n ধৃত: আদালতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সুলতা ও নেপালকে। ছবি: দীপঙ্কর দে
প্রেমিককে সঙ্গে নিয়ে স্বামীকে খুনের অভিযোগ উঠল স্ত্রীর বিরুদ্ধে।
মঙ্গলবার রাতে হরিপালের জামাইবাটী এলাকার ব্রাহ্মণপাড়ার বাসিন্দা হারাধন গায়েনকে (৪৯) বাড়ি থেকে কয়েক হাত তফাতে শৌচাগারের পাশের নিকাশি নালায় মুখ গুঁজে পড়ে থাকতে দেখেন দিদি সবিতা মাঝি। প্রায় অচৈতন্য অবস্থায় ছিলেন হারাধন। পড়শিদের ডেকে সবিতা ভাইকে হরিপাল গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন। তখনই দাদার গলায় ফাঁসের দাগ দেখে সবিতার সন্দেহ হয়। তিনি বৌদি সুলতা এবং সুলতার প্রেমিক নেপাল ধারার বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন বুধবার। ওই রাতেই দু’জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
জেলা (গ্রামীণ) পুলিশের এক কর্তার দাবি, ‘‘জেরায় ধৃতেরা তাদের বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক এবং খুনের কথা কবুল করেছে। দু’জনের বিরুদ্ধে খুন ও অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের মামলা রুজু করা হয়েছে।’’
এই ঘটনায় ওই এলাকার অনেকের মনে পড়ে যাচ্ছে ২০১৭ সালের মনুয়া-কাণ্ডের কথা। উত্তর ২৪ পরগনার বারাসতে নিজের ভাড়া বাড়িতে খুন হন মনুয়ার স্বামী অনুপম সিংহ। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, প্রেমিক অজিত রায়কে দিয়ে মনুয়াই খুন করিয়েছে অনুপমকে। ঘটনার বেশ কয়েক দিন পরে বারাসত থানার পুলিশ প্রথমে অজিত, পরে মনুয়া মজুমদারকে গ্রেফতার করে।
হরিপালের ধৃত নেপালও বিবাহিত। তার দুই ছেলে। বড় ছেলে এ বছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে। হারাধন-সুলতার তিন মেয়ে। বড় মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। মেজো মেয়ে হরিপাল কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। ছোট এ বছর উচ্চ মাধ্যমিক দেবে। দু’টি বাড়ি একই মাঠের দু’দিকে। ঘটনার জেরে দুই পরিবারের দুই পরীক্ষার্থী বিপাকে পড়ল বলে মনে করছেন স্থানীয়েরা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আগে হারাধন নালিকুলে একটি মুদির দোকানে কাজ করতেন। সাত মাস আগে কাজ ছেড়ে দেন। নেপাল রাজমিস্ত্রির কাজ করত। হারাধন কাজ ছাড়ায় সে তাকে নিজের সঙ্গে কাজে নেয়। হারধানের বাড়িতে নেপালের নিয়মিত যাতায়াত ছিল। সেই সূত্রেই সুলতার সঙ্গে নেপালের বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক গড়ে ওঠে। স্ত্রীর ওই সম্পর্কের কথা জানতে পেরে প্রতিবাদ করতেন হারাধন। এ নিয়ে দম্পতির মধ্যে মাঝেমধ্যেই অশান্তি হত।
তদন্তকারীদের দাবি, জেরায় ধৃতেরা জানিয়েছে, অশান্তি থেকে মুক্তি পেতে হারাধনকে সরিয়ে দেওয়ার ছক কষে দু’জনে। মঙ্গলবার রাত ৭টা নাগাদ গলায় শাড়ির ছেঁড়া পাড় দিয়ে ফাঁস দিয়ে হারাধনকে শ্বাসরোধ করে তারা ওই শৌচাগারের পাশে খুন করে। বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত পুলিশ অবশ্য খুনে ব্যবহৃত ওই কাপড়ের টুকরো উদ্ধার করতে পারেনি। ধৃতদের এ দিন চন্দননগর আদালতে হাজির করানো হয়। নেপালকে চার দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক। সুলতার ১৪ দিনের জেল হেফাজত হয়।
নিহতের দিদি সবিতা ওই বাড়িতেই থাকেন। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘অনেক দিন ধরেই নেপালের আচরণ সন্দেহজনক ঠেকছিল। দাদা ওদের সম্পর্কের কথা ধরতে পেরেছিল। তাই ওরা দাদাকে সরিয়ে দিল।’’ স্বামী খুনের ঘটনায় ধৃত, এ কথা মানতে পারছেন না নেপালের স্ত্রী সর্বাণী। তাঁর দাবি, ‘‘মঙ্গলবার হারাধনের কাজের টাকা ওঁর স্ত্রীর হাতে দিয়ে রাত ৭ নাগাদ ও বাড়ি ফিরে আসে। আর পাঁচটা দিনের মতোই সকলের সঙ্গে কথাবার্তা বলে, খাওয়া-দাওয়া করে। রাতে ঘুমিয়েও পড়ে। পুলিশ ধরে নিয়ে যাওয়ার পরে শুনছি, ও নাকি হারাধনকে খুন করেছে! ও এ ধরনের কাজ করতে পারে না। ওকে ফাঁসানো হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy