Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪

ডিজে বাজিয়ে কালো তালিকায় তিন পুজো

হুগলি জেলায় বেশি কালীপুজো হয় পান্ডুয়ায়। পুজোর অনুমোদন নেওয়ার সময়ে সব পুজো কমিটিই ডিজে না-বাজানোর লিখিত অঙ্গীকার করেছিল এখানকার কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে। পুজোর তিন দিনে ডিজে বাজেওনি। কিন্তু বুধবার বিসর্জনের দিনে ছবিটা বদলে গেল।

নিয়ম-ভেঙে: ডিজে বাজিয়ে বিসর্জন পান্ডুয়ায়। নিজস্ব চিত্র

নিয়ম-ভেঙে: ডিজে বাজিয়ে বিসর্জন পান্ডুয়ায়। নিজস্ব চিত্র

সুশান্ত সরকার ও সুব্রত জানা
পান্ডুয়া ও উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০১৯ ০০:০২
Share: Save:

শত নিষেধেও কর্ণপাত করলেন না কিছু কালীপুজো কমিটির উদ্যোক্তারা। বিসর্জনে হুগলির পান্ডুয়া এবং হাওড়ার উলুবেড়িয়ায় ডিজে-র দাপট রয়েই গেল। আশার কথা একটাই, পান্ডুয়ায় যে সব পুজো উদ্যোক্তারা বৃহস্পতিবার ডিজে বাজিয়েছেন, তাঁদের আগামী তিন বছর পুজোর অনুমতি দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছে সেখানকার কেন্দ্রীয় কালীপুজো কমিটি। উলুবেড়িয়াতে তদন্তে নামছে পুলিশ।

হুগলি জেলায় বেশি কালীপুজো হয় পান্ডুয়ায়। পুজোর অনুমোদন নেওয়ার সময়ে সব পুজো কমিটিই ডিজে না-বাজানোর লিখিত অঙ্গীকার করেছিল এখানকার কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে। পুজোর তিন দিনে ডিজে বাজেওনি। কিন্তু বুধবার বিসর্জনের দিনে ছবিটা বদলে গেল। সন্ধ্যা থেকে চড়া সুরে ডিজে বাজিয়ে জিটি রোড ধরে বিসর্জনের শোভাযাত্রায় যেতে দেখা গেল কয়েকটি পুজো কমিটিকে। রাস্তায় প্রচুর মানুষ ছিলেন। ডিজে-র শব্দে তাঁদের প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়। এলাকার প্রবীণ বাসিন্দারাও নাজেহাল হয়েছেন কানফাটা শব্দে। কেন্দ্রীয় পুজো কমিটি মানছে, বিসর্জনের অনুমতিপ্রাপ্ত ২৬টি পুজোর মধ্যে তিনটির উদ্যোক্তারা ডিজে বাজিয়েছেন।

কেন বন্ধ করা গেল না ডিজে?

পান্ডুয়া কেন্দ্রীয় কালীপুজো কমিটির সভাপতি তথা পান্ডুয়া পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি সঞ্জয় ঘোষ বলেন, ‘‘প্রচুর দর্শনার্থী থাকায় পুলিশকে বলে ডিজে বন্ধ করতে পারিনি। তা হলে অশান্তি হতো। তবে, যে তিনটি পুজো কমিটি ডিজে বাজিয়েছে, তারা আগামী তিন বছর পুজোর অনুমতি পাবে না। আমরাই সব কমিটির হয়ে দমকল, পুলিশ এবং ব্লক প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে থাকি। শীঘ্রই সব পুজো কমিটিকে নিয়ে বৈঠক ডাকব।’’

ওই কেন্দ্রীয় কমিটির এই মনোভাবের প্রশংসা করেছেন পরিবেশবিদরা। পরিবেশবিদ বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ডিজে বাজানোয় কোনও পুজোকে কেন্দ্রীয় কমিটি কালো তালিকাভুক্ত করলে তা অত্যন্ত সদর্থক পদক্ষেপ হবে। পরিবেশের জন্য এই ভাবনা ভীষণ উপযোগী। এ রাজ্যে আগে এমনটা হয়েছে বলে মনে হয় না। এটা উদাহরণ হতে পারে। পুলিশেরও উচিত ওই সব পুজো কমিটির সভাপতি-সম্পাদকের বিরুদ্ধে পরিবেশ আইনে ব্যবস্থা নেওয়া।’’

ডিজে পুরোপুরি রোখা না-গেলেও এ বার পান্ডুয়ার কালীপুজোর বিসর্জনে জলদূষণ রুখতে সক্ষম হয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটি। বুধবার সন্ধ্যা থেকে শহরের দাঁইপুকুরে সব প্রতিমা নিরঞ্জন হয়েছে ক্রেনে। বিসর্জন পর্ব চলে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত। তারপরেই কাঠামো তোলার কাজও শুরু হয়ে যায়। বলাগড়ের গুপ্তিপাড়াতেও গঙ্গার ঘাটে ক্রেনের মাধ্যমে প্রতিমা নিরঞ্জন হয়। বিশ্বজিৎবাবু এ জন্য ওই দু’জায়গার উদ্যোক্তাদের ‘পরিবেশ মেলা’য় ডেকে সম্মানিত করা হবে। ওঁরা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

গ্রামীণ হাওড়ার কালীপুজোর দিনে শব্দাসুরের উপদ্রব তেমন ছিল না। কিন্তু বিসর্জনে ডিজে-র সঙ্গে ফিরে এসেছে শব্দবাজিও। বৃহস্পতিবার উলুবেড়িয়া, শ্যামপুর, বাগনান, আমতা, আন্দুল ও ডোমজুড় এলাকায় বেশ কিছু ক্লাব ডিজে বাজিয়ে বিসর্জনের শোভাযাত্রা করে বলে অভিযোগ। সাধারণ মানুষের অভিযোগ, পুলিশের সামনেই ডিজে বেজেছে। শ্যামপুরের বৃদ্ধ পাঁচকড়ি সাঁতরা বলেন, ‘‘ডিজে বাজলেও হামলার ভয়ে প্রতিবাদ করতে পারিনি। ভয়েই পুলিশকেও জানাতে পারেনি।’’ একই রকম আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন আরও অনেকে।

পুলিশের সামনে ডিজে বাজার অভিযোগ মানেননি হাওড়া (গ্রামীণ) জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আশিস মৌর্য। তাঁর দাবি, রাস্তায় পুলিশের টহল ছিল। ডিজে বাজানোর খবর পেলেই সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ করা হয়েছে। ডিজে না বাজানোর জন্য সব পুজো কমিটির কাছ থকে লিখিত অঙ্গীকার নেওয়া হয়েছিল। এর পরেও কোথাও ডিজে বেজেছে কিনা, পুলিশ তদন্ত করবে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy