অস্বাস্থ্যকর: হাওড়ার টি এল জয়সওয়াল হাসপাতালের একতলায় পরিত্যক্ত একটি ঘরে জমে রয়েছে নোংরা জল। সেখানেই জন্মেছে মশার লার্ভা। (ইনসেটে) ওই হাসপাতাল চত্বরে অপরিষ্কার নালা। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
গোটা উত্তর হাওড়া যখন ডেঙ্গিতে কাঁপছে, তখন ওই রোগের আঁতুড়ঘর হয়ে দাঁড়িয়েছে উত্তর হাওড়ারই টি এল জয়সওয়াল হাসপাতাল।
সরকারি ওই হাসপাতালে রয়েছে ২৬০টি শয্যা। ২৯ জন চিকিৎসক আছেন সেখানে। কিন্তু হাসপাতালের বন্ধ হয়ে যাওয়া পুরনো জরুরি বিভাগের ঘরে জমা জলে মশার লার্ভা থিকথিক করছে। বর্ষার জমা জল তিন মাস পরেও জমে আছে ওষুধ রাখার ঘরের পাশে। যত্রতত্র ছড়িয়ে পড়ে আছে ভাঙাচোরা আসবাব। মরচে ধরা লোহার ফ্রেম পড়ে আছে ওয়ার্ডের পাশে। দুর্গন্ধে ওয়ার্ডে টেকা দায়। পান-গুটখার পিকে পাল্টে গিয়েছে দেওয়ালের রং। একতলা থেকে তিনতলা পর্যন্ত রংচটা দেওয়াল, ফাটল ধরা ছাদ আর দিনের পর দিন পরিষ্কার না হওয়া মেঝে দেখে বোঝার উপায় নেই যে, এটি হাওড়া সদরের একটা গুরুত্বপূর্ণ সরকারি হাসপাতাল।
যে হাসপাতালের এমন অবস্থা, সেখানে যে ডেঙ্গির মশা জন্মাবে, তাতে আর আশ্চর্যের কী! এমনটাই বলছেন চিকিৎসকেরা। অথচ, ওই হাসপাতালেই রোজ গড়ে তিন থেকে চার জন রোগী ভর্তি হচ্ছেন ডেঙ্গিরই চিকিৎসা করাতে। যা গত বছরের তুলনায় প্রায় তিন গুণ। হাসপাতালের তিনতলায় নিজের ঘরে ফুল স্লিভ জামা আর ট্রাউজার্স পরে খাটের উপরে পা তুলে বসেছিলেন হাসপাতালের সুপার সুখেন্দু বিশ্বাস। তিনি বললেন, ‘‘হাসপাতালে ডেঙ্গির মশা থেকে বাঁচতে এই ফুল স্লিভ জামা পরে আছি। আসলে উপরওয়ালার ভরসায় বেঁচে আছি।’’
অথচ, এই হাসপাতালেই নিয়মিত চিকিৎসার জন্য ভর্তি হচ্ছেন ডেঙ্গি রোগীরা। ভর্তি হচ্ছেন প্রসূতি থেকে শিশু ও বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, আগে প্রতি বছরই বর্ষার সময়ে জল জমলে চিকিৎসক ও রোগীদের হাঁটুজল পেরিয়ে হাসপাতালে আসতে হত। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে বিধায়ক তহবিলের টাকায় আশপাশের জমি উঁচু করে বাইরের সৌন্দর্যায়ন করা হয়েছে। তাই বাইরে জল না জমলেও হাসপাতাল ভবনের কোনও সংস্কার না হওয়ায় দুরবস্থা এখন চরমে।
হাসপাতালের পিছন দিকেই পাঁক আর আবর্জনায় ভরা নর্দমা, আগাছার জঙ্গল। সেখানে পড়ে থাকা হাসপাতালেরই নানা বাক্স আর থামোর্কলে জমে আছে জল। তাতে জন্মাচ্ছে মশা। কিন্তু দেখার কেউ নেই। শুধু তা-ই নয়, বাইরের সৌন্দর্যায়নের জন্য হাসপাতালের সামনে একটা ফোয়ারা তৈরি করা হয়েছিল। এখন সেই ফোয়ারা খারাপ হয়ে গিয়েছে। তার ভিতরে জমা জলে ভাসছে চটি, থার্মোকলের বাক্স।
কিন্তু এমন হাল কেন?
হাসপাতালের সুপার বলেন, ‘‘বিষয়টি জেলা স্বাস্থ্য দফতরকে জানানো হয়েছে। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরকেও বারবার চিঠি লেখা হয়েছে। কিন্তু এখনও কিছু হয়নি। টাকা এলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।’’ ওই হাসপাতালের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘গত ২০ বছর ধরে দেখছি, এই হাসপাতালের উন্নয়নের জন্য কয়েক বছর অন্তর অর্থ বরাদ্দের দাবি করা হয়েছে। কিন্তু মেলেনি। অথচ, দিন দিন এই হাসপাতালের সংস্কারের খরচ বেড়েই চলেছে।’’
হাওড়ার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ভবানী দাস বলেন, ‘‘আমরা ওই হাসপাতাল সংস্কারের জন্য একটা সাত কোটি টাকার পরিকল্পনা জমা দিয়েছি। যদি আপাতত ৮০-৯০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়, তা হলেও নর্দমা সংস্কারের মতো ছোট কাজগুলো করতে পারি। কিন্তু এখনও কিছুই হয়নি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy