Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪

চুরি করে ঝিলে সলিলসমাধি

ঝিলে হাবুডুবু খাচ্ছে এক চোর। আর এক জন ততক্ষণে জলে ভিজে ঝিল লাগোয়া পাঁচিলে উঠে বসে। আর বেশ কিছুটা দূরে পাড়ে দাঁড়ানো লোকজন চিৎকার করে বলছেন, ‘বন্ধুকে তুলে নিয়ে যাও। তোমাদের আমরা কেউ ধরব না।’ কিন্তু গণধোলাই খাওয়ার ভয়ে সে পথে গেল না পাঁচিলে বসে থাকা চোর।

তোলা হচ্ছে সেই যুবকের দেহ। বুধবার। — নিজস্ব চিত্র

তোলা হচ্ছে সেই যুবকের দেহ। বুধবার। — নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০১৬ ০১:৫০
Share: Save:

ঝিলে হাবুডুবু খাচ্ছে এক চোর। আর এক জন ততক্ষণে জলে ভিজে ঝিল লাগোয়া পাঁচিলে উঠে বসে। আর বেশ কিছুটা দূরে পাড়ে দাঁড়ানো লোকজন চিৎকার করে বলছেন, ‘বন্ধুকে তুলে নিয়ে যাও। তোমাদের আমরা কেউ ধরব না।’ কিন্তু গণধোলাই খাওয়ার ভয়ে সে পথে গেল না পাঁচিলে বসে থাকা চোর। সঙ্গীকে হাবুডুবু খেতে দেখেও পাঁচিল টপকে চম্পট দিল সে।

শেষে ডুবেই মৃত্যু হল ওই চোরের। তার দেহ তোলার পরে প্যান্টের পকেট থেকে সোনার গয়না, মোবাইল, টাকা, পিতলের মূর্তি উদ্ধার করল পুলিশ। মঙ্গলবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে বালি পাঠকপাড়া এলাকায়। মৃতের নাম সুজয় বিশ্বাস। বাড়ি ব্যান্ডেলে। তার সঙ্গীকেও বুধবার রাতে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

পুলিশ জানায়, ওই রাতে পাঠক পাড়ার বিনয়-বাদল-দীনেশ নগরের বাসিন্দা সুরজিৎ ধাড়া একটি আওয়াজ শুনে ঘুম থেকে ওঠেন। তাঁর অভিযোগ, তিনি দেখেন লাঠি বাড়িয়ে জানলা দিয়ে টেবিলে রাখা মোবাইল হাতানোর চেষ্টা করছে এক যুবক। চিৎকার করে ওঠেন সুরজিতবাবু। তা শুনে চম্পট দেয় চোরেরা। ততক্ষণে অবশ্য টেবিলের দু’টি মোবাইল চুরি গিয়েছে। চেঁচামেচিতে প্রতিবেশীরাও উঠে পড়ে। সকলে চোর খুঁজতে শুরু করেন। এর মধ্যেই ওই বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে দীপঙ্কর সাহাদের দোতলা বাড়ির কার্নিশে উঠে জানলা দিয়ে কিছু নেওয়ার চেষ্টা করতে থাকে চোরেরা। নীচ থেকে তা দেখতে পান সুরজিতবাবুরা। ফের শুরু হয় চেঁচামেচি। তখনই অন্য বাড়ির ছাদ টপকে চম্পট দেয় চোরেরা। গলির শেষ প্রান্তে ঝিল থাকায় সেখানেই ঝাঁপ দেয় ওই দুই যুবক। দীপঙ্করবাবুদের বাড়ি থেকেও চুরি গিয়েছে টাকা, মোবাইল।

প্রত্যক্ষদর্শী সঞ্জীব সরকার পুলিশকে জানান, ঝিলের পাড়ে গিয়ে দেখা যায় এক যুবক সাঁতরে অপর প্রান্তের পাঁচিলে উঠেছে। আর সুজয় হাঁপিয়ে গিয়ে হাবুডুবু খাচ্ছে। বাঁচানোর জন্য বারবার বলছে পাঁচিলে বসে থাকা সঙ্গীকে। কিন্তু সে নিজে বাঁচার জন্য সে কথায় কান না দিয়ে পালায়। সঞ্জীব বলেন, ‘‘অন্ধকারে দূরে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল না। বারবার পাঁচিলে বসে থাকা যুবককে বলছিলাম বন্ধুকে তুলে নাও।’’

তিনি আরও জানান, বন্ধু চলে যেতেই ডুব দেয় সুজয়। তখন মনে করা হয় সে ডুবসাঁতার দিয়ে বাঁচার চেষ্টা করছে। তাই সকলেই ঝিলের পাড় থেকে সরে দাঁড়ান। কিন্তু বহুক্ষণ হয়ে গেলেও সুজয় আর ওঠেনি। এর পরেই বালি থানায় খবর যায়। ভোরে ডুবুরি বীরেন কর্মকার নেমে তার দেহ তুলে আনেন। তার প্যান্টের পকেটে মেলে চোরাই জিনিস। অন্য দিকে, চোরেরা শেষ যে বাড়িতে গিয়েছিল, সেখানকার রাস্তা থেকে একটি ব্যাগও মিলেছে। তাতে দু’টি হাফ প্যান্ট, টর্চ ও জুতো ছিল। পুলিশ জানায়, প্যান্টের পকেট থেকে রাত ১০টা ২৭ মিনিটে ব্যন্ডেল থেকে বালি আসার একটি টিকিটও মেলে। সেই সূত্র জানা যায় যুবকের পরিচয়। ধরা পড়ে তার সঙ্গীও।

তবে বালির বাসিন্দাদের আক্ষেপ, দিনের আলো থাকলে হয়তো সুজয়কে বাঁচানো যেত।

অন্য বিষয়গুলি:

Thief Drawning
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy