Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪

বাসের টক্করে হাত খুবলে গেল ছাত্রীর

ফের রেষারেষি। ফল আরও একটা মারাত্মক দুর্ঘটনা। বেপরোয়া ভাবে ওভারটেক করতে গিয়ে যাত্রীদের যে কী দুর্গতি হয়, ফের তার প্রমাণ মিলল হাওড়ায়। একটি বাসকে সেই রুটেরই আর একটি বাস ওভারটেক করতে যাওয়ায় ঘটল দুর্ঘটনা। একটি বাসের জানলা দিয়ে বেরিয়ে থাকা এক ছাত্রীর হাত ঘষে গেল অন্য বাসটির সঙ্গে। তাতে তার বাঁ হাতের কাঁধ থেকে কনুই পর্যন্ত খুবলে গেল। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দুর্ঘটনাটি ঘটেছে হাওড়া ময়দান এলাকায়।

দুর্ঘটনার পরে সোনামণি চক্রবর্তী। মঙ্গলবার। —নিজস্ব চিত্র

দুর্ঘটনার পরে সোনামণি চক্রবর্তী। মঙ্গলবার। —নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০০:৫৯
Share: Save:

ফের রেষারেষি। ফল আরও একটা মারাত্মক দুর্ঘটনা। বেপরোয়া ভাবে ওভারটেক করতে গিয়ে যাত্রীদের যে কী দুর্গতি হয়, ফের তার প্রমাণ মিলল হাওড়ায়। একটি বাসকে সেই রুটেরই আর একটি বাস ওভারটেক করতে যাওয়ায় ঘটল দুর্ঘটনা। একটি বাসের জানলা দিয়ে বেরিয়ে থাকা এক ছাত্রীর হাত ঘষে গেল অন্য বাসটির সঙ্গে। তাতে তার বাঁ হাতের কাঁধ থেকে কনুই পর্যন্ত খুবলে গেল। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দুর্ঘটনাটি ঘটেছে হাওড়া ময়দান এলাকায়।

বেপরোয়া গাড়িচালকদের রেষারেষি বন্ধ করতে কর্মশালা, আলোচনাসভা থেকে শুরু করে জরিমানা সবই করেছে পুলিশ। কিন্তু গাড়িচালকদের যে সোজা পথে আনা সম্ভব নয়, তা আরও এক বার প্রমাণ করে দিল এ দিনের ঘটনা।

বাসের রেষারেষির ফলে যাত্রীদের হাত কেটে যাওয়ার ঘটনাও নতুন নয়। ২০০৫ সালে শ্যামবাজারে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রোডে দু’টি বাসের রেষারেষির জেরে একটি হাত খুইয়েছিলেন ছাতু বিক্রেতা সুখারি পাসোয়ান। আবার ২০০৮ সালে দেগঙ্গায় দু’টি বাসের রেষারেষিতে এক মহিলার হাত ছিঁড়ে বাসের ভিতরেই পড়ে গিয়েছিল। সব থেকে বড় ঘটনা ঘটেছিল ২০০৯ সালে। ডাফরিন রোডে দুটি বাসের সংঘর্ষে হাত খুইয়েছিলেন তিন যাত্রী। তাঁদের মধ্যে বেহালার সত্যজিৎ রায় সরণির বাসিন্দা এক দম্পতি এবং গুয়াহাটি থেকে বেহালায় আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে আসা এক যুবকও ছিলেন।

কী ঘটেছিল মঙ্গলবার?

পুলিশ জানায়, ডোমজুড়ের মাজু এলাকার বাসিন্দা সোনামণি চক্রবর্তী (১৬) এ দিন বিকেলে মা ও ভাইয়ের সঙ্গে হাওড়ার মঙ্গলাহাটে এসেছিল পুজোর কেনাকাটা করতে। কেনাকাটা করে তাঁরা তিন জন বাসেই হাওড়া বাসস্ট্যান্ডে যান। সেখান থেকে হাওড়া-ডোমজুড়গামী ৬৩ নম্বর রুটের একটি বাসে চেপে মাজু ফিরছিলেন। অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী সোনামণির ভাই শুভ বলে, “সিট পাওয়ার জন্য আমরা হাওড়ায় গিয়ে বাসে উঠেছিলাম। দিদি আর মা বাসের দরজার পাশের সিটেই বসেছিল। আমি পিছনে বসেছিলাম।”

পুলিশ সূত্রের খবর, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ হাওড়া ময়দান এলাকায় জিটি রোড ও মহাত্মা গাঁধী রোডের সংযোগস্থল থেকে যখন বাসটি ফাঁসিতলার দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল, তখনই ঘটে দুর্ঘটনা। ওই রুটেরই আর একটি বাস বাঁ দিক দিয়ে এগিয়ে সোনামণিদের বাসের সামনে যাওয়ার চেষ্টা করে। ওই সময়ে বাসের জানলার পাশে বসে মায়ের সঙ্গে গল্প করছিল ওই মেয়েটি। কিন্তু তার বাঁ হাতটি যে জানলার বাইরে রয়েছে, তা সে খেয়াল করেনি। আচমকা ওভারটেক করা বাসের ধাক্কা লাগে সোনামনির হাতে। কিন্তু সরানোর আগেই মুহূর্তের মধ্যে হাতটি দু’টি বাসের মাঝে আটকে যায়। এক সময়ে সোনামণির হাতটি তীব্র গতিতে ঘষে দিয়ে সামনে এগিয়ে যায় ওভারটেক করা বাসটি।

বাসের অন্য যাত্রীরা পুলিশকে জানান, রক্তাক্ত অবস্থায় চিৎকার করে ওঠে মেয়েটি। কিন্তু অভিযোগ, সে দিকে কর্ণপাত না-করেই বাসটি চলতে শুরু করে। শেষে সহযাত্রীদের চিৎকারে বাস থামে। কয়েক জন যাত্রী নেমে ওভারটেক করে এগিয়ে যাওয়া ৬৩ নম্বর রুটের অন্য বাসটিকে ধরে ফেলেন। কিন্তু দু’টি বাসেরই চালক ও কন্ডাক্টর পালিয়ে যায়। রক্তাক্ত অবস্থায় সোনামণিকে একটি রিকশায় চাপিয়ে হাওড়া জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। বাসের ঘষা খেয়ে সোনামণির কাঁধ থেকে কনুই পর্যন্ত মাংস খুবলে গিয়ে হাড় বেরিয়ে গিয়েছে। এ দিন রাতে হাওড়া জেলা হাসপাতালেই তার অস্ত্রোপচার হয়।

বেশ কয়েক বছর আগে সোনামণির বাবা মারা গিয়েছেন। তার মা পুতুলদেবী জরির কাজ করে সংসার চালান। এ দিন তিনি বলেন, “ছেলে-মেয়েকে নিয়ে পুজোর কেনাকাটা করে বাড়ি ফিরছিলাম। কিন্তু চোখের নিমেষে মেয়েটার হাতটা ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেল।” হাওড়া সিটি পুলিশের এক কর্তা বলেন, “দু’টি বাসই আটক করা হয়েছে। চালক ও কন্ডাক্টরদের খোঁজে তল্লাশি করা হচ্ছে। মেয়েটির পরিবারের লোকেরা হাওড়া থানায় অভিযোগ জানিয়েছেন।”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy