Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
West Bengal Lockdown

হোয়াটসঅ্যাপে জনতা-পুলিশ জোট হাওড়ার ‘লাল দুর্গে’

শিবপুর, হাওড়া ময়দান, টিকিয়াপাড়া ও সালকিয়াকে ‘রেড স্টার জ়োন’ হিসাবে ঘোষণা করার পরেই শনিবার থেকে ওই এলাকাগুলিকে সম্পূর্ণ লকডাউন করে দেয় পুলিশ।

অভিবাদন: এলাকায় টহলরত পুলিশবাহিনীকে দেখে হাততালি। রবিবার, সালকিয়ায়। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

অভিবাদন: এলাকায় টহলরত পুলিশবাহিনীকে দেখে হাততালি। রবিবার, সালকিয়ায়। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

দেবাশিস দাশ
শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০২০ ০৫:২৮
Share: Save:

বাসিন্দাদের এককাট্টা করে করোনার সঙ্গে লড়তে এ বার মোবাইল প্রযুক্তির সাহায্য নিল হাওড়া সিটি পুলিশ। ‘রেড স্টার জ়োন’ এলাকায় প্রতিটি পরিবারকে নিয়ে তৈরি করা হচ্ছে হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপ। প্রাথমিক ভাবে মালিপাঁচঘরা থানা এলাকার ছয়টি ওয়ার্ডের প্রায় এক হাজার বাসিন্দাকে নিয়ে এই গ্রুপ করা হলেও করোনার সংক্রমণ যে সব জায়গায় বাড়ছে, এমনই থানা এলাকাগুলিতে এটিকে মডেল হিসাবে ব্যবহার করা হবে।

শিবপুর, হাওড়া ময়দান, টিকিয়াপাড়া ও সালকিয়াকে ‘রেড স্টার জ়োন’ হিসাবে ঘোষণা করার পরেই শনিবার থেকে ওই এলাকাগুলিকে সম্পূর্ণ লকডাউন করে দেয় পুলিশ। মানুষকে কেনাকাটা করতে যাতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে বাজারে যেতে না হয়, সে জন্য সালকিয়া এলাকায় আগে থেকেই হোম ডেলিভারি চালু করেছিল হাওড়া পুরসভা ও পুলিশ। এমনকি ট্রলি ভ্যানে করে বাড়িতে বাড়িতে বাজার পৌঁছে দেওয়ারও ব্যবস্থা শুরু হয়েছিল।

এর থেকে এক ধাপ উঠে মানুষের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনের জন্য উদ্যোগী হন খোদ পুলিশ কমিশনার কুণাল আগরওয়াল। তাঁর নির্দেশে ‘রেড স্টার জ়োন’ থানা এলাকার সমস্ত পরিবারের দৈনন্দিন খবরাখবর নেওয়া ও তাঁদের সরাসরি সাহায্য পৌঁছতে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেন।

আরও পড়ুন: আজ থেকে কিছু ছাড়, তবে হটস্পটে কড়া নিয়মে সিল বহু পাড়া

পুলিশ কমিশনারের কথায়, ‘‘মানুষের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের জন্য এই গ্রুপ তৈরির পরিকল্পনা। প্রথমে মালিপাঁচঘরা থানার ওসিকে দায়িত্ব দেওয়া হয় সালকিয়া এলাকার সমস্ত পরিবারের এক জন প্রতিনিধিকে নিয়ে এই গ্রুপ তৈরি করতে। তিনি দু’দিনের মধ্যে প্রায় এক হাজার পরিবার ক্লাব, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রতিনিধিদের নিয়ে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ তৈরি করেছেন।’’

পুলিশ কমিশনার জানান, অনেক বাড়িতেই বয়স্ক মানুষ আছেন। তাঁদের ওষুধ, বাজার, মুদির জিনিস সবই প্রয়োজন। এই সব প্রয়োজনের কথা ওই গ্রুপে লিখলেই সমস্ত কিছু পৌঁছে দেবে পুলিশ। সালকিয়া এলাকায় করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার পর থেকেই স্থানীয় থানার ভূমিকায় খুশি এলাকার বাসিন্দারা। সালকিয়ার বাসিন্দা শমিত ঘোষ বলেন, ‘‘করোনা নিয়ে ব্যাপক প্রচার থেকে শুরু করে বাসিন্দাদের পাশে দাঁড়ানো, সব বিষয়েই পুলিশের ভূমিকা সত্যিই প্রশংসা করার মতো।’’

আরও পড়ুন: ড্রোনে ছবি তুলে চিহ্নিত করে গ্রেফতার হাওড়ায়

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই গ্রুপ তৈরি করার আরও একটি অন্যতম কারণ হল এলাকার উপরে নজরদারি। কোথায় মানুষের জমায়েত বাড়ছে, কারা কোথায় আড্ডা মারছেন, তা সরাসরি পুলিশ ওই গ্রুপের মাধ্যমে জেনে যাবে। লকডাউন অমান্য করলেই তখন আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে পুলিশ।

কিন্তু প্রশ্ন হল কী ভাবে এত মানুষকে এক গ্রুপে আনা হচ্ছে?

হাওড়া সিটি পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বিভিন্ন ওয়ার্ডে গ্রুপ অ্যাডমিন করা হচ্ছে এক জন করে। তাঁরাই তাঁর এলাকার বাসিন্দাদের নম্বর জোগাড় করে গ্রুপে যোগ করছেন। এই দুঃসময়ে পুলিশের এই মানবিক আচরণে এলাকার বাসিন্দারা যে অনেকটাই চিন্তামুক্ত তা রবিবার দুপুরে সালকিয়ায় পুলিশবাহিনী যখন রুটমার্চ করছিল তখনই বোঝা গিয়েছে।

আশপাশের বাড়ির ছাদে, বারান্দায় দাঁড়িয়ে করতালি দিয়ে পুলিশ বাহিনীকে অভিবাদন জানিয়েছেন বাসিন্দারা। কেউ কেউ গেয়ে উঠেছেন ‘উই শ্যাল ওভারকাম।’

শহরের এক প্রান্তে মানুষ যখন এ ভাবে পুলিশের পাশে দাঁড়াচ্ছেন, তখন অন্য প্রান্তে মাস্ক না পরে বাজারে আসার বিরোধিতা করায় এক মহিলা সিভিক ভলান্টিয়ারকে চড়-থাপ্পড় মারার অভিযোগ উঠল এক মহিলার বিরুদ্ধে। পুলিশ জানিয়েছে, রবিবার সকালে এক মহিলা মাস্ক ছাড়া বাজারে এলে ওই মহিলা সিভিক ভলান্টিয়ার তাঁকে বাধা দেন। তখন ওই মহিলা ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁকে চড়-থাপ্পড় মারতে শুরু করেন। পুলিশ সরিতা মাইতি নামে কালীবাবুর বাজার এলাকার বাসিন্দা ওই মহিলাকে গ্রেফতার করেছে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy