দুঃস্বপ্ন: খেলনা নিয়ে ভুলে থাকা দুর্ঘটনার স্মৃতি। বাড়িতে সূর্যাভ। ছবি: তাপস ঘোষ
বাবা-মাকে কেউ বলছে, পুলকারে আর স্কুলে যাবে না। ট্রেনে করে নিয়ে যেতে হবে।
কেউ আবার বলছে, পবিত্রকাকুর গাড়িতে যাবে না।
ওই কচিকাঁচারা শুক্রবার পোলবার দুর্ঘটনাগ্রস্ত পুলকারে ছিল। ভীতির কারণেই এখন তারা এমন বলছে বলে চিকিৎসকদের বক্তব্য। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকরা জানান, এই ধরনের দুর্ঘটনার পরে অনেকেরই মানসিক সমস্যা হতে পারে। তা কাটানোর কিছু উপায়ও রয়েছে।
মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শুভ্রাংশু চক্রবর্তী বলেন, ভয়জনিত কারণে এই ধরনের মানসিক সমস্যা (পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজ়অর্ডার) হলে শিশুকে কাউন্সেলিং করাতে হবে। তার আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর চেষ্টা করতে হবে। অযথা প্রশ্ন করে বাচ্চার মনে দুর্ঘটনার স্মৃতি খুঁচিয়ে তোলা উচিত নয়। তবে বাচ্চা যদি দুর্ঘটনার কথা বলতে চায়, গুরুত্ব দিয়ে শোনা দরকার।’’
মনোবিদ মোহিত রণদীপও মনে করেন, শিশুকে দৈনন্দিন কাজকর্মের মধ্যে রাখা উচিত। পড়াশোনা, খেলাধুলো বা অন্য ভাবে সামাজিক মেলামেশায় শিশুকে উৎসাহিত করতে হবে। মোহিতের কথায়, ‘‘শিশুকে নিয়ে বাড়তি সতর্কতা কাম্য নয়। বরং তাঁর অভিজ্ঞতা, অনুভূতির কথা মন দিয়ে শোনা উচিত। মনে চেপে থাকা কথা বলতে পারলে শিশুর মন হালকা হবে।’’
ওই দুর্ঘটনায় দিব্যাংশু ভকত, ঋষভ সিংহ ছাড়াও অমরজিৎ সাহাও গুরুতর জখম হয়। দিব্যাংশু ও ঋষভ কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। অমরজিৎ ভর্তি চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক জানান, দুর্ঘটনার জেরে অমরজিৎ মারাত্মক ভয় পেয়ে গিয়েছিল। তাকে সাইকোলজিস্টের তত্ত্বাবধানে রাখতে হয়েছিল। তার মানসিক সমস্যা এখন অনেকটাই কেটেছে।
কতটা আতঙ্কে রয়েছে খুদে পড়ুয়ারা?
শেওড়াফুলির এসকে বসু সরণির বাসিন্দা, দ্বিতীয় শ্রেণির সূর্যাভ ভট্টাচার্য ছিল ওই পুলকারে। তার মা পাপিয়া বলেন, ‘‘সে দিন বাড়িতে ফেরার পরে ছেলে বলল, গাড়িটা যখন জলে পড়ে গেল, ভাবছিলাম আর বাঁচব না। তোমার কথা মনে হচ্ছিল। ওইটুকু ছেলের মুখে এই কথা শুনে থ হয়ে যাই।’’ পাপিয়ার স্বামী, পুলিশকর্মী পদ্মনাভ জানান, দুর্ঘটনার পরে স্কুলে যাওয়ার প্রশ্নে সূর্যাভ বলছিল, ট্রেনে চেপে স্কুলে যাবে। পরে জানায়, পুলকারে যাবে, কিন্তু পবিত্রের (দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়ির চালক পবিত্র দাস) গাড়িতে আর যাবে না।’’
রবিবার দুপুরে বাড়িতে গাড়ি নিয়ে খেলার ফাঁকে সূর্যাভ বলে, ‘‘পবিত্রকাকু ভীষণ জোরে গাড়ি চালায়। বাবা বারণ করেছিল। শোনেনি। ওই দিন একটা পেট্রল পাম্পে আমাদের ছোট গাড়ি থেকে বড় গাড়িতে চাপিয়েছিল। স্কুলে দেরি হয়ে যাবে বলে খুব জোরে চালাচ্ছিল। গাড়িটা পড়ে গেল। সবাই কাঁদছিলাম।’’
অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, একটি ছোট গাড়িতে শ্রীরামপুরের দিক থেকে কয়েকটি শিশুকে আনা হত। অপর একটি গাড়িতে শেওড়াফুলি-বৈদ্যবাটীর শিশুদের তোলা হত। তার পরে শেওড়াফুলি বা বৈদ্যবাটীর কোনও জায়গায় সবাইকে একটি বড় গাড়িতে তোলা হত। ওই দিন বৈদ্যবাটী চৌমাথার কাছে একটি পেট্রল পাম্পে বাচ্চাদের বড় গাড়িতে তোলা হয়। পদ্মনাভ বলেন, ‘‘ছেলে কিছুটা মানসিক ট্রমায় ছিল। আমরা টিভিতে দুর্ঘটনার খবর দেখতে দিইনি। এখন অনেকটাই স্বাভাবিক।’’
এক শিশুর মায়ের কথায়, ‘‘আমার মেয়ে ভয় পেয়েছিল। এখন অনেকটা কাটিয়ে উঠেছে।’’ শেওড়াফুলিরই বাসিন্দা সুপ্রভা সাহাও ওই গাড়িতেই ছিলেন। তার মা সঞ্চয়িতা বলেন, ‘‘মেয়ে বলছিল, গাড়িটা নয়ানজুলিতে পড়ে যাওয়ার পরে ওর মনে হয়েছিল, স্বপ্ন দেখছে। পরে বুঝতে পারে সত্যি সত্যি কাদায় আটকে আছে।’’ সঞ্চয়িতা জানান, মেয়ে সুস্থ রয়েছে। স্কুলে যেতেও আপত্তি নেই। সে শুধু জানিয়েছে, পুলকারে যাবে না। ট্রেনে নিয়ে যেতে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy