করা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত রাজ্য পরিবহণ দফতর ভাসমান জেটি করার জন্য হুগলি রিভার ব্রিজ কমিশনার্স বা এইচআরবিসিকে দায়িত্ব দেয়। ওই সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছরের জুলাইয়ে জেটির গ্যাংওয়ে, পন্টুন, নোঙর-সহ ইয়ক স্টেজ (কংক্রিটের সঙ্গে জেটির সংযোগকারী অংশ) মেরামতির জন্য বিভিন্ন সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। ব্যয়-বরাদ্দ ধরা হয় দেড় কোটি টাকা।
এইচআরবিসি সূত্রে খবর, নির্দিষ্ট নকশা মেনেই কাজ প্রায় যখন শেষের দিকে তখন দেখা যায় জেটির গ্যাংওয়ে ও নোঙরের নকটাশাই সম্পূর্ণ ভুল। এক দিকে গ্যাংওয়েটি লম্বায় যেখানে ২৫ মিটার করলেই বানের ধাক্কা এড়ানো যাবে বলে মনে করা হয়েছিল, তা আসলে হবে ৩০ মিটার। অন্য দিকে কোটালের বান সামলাতে মাটিতে যে নোঙরগুলি গাঁথা থাকে সেই নকশাও ভুল হওয়ায় পুরো কাজটি কবে শেষ হবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
যদিও ত্রুটিপূর্ণ নকশার জন্য কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে বলে মানতে রাজি নন এইচআরবিসি-র ভাইস চেয়ারম্যান সাধন বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘নকশার ভুল হয়েছে তা নয়। আসলে নকশা আরও উন্নত করা হচ্ছে। নোঙরের পরিবর্তন করা হচ্ছে। এ জন্য কাজ বন্ধ হয়নি। দিন ১০-১২ মধ্যে সমস্যা মিটে যাবে।’’
তবে শিবপুর লঞ্চঘাটের চিত্রটা এক বছর আগে যেমন ছিল এখনও কার্যত তাই। সমস্ত কাজ বন্ধ। শুধু দু’টি কংক্রিটের পিলার তৈরি হয়েছে। জেটি নির্মাণকারী একটি ঠিকাদার সংস্থার অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার বি কে মিত্র বলেন, ‘‘মূল সমস্যা গ্যাংওয়ের নকশা নিয়ে। এইচআরবিসি এখন বলছে গ্যাংওয়ের নকশা ভুল। আগে ২৫ মিটার হিসাবে তৈরি করা হলেও এখন ৩০ মিটারের গ্যাংওয়ে করতে হবে। তাই কাজ পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’’ ওই ইঞ্জিনিয়ার জানান, পন্টুনের কাজ শেষ হলেও এখনও নোঙরের কাজ আরম্ভ হয়নি কারণ পন্টুন এনে জেটিতে না লাগানো পর্যন্ত তা সম্ভব নয়।
শিবপুর ফেরিঘাট প্যাসেঞ্জার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে দেবু মাইতি বলেন, ‘‘এই গুরুত্বপূর্ণ ঘাটটি এ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে চালু করা হবে বলে পরিবহণ দফতরের তরফে জানানো হয়েছিল। এখন যা অবস্থা তাতে কত দিন পরে শেষ হবে তা বুঝতে পারছি না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy