ব্যস্ত: যন্ত্রে ধান কাটা বন্ধ রেখে কিছু জমিতে কাস্তে দিয়ে ধান কাটাচ্ছেন চাষি। আরামবাগে। ছবি:সঞ্জীব ঘোষ
আমন ধান কাটা চলছে। খেতে নাড়া (ধান গাছের গোড়া) পোড়ানো বন্ধে লাগাতার প্রচারে কিছুটা সাড়া মিলছে বলেও দাবি করছে কৃষি দফতর। বিভিন্ন এলাকায় কাস্তে নিয়ে ধান কাটতে দেখা যাচ্ছে খেতমজুরদের। কিন্তু আরামবাগ মহকুমা বহু চাষির প্রশ্ন, কাস্তে দিয়ে ধান কাটার সাবেক পদ্ধতিতে যে হারে খরচ বাড়ছে এবং সময় যাচ্ছে, তাতে শেষ পর্যন্ত তাঁদের অনেককেই যন্ত্রের (কম্বাইন রিপার হারভেস্টর) দ্বারস্থ হতে হবে। কারণ, আর কোনও বিকল্প নেই। না হলে আলু চাষে দেরি হয়ে যাবে।
আরামবাগের রামনগর গ্রামের চাষি বিদ্যাপতি বারুইয়ের কথাই ধরা যাক। তিনি বলেন, ‘‘কৃষি দফতর খড় না পুড়িয়ে, পচিয়ে জমিতে সার হিসাবে ব্যবহারের নিদান দিচ্ছে। কিন্তু মহকুমার অধিকাংশ জমিই তিন-চার ফসলি। সেই সব জমিতে কম সময়ের মধ্যে খড় কী করে পচিয়ে নষ্ট করতে হবে, তা বলা হচ্ছে না। কম সময়ের মধ্যে যন্ত্রে ধান কেটে জমি পরিষ্কার করতে নাড়া পোড়ানো ছাড়া চাষির কাছে কোনও বিকল্প থাকে না। চাষে দেরি হলে নাবিধসা রোগে আলুও নষ্ট হয়।”
আর এক চাষির মতে, ‘‘খড় মজুত করে লাভ হয় না। অধিকাংশ চাষির গরুই নেই। ট্রাক্টরে চাষ হয়। সর্বোপরি, মজুরের আকাল। এই পরিস্থিতিতে যন্ত্রে ধান কাটার পরে কুঁচো খড় নষ্টের বিকল্প ব্যবস্থা না-হওয়া পর্যন্ত নাড়া পোড়ানো বিশেষ কমবে না।’’
জমিতে দ্রুত খড় পচানোর মতো পরিকাঠামো যে এখনও ততটা নেই, তা মানছে জেলা কৃষি দফতর। ওই দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘বিশেষ রাসায়নিক প্রয়োগ করে বা অন্য কোনও ভাবে দ্রুত খড় পচানোর ব্যবস্থাপনা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা চলছে। শীঘ্র চাষিদের তা নিয়ে প্রশিক্ষণও দেওয়া হবে।”
রাজ্যের অন্যতম প্রধান ধান উৎপাদক জেলা হুগলি। তাই নাড়া পোড়ানোর সমস্যা হুগলিতে যথেষ্টই বেশি। যন্ত্রে ধান কাটা হলে গাছের গোড়ার কিছুটা অংশ জমিতেই থেকে যায়। কাস্তেতে কাটা হলে অবশ্য তা হয় না। মাটি বরাবর ধানগাছ কাটা হয়। কিন্তু দ্রুত ধান কাটার জন্য এখন সর্বত্র যন্ত্রের ব্যবহার হচ্ছে। গতবারও ধান ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই চণ্ডীতলা-১ ও ২ ব্লক, জাঙ্গিপাড়া, সিঙ্গুর, হরিপাল, আরামবাগ, ধনেখালি এবং বলাগড়ের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে ধানজমিতে নাড়া পোড়াতে দেখা গিয়েছে চাষিদের। দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে ধরে যেতে গিয়ে বহুবারই চোখে পড়েছে কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী। যার জেরে অনেকে শ্বাসকষ্টেও ভুগেছেন। সম্প্রতি দিল্লিতে দূষণের পিছনে পঞ্জাব, হরিয়ানা এবং উত্তরপ্রদেশে এই রকম নাড়া পোড়ানোই কারণ বলে অভিযোগ উঠেছে। অবিলম্বে ওই তিন রাজ্যকে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
হুগলি জেলা কৃষি দফতর এ বার প্রচারে জোর বাড়িয়েছে। তার জেরে গোঘাটের দশঘরা, বেলডিহা, আরামবাগের রামনগর, মায়াপুর রেল স্টেশন সংলগ্ন এলাকা, পুরশুড়ার জঙ্গলপাড়া এবং খানাকুলের বালিপুরের বেশ কিছু জমিতে কাস্তে নিয়ে মাঠে নেমেছেন খেতমজুররা। যে সব চাষি খেতমজুরদের কাজে নামিয়েছেন, তাঁরা সংশয়ে রয়েছে এই সাবেক পদ্ধতি নিয়ে। তাঁদের মধ্যে বেলডিহার আজিজুল খান বলেন, ‘‘খেতমজুর লাগিয়ে ধান কাটাতে আমাদের বিঘাপিছু কয়েক হাজার টাকা বেশি খরচ হচ্ছে। উপযুক্ত পরিকাঠামো তৈরি না-হলে দূষণ রোধে এই পদ্ধতি টিকবে না। ভাল লাভ পেতে আমাদের বাকি জমিতে যন্ত্রেও ধান কাটাতে হচ্ছে।”
ফলে, এ বারও জেলায় নাড়া পোড়ানো পুরোপুরি রোখা যাবে কিনা, সে প্রশ্ন থাকছেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy