ধৃত দুষ্কৃতী কমল (বাঁদিকে) ও চ্যাংডুয়া (ডানদিকে)।
সাম্প্রতিক কিছু ঘটনায় হুগলি শিল্পাঞ্চলে দুষ্কৃতী-দৌরাত্ম্য নিয়ে ফের অভিযোগ উঠছিল। পুলিশের ভূমিকাও প্রশ্নের মুখে পড়ে। দু’দিনের ব্যবধানে বড় সাফল্য পেল চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেট। ধরা পড়ল দুই দাগি দুষ্কৃতী। ভদ্রেশ্বরের শেখ শামিম ওরফে চ্যাংড়ুয়া এবং চুঁচুড়ার রবীন্দ্রনগরের কমলেশ হালদার ওরফে কমল। রবীন্দ্রনগরের ‘ত্রাস’, বর্তমানে জেলবন্দি টোটন বিশ্বাসের অস্ত্রভান্ডার কমল সামলাত বলে পুলিশের দাবি।
দু’জনের মধ্যে অপরাধের পাল্লা ভারী চ্যাংড়ুয়ার। তার বিরুদ্ধে খুন, ডাকাতি, ছিনতাই, অপহরণ, তোলাবাজি-সহ নানা অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে হুগলি, হাওড়া, দুই ২৪ পরগনা-সহ বিভিন্ন জেলার পুলিশের খাতায়।
পুলিশ জানিয়েছে, শুক্রবার মাদক পাচার করতে সে ভদ্রেশ্বর স্টেশন সংলগ্ন খুঁড়িগাছিতে আসে চাঁপদানির নুড়ি লেনের বাসিন্দা ওই দুষ্কৃতী। খবর পেয়ে ভদ্রেশ্বর থানার আইসি কৌশিক বন্দ্যোপাধ্যায় বাহিনী নিয়ে এলাকা ঘিরে ফেলে তাকে ধরেন। তার কাছ থেকে চার লিটার তরল মাদক বাজেয়াপ্ত করা হয়। শনিবার তাকে চুঁচুড়া আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক ১৪ দিন জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
দীর্ঘদিন হাজতবাসের পরে জামিন পেয়ে কিছু দিন আগে চ্যাংড়ুয়া এলাকায় ফেরে। গত ১৬ অক্টোবর চাঁপদানির নুড়ি লেনের এক ব্যবসায়ীকে তাঁর এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে অপহরণের অভিযোগ ওঠে ওই দুষ্কৃতীর বিরুদ্ধে। কয়েক দিন পরে ব্যবসায়ী ফিরে আসেন। তবে দুষ্কৃতীরা তাঁকে কোথায় নিয়ে গিয়েছিল, তা জানাতে পারেননি। পুলিশের কাছে তিনি দাবি করেন, তাঁকে চোখ বেঁধে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। পরে কলকাতার কোনও এক জায়গায় ছেড়ে দিয়ে যাওয়া হয়।
ওই ঘটনায় পুলিশ চ্যাংড়ুয়াকে খুঁজছিল। তাদের দাবি, সে ভিন্ রাজ্যে গা-ঢাকা দিয়েছিল। সম্প্রতি ভিন্ রাজ্য থেকে ফিরে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিংয়ে গোপন ডেরায় থাকছিল।
পুলিশ সূত্রের খবর, ২০০৪ সালে চাঁপদানিতে ডাকাতি করতে জড়ো হয়েছিল চ্যাংড়ুয়া-বাহিনী। ধরতে গেলে তারা পুলিশের উপরে বোমাবাজি করে। বছর কয়েক আগে চ্যাংড়ুয়া শাগরেদদের সঙ্গে মোটরবাইকে চুঁচুড়ার দিকে যাচ্ছিল। বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর দুই দুষ্কৃতী তাদের দেখে পুলিশে খবর দিতে তালডাঙার কাছে একটি টেলিফোন বুথে ঢোকে। চ্যাংড়ুয়া-বাহিনী ভরসন্ধ্যায় সেখানে ঢুকে ওই দু’জনকে খুন করে পালায় বলে অভিযোগ।
বছর খানেক আগে রবীন্দ্রনগরের ‘ত্রাস’ টোটনকে গ্রেফতার করার পরে তার জেরায় অস্ত্রভান্ডার দেখে চমকে উঠেছিলেন দুঁদে পুলিশ অফিসাররাও। এক পুলিশকর্তার কথায়, ‘‘টোটনের গোলবারুদের আস্তানা রীতিমতো চোখ টাটানোর মতো ছিল। একাধিক কার্বাইন-সহ প্রচুর আগ্নেয়াস্ত্র, কয়েকশো রাউন্ড গুলি ওই ডেরা থেকে উদ্ধার হয়। সে সবের হিসেব রাখত কমল।’’
টোটন ধরা পড়ার পরে সেই কমল বাংলাদেশে পালিয়েছিল। সম্প্রতি ফেরে। গত ৩ নভেম্বর গাঁজা-সহ তাকে গ্রেফতার করা হয়। চুঁচুড়া আদালত তাকে জেল হেফাজতে পাঠায়। শুক্রবার ফের আদালতে তোলা হলে বিচারক কমলকে চার দিন পুলিশ হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার হুমায়ুন কবীর জানান, ধৃতকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ওই দলের আরও তথ্য এবং আরও অস্ত্রের খোঁজ পাওয়ার চেষ্টা করা হবে। গত এক বছরে টোটন-সহ রবীন্দ্রনগরের ত্রিশেরও বেশি দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
পুলিশের দাবি, রবীন্দ্রনগরে দুষ্কৃতীদের তোলাবাজি, ধমক-চমকে ইতি পড়েছে। তবে পুলিশের নজরদারি চলছে। সাধারণ মানুষও চাইছেন, দুষ্কতীদের সমান্তরাল প্রশাসন চালানোর দিন আর যেন না ফিরে না আসে। স্থানীয় এক প্রৌঢ়ের কথায়, ‘‘দিনের পর দিন রবীন্দ্রনগর যেন বোমা-গুলি, খুনখারাপির জায়গা হয়ে গিয়েছিল। এখন অনেকটা শান্তি ফিরেছে। তবে পুরনো দিন ফিরে আসবে কিনা, তা নিয়ে ভয় লাগে বৈকি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy