বর্ষার আগে নিকাশি ব্যবস্থার সংস্কারের জন্য বরাদ্দ হয়েছিল প্রায় ৯ কোটি টাকা। কিন্তু বর্ষা প্রায় দোড়গোড়ায় এসে গেলেও এখনও পর্যন্ত হাওড়া পুরসভা এলাকায় নিকাশি সংস্কারের কাজ ঠিক ভাবে শুরুই হল না বলে অভিযোগ উঠছে। যার ফলে আসন্ন বর্ষায় হাওড়ার নিচু এলাকাগুলি বানভাসি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন নিকাশি দফতরের একাংশ।
ওই দফতরের আধিকারিকদের একাংশের দাবি, তিন বছর আগের মতো এ বারেও ফের সামান্য বৃষ্টিতে জল জমার আশঙ্কা রয়েছে অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকাগুলিতে। জল জমতে পারে উত্তর এবং মধ্য হাওড়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে। আর তার কারণ হিসেবে পুর নিকাশি দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ারদের একাংশের ‘ব্যর্থতা’ ও ‘স্বেচ্ছাচার’কে দায়ী করছেন পুর কর্তাদের একাংশ। তবে এ নিয়ে হাওড়া পুর কমিশনার এবং প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান বিজিন কৃষ্ণ বলছেন, ‘‘কাজ হয়েছে কি না, তা সরেজমিনে দেখব। কাজ না হলে সংশ্লিষ্ট ইঞ্জিনিয়ার থেকে ঠিকাদার— কাউকেই রেয়াত করা হবে না।’’
বর্ষায় হাওড়ায় জল জমার ইতিহাস নতুন কিছু নয়। পুরসভার ৬৬টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৬টি ওয়ার্ডে প্রতি বর্ষাতেই কমবেশি জল জমে। এই জমা জল ও আবর্জনা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একাধিক বার ক্ষোভ প্রকাশও করেছেন। তবে ২০১৩ সালের শেষ দিকে তৃণমূল পুরবোর্ড দখল করার পরে বর্ষার আগেই নিকাশি সংস্কারের কাজ করায় অনেক জায়গায় জল জমলেও তা দ্রুত নেমে গিয়েছে। যদিও এরই মধ্যে বছর তিনেক আগে দায়সারা ভাবে নর্দমা থেকে পাঁক তোলার কাজ হওয়ায় বর্ষায় নৌকা নামাতে হয়েছিল হাওড়ার কয়েকটি জায়গায়।
পুরকর্তাদের একাংশের আশঙ্কা, এ বারেও সেই একই ছবি ফিরতে চলেছে। পুরসভা সূত্রের খবর, বর্ষার আগে মধ্য হাওড়ার ড্রেনেজ ক্যানেলের পাশে ডাবল ব্যারেল, ড্রেনেজ ক্যানেল খাল, পদ্মপুকুর জলা, ডিভিসি খাল, পচা খাল-সহ নেতাজি সুভাষ রোড থেকে সুরকি কল, জিটি রোডের ওপর পিলখানা, নস্করপাড়া রোড, জিসিআরসি ঘাট রোড, ফোরশোর রোড, হাওড়া জুটমিলের ভিতর থাকা ভূগর্ভস্থ নর্দমা ইত্যাদি থেকে পাঁক তুলে সেগুলির জলধারণ ক্ষমতা বাড়ানো হয়। কিন্তু অভিযোগ, ওই ভূগর্ভস্থ বড় নর্দমা ও নিকাশি নালাগুলি থেকে এখনও ড্রেজ়িং ও পাঁক তোলার কাজ শুরুই হয়নি। অথচ শুধু ডবল ব্যারেল নিকাশি নালা সংস্কারের জন্যেই এক কোটি টাকা খরচ ধরা হয়েছিল। এক সময়ে ওই কাজের দায়িত্বে থাকা পুর ইঞ্জিনিয়ারদের দাবি, ওই গুরুত্বপূর্ণ নিকাশি নালাগুলি থেকে পাঁক না তুললে সেগুলি জলধারণ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। যার ফলে বর্ষায় জমা জলে ভুগতে হয় স্থানীয় বাসিন্দাদের।
হাওড়া পুরসভার এক প্রাক্তন মেয়র পারিষদ বলেন, ‘‘কাজের বরাত দেওয়ার পরে ঠিকাদারদের থেকে মোটা অঙ্কের ঘুষ চাওয়া হচ্ছে। তাই ঠিকাদারেরাও দায়সারা কাজ করছে। পাঁক তোলার নামে টাকার খয়রাতির কাজ চলছে।’’
হাওড়া পুরসভা সূত্রের খবর, বহু বছর ধরে ভূগর্ভস্থ বড় নালা-নর্দমাগুলি থেকে পাঁক না তোলায় তাতে চার-পাঁচ ফুট উঁচু পাঁক জমে গিয়েছে। যা কেটে তুলতে আধুনিক মেশিনের প্রয়োজন। পুরসভার হাতে সেই মেশিন না থাকায় এই পরিস্থিতির পরিবর্তন হচ্ছে না। এ ছাড়া উত্তর হাওড়া-সহ বেলগাছিয়া ভাগাড় এলাকার বৃষ্টির জল যে পুকুরে (অক্সিডেশন পন্ড) গিয়ে পড়ে, সেখান থেকেও পাঁক তোলার কাজ হয়নি। ফলে ওই গুরুত্বপূর্ণ জলাধার উপচে গেলে শহরের জল বেরিয়ে যাওয়ার জায়গা থাকবে না।
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy