Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
হাওড়া-খড়্গপুর শাখায় ভোগান্তি যাত্রীদের

প্রতিদিনই ট্রেন ‘লেট’

দক্ষিণ-পূর্ব রেলের হাওড়া-খড়্গপুর শাখায় প্রতিদিন ৭৭ জোড়া লোকাল ট্রেন চলে। রয়েছে ভদ্রক প্যাসেঞ্জার, আদ্রা সুপার পাস্ট প্যাসেঞ্জারের মতো ট্রেনও। কিন্তু বেশিরভাগই সময়ে চলে না। বছরখানেক ধরে এই পথ নিত্যযাত্রীদের কাছে রীতিমতো আতঙ্কের হয়েছে উঠেছে।

প্রতিবাদ: বাগনান স্টেশনে বিক্ষোভকারীরা। নিজস্ব চিত্র

প্রতিবাদ: বাগনান স্টেশনে বিক্ষোভকারীরা। নিজস্ব চিত্র

নুরুল আবসার
উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০২:৪০
Share: Save:

নিয়মমতো প্রতিটি স্টেশনে রয়েছে ‘সময়-সারণি’র বোর্ড। রয়েছে টাইম-টেবিলও। কিন্তু সেটা নামেই।

দক্ষিণ-পূর্ব রেলের হাওড়া-খড়্গপুর শাখায় প্রতিদিন ৭৭ জোড়া লোকাল ট্রেন চলে। রয়েছে ভদ্রক প্যাসেঞ্জার, আদ্রা সুপার পাস্ট প্যাসেঞ্জারের মতো ট্রেনও। কিন্তু বেশিরভাগই সময়ে চলে না। বছরখানেক ধরে এই পথ নিত্যযাত্রীদের কাছে রীতিমতো আতঙ্কের হয়েছে উঠেছে। কখন তাঁরা গন্তব্যে পৌঁছবেন, তার কোনও ঠিক-ঠিকানা নেই। মাসখানেক ধরে ১২ কামরার লোকালও কমে যাওয়ায় ভোগান্তি আরও বেড়েছে। সকাল-সন্ধ্যায় প্রতিটি ট্রেনেই বাদুড়ঝোলা ভিড় হচ্ছে। সমস্যা মেটানোর দাবিতে সোমবারই বাগনান স্টেশনে অবস্থান-বিক্ষোভ করে দক্ষিণ-পূর্ব রেলওয়ে প্যাসেঞ্জার ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন (হাওড়া-জকপুর)।

ট্রেনের দেরির বহর কতটা?

গত ১৩ ফেব্রুয়ারি সন্ধে ৬টা ২৫ মিনিটের আপ বাগনান লোকাল বাগনান স্টেশনে ঢোকে ৬টা ৫৩ মিনিটে। তার পরের দিন ঢোকে ৬টা ৫৮ মিনিটে। তার পরের দিন ৬টা ৫২ মিনিটে। সন্ধে ৬টা ৪০ মিনিটে যে ডাউন বাগনান লোকাল ছাড়ার কথা, তা গত কয়েকদিনে কখনও ছেড়েছে সাড়ে ৭টায়। কখনও ৭টা ৪০-এ বা তারও পরে।

এটা মাত্র দু’টি ট্রেনের দেরির উদাহরণ। নিত্যযাত্রীদের দাবি, যে পাঁশকুড়া লোকাল সকাল ৮টা ১৬ মিনিটে ঢোকার কথা, সেটি প্রায়ই ঢুকছে ৮টা ৪৫ মিনিটে। ওই স্টেশন থেকে সকাল ৮টা ৯ মিনিটে যে পাঁশকুড়া লোকাল হাওড়ার উদ্দেশে ছাড়ার কথা, সেই ট্রেনটি ছাড়ছে আরও দশ মিনিট পরে। এমন উদাহরণ আরও রয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব রেলওয়ে প্যাসেঞ্জার ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন (হাওড়া-জকপুর)-এর পক্ষে অজয় দলুই, অরূপ সাহাদের দাবি, সময়ে ট্রেন চলুক। ১২ কামরার লোকালের সংখ্যা বাড়ানো হোক।

এই শাখায় হাওড়া থেকে মেচেদা, কোলাঘাট, দেউলটি, বাগনান, উলুবেড়িয়া, মেদিনীপুর, খড়্গপুর, পাঁশকুড়া, হলদিয়া পর্যন্ত ট্রেন চলাচল করে। প্যাসেঞ্জার ট্রেনগুলিতেও নিত্যযাত্রীরা যাতায়াত করেন। রেলের হিসেবেই, এই শাখায় গড়ে সাড়ে ৮ লক্ষ যাত্রী প্রতিদিন ট্রেনে চড়েন। কিন্তু দেরির ফলে একটি ট্রেনকে কার্যত দু’টি ট্রেনের যাত্রী বহন করতে হয়। যাত্রীদের অভিযোগ, দেরির ফলে তাঁরা কাজে যেতে বা বাড়ি ফিরতে অসুবিধায় পড়েন। মনোজ প্রধান নামে বাগনানের এক নিত্যযাত্রীর প্রতিদিনই ফিরতে রাত হয়। তাঁর ক্ষোভ, ‘‘রাতের ট্রেনও এত দেরিতে বাগনান স্টেশনে ঢোকে যে অনেক সময়েই ফেরার অটো পাই না। বেশি টাকা দিয়ে অটো রিজার্ভ করতে হয়।’’

সমস্যাটা কোথায়?

সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গিয়েছে, সমস্যাটি শুরু হয় সাঁতরাগাছি থেকে। হাওড়া থেকে আপ ট্রেনগুলি ঠিক সময়ে ছাড়লেও সাঁতরাগাছি পর্যন্ত আসতে অনেকটা সময় লাগে। সেই দেরি পরে আর পূরণ করা যায় না। তাই আপের প্রান্তিক স্টেশনে কোনও ট্রেন দেরিতে পৌঁছলে ডাউন ট্রেনেরও দেরি হয়। কিছু ট্রেনের আবার সাঁতরাগাছিতেই যাত্রাবিরতি ঘটানো হয়। কিন্তু কেন?

হাওড়া-খড়্গপুর শাখার সিনিয়র (ডিভিশনাল) কমার্শিয়াল ম্যানেজার কুলদীপ তিওয়ারি জানান, হাওড়া থেকে সাঁতরাগাছির মধ্যে রেললাইনের বিভিন্ন ক্রসিংয়ে কিছু সমস্যা রয়েছে। সে জন্যই ট্রেন দেরিতে চলছে। সমস্যা মেটানো হচ্ছে। তবে, সমস্যা পুরোপুরি মেটার জন্য যাত্রীদের আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে বলে জানিয়েছেন দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সঞ্জয় ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘সাঁতরাগাছিতে রেলের টার্মিনাস তৈরির কাজ শেষ হয়ে গেলেই দেরিতে ট্রেন চলার সমস্যা মিটে যাবে।’’

তবে, ১২ কামরার পুরনো লোকালগুলি আর চালানো হবে না বলে সঞ্জয়বাবু জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘কয়েকটি নতুন ১২ কামরার ট্রেনের জন্য রেল বোর্ডের কাছে আবেদন করা হয়েছিল। ছ’টি এসে গিয়েছে। আরও কয়েকটি পর্যায়ক্রমে এসে যাবে বলে রেল বোর্ড জানিয়েছে।’’

নিশ্চিন্তে কবে তাঁরা গন্তব্যে পৌঁছবেন, দিন গুনছেন নিত্যযাত্রীরা।

অন্য বিষয়গুলি:

Train Late Departure Railway Station
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE