এ ভাবেই বিদ্যুৎ ফিরেছে গ্রামে। নিজস্ব চিত্র
কংক্রিটের খুঁটি ভেঙে গিয়েছে। বিদ্যুতের তার নিয়ে যাওয়ার জন্য বাঁশের খুঁটিই সই! এমন ছবি হাওড়ার ‘দ্বীপাঞ্চল’ নামে পরিচিত আমতা ২ ব্লকের ঘোড়াবেড়িয়া-চিৎনান গ্রাম পঞ্চায়েতে।
ঝড়ে গাছ পড়ে তিন টুকরো হয়ে গিয়েছিল কংক্রিটের বিদ্যুতের খুঁটি। স্থানীয় বাসিন্দারা আমপানের পরের দিনই বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থার কাছে আবেদন করেন, খুঁটি বদলে দিয়ে বিদ্যুতের সংযোগ চালু করে দেওয়ার জন্য। কিন্তু বন্টন সংস্থা থেকে গ্রামবাসীদের সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়, আপাতত খুঁটির জোগান নেই। তাই বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া যাবে না।
উপায় খুঁজে নেন গ্রামের যুবকরাই। দু’টি শক্ত বাঁশ জোগাড় করলেন তাঁরা। কংক্রিটের খুঁটির বদলে নির্দিষ্ট ব্যবধানে পুঁতে দেওয়া হল বাঁশ। মাটিতে পড়ে থাকা বিদ্যুতের তার তুলে নিয়ে বেঁধে দেওয়া হল বাঁশের খুঁটিতে। বণ্টন সংস্থার স্থানীয় কার্যালয়ের সঙ্গে কথা বলে সেই তারে দেওয়ানো হল বিদ্যুৎ সংযোগ। গ্রামে জ্বলল আলো, পাখা। সজল ধারা প্রকল্পের জলের পাম্প চালু হয়ে যাওয়ায় ঘরে ঘরে চলে এল পানীয় জল।
গ্রামবাসীদের দাবি, কংক্রিটের খুঁটি আসতে দেরি হবে শুনেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।গ্রামবাসীদের বক্তব্য, তাঁরা কোনও বেআইনি কাজ করেননি। এটা হুকিং নয় বলে দাবি করে তাঁরা জানান, তিনটি কংক্রিটের খুঁটির মাঝেরটি ভেঙে গিয়েছিল। মাঝের খুঁটির বিকল্প হিসাবেই এই ব্যবস্থা। নিরাপত্তার দিকটিও তাঁরা লক্ষ্য রাখছেন বলে গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন।
হাওড়া গ্রামীণ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহের দায়িত্ব আছে বণ্টন সংস্থার উলুবেড়িয়া, হাওড়া ১ এবং হাওড়া ২ এই তিনটি ডিভিশনের উপরে। তিনটি ডিভিশনেই বিদ্যুৎ সংযোগ ব্যবস্থা তছনছ হয়ে গিয়েছে খবর। সব থেকে বেশি ক্ষতি হয়েছে গাছ পড়ে কংক্রিটের খুঁটি ভেঙে যাওয়ায়। যে সব এলাকায় শুধুমাত্র খুঁটি উপড়ে পড়েছে সেগুলি তুলে আবার পুঁতে দিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। যে সব খুঁটি ভেঙে গিয়েছে সেগুলি বদল করতে কালঘাম ছুটছে। খুঁটির অভাবে কর্মীরা গাছ বা বাঁশের খুঁটির সঙ্গে তার বেঁধে আপাতত বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করে দিচ্ছেন বলে বন্টন সংস্থা সূত্রের খবর।
এই সংস্থার তিনটি ডিভিশনের কর্তাদেরই একাংশ জানিয়েছেন, আগের ব্যবস্থা চালু করতে গেলে অনেক সময় লাগবে। সেই কারণেই আপৎকালীন ব্যবস্থা হিসাবে গাছে বা বাঁশে তার বেঁধে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। পরে সব ঠিক করে দেওয়া হবে। তারগুলি অবশ্য প্লাস্টিকের আস্তরণে ঢাকা। তবে এইভাবেও এখনও পর্যন্ত ৬০ শতাংশের বেশি এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া যায়নি বলে বন্টন সংস্থা সূত্রের খবর।
এ দিকে ট্রান্সফর্মার থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ টানাকে কেন্দ্র করে উলুবেড়িয়ার উত্তর পিরপুরে সোমবার রাতে দুই গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। চার জন গ্রামবাসী আহত হন। কয়েকটি দোকান ভাঙচুর করা হয়। পরে পুলিশ বাহিনী ও র্যাফ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। মঙ্গলবারও এলাকায় পুলিশের টহলদারি ছিল।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, উত্তর পিরপুরে দু’টি ট্রান্সফর্মার আছে। একটি মধ্যপাড়ায়। অন্যটি ভুঁইয়াপাড়ায়। মধ্যপাড়ার ট্রান্সফর্মারটি আমপানে বিগড়ে যাওয়ায় মধ্যপাড়ার বাসিন্দারা ভূঁইয়াপাড়া থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে থাকেন। চাপ নিতে না পেরে ওই ট্রান্সফর্মারটি সোমবার সন্ধ্যায় বিগড়ে যায়। ফলে পুরো এলাকা বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়ে। তা নিয়েই শুরু হয় ঝামেলা।
বিদ্যুৎ না আসায় মঙ্গলবার দুপুরে দীর্ঘক্ষণ উলুবেড়িয়া-শ্যামপুর রোড অবরোধ করেন কালীনগরের বাসিন্দারা। পুলিশ গিয়ে অবরোধ তুলে দেয়। বণ্টন সংস্থার উলুবেড়িয়া ডিভিশন থেকে জানানো হয়, বিদুৎ সংযোগ স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy