সম্প্রীতি: নজরুলের তত্ত্বাবধানে সাজানো হচ্ছে রথ। নিজস্ব চিত্র
জমিদারি উঠে গিয়েছে কবেই। কিন্তু এখনও থেকে গিয়েছে কেতা। আর তাতেই মিশে আছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি। বৃহস্পতিবার আমতার তাজপুরে দেখা গেল এমনই ছবি।
এখানকার রায় পরিবার ছিল জমিদার। এই পরিবারে দারোয়ানের কাজ করতেন স্থানীয় সাকু কাজির পূর্ব পূরুষরা। জমিদারি উঠে গিয়েছে। চাকরি গিয়েছে অনেকদিন। কিন্তু তাতে কী! এই পরিবারের শতাব্দীপ্রাচীন রথযাত্রায় সামিল হয়ে যান সাকু কাজির পরিবার। রথের দিন রাস্তার ভিড় ফাঁকা করতে লাঠি হাতে হাজির থাকেন তাঁরাই।
সাকু কাজি এখন সরকারি কর্মচারী। তবে প্রতি বছর রথের দিনে রায় পরিবারেই তাঁর সব কাজ। এ বছর অফিসে কাজ থাকায় তিনি রথের দিন হাজির হতে পারেননি। তাই পাঠিয়েছেন ছেলে নজরুলকে।
রায় পরিবারের পরিবারের কুলদেবতা শ্রীধর জিউ, যা জগন্নাথদেবেরই অপর নাম। তাঁর আলাদা ঘর রয়েছে। রথের দিন রায়বাড়ির দুর্গাদালানে পালকি সাজানো হয়। ব্রাহ্মণরা সেই পালকিতে জগন্নাথদেবকে চাপিয়ে কাঁধে করে এনে রথে চাপিয়ে দেন। তারপরেই রায় পরিবারের সদস্য এবং গ্রামবাসীরা টান দেন রথের রশিতে। কিছু দূরে গিয়ে রথ থেমে যায়।
জগন্নাথকে একইভাবে পালকিতে চাপিয়ে ব্রাহ্মণরা নিয়ে আসেন জমিদারবাড়িতে। এখানেই তৈরি করা আছে মাসির ঘর। সেখানেই তাঁকে রাখা হয়। উল্টোরথের দিনে ফের ব্রাহ্মণরা তাঁকে পালকিতে করে মাসির ঘর থেকে নিয়ে গিয়ে রথে তুলে দেন। রথ ফিরে আসে। আবার জগন্নাথদেবকে পালকিতে চাপিয়ে ব্রাহ্মণরা নিজের ঘরে প্রতিষ্ঠিত করেন।
এ দিন দেখা গেল পালকিতে করে ঢাক-ঢোল ও কাঁসর ঘন্টা বাজিয়ে জগন্নাথদেবকে যখন ব্রাহ্মণরা রথে তোলার জন্য আনছেন, ভিড় সরাচ্ছেন নজরুল। ব্রাহ্মণ এবং রায় পরিবারের সদস্যরা যখন জগন্নাথদেবকে নিয়ে রথ পরিক্রমা করছেন সেখানেও হাজির নজরুল। রথে জগন্নাথদেবকে তুলে দেওয়ার সঙ্গে শুরু হল রথের রশি ছোঁওয়ার জন্য কাড়াকাড়ি। সেখানেও দেখা গেল ভিড় নিয়ন্ত্রণ করছেন নজরুল। এক সময়ে তিনি রথের রশিও ধরলেন।
রায় পরিবারের উত্তরাধিকারী তথা বর্তমানে রথের প্রধান উদ্যোক্তা মানস রায় বলেন, ‘‘আমাদের রথ প্রাচীন। সাকু কাজির বাবা খালেক কাজিকে দেখেছি, কী ভাবে ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতেন। রথের সময় সাকু কাজি আর তাঁর পরিবার আমাদের পরিবারের সঙ্গে জড়িয়ে থাকেন।’’
কী বলছেন নজরুল?
বছর ত্রিশের এই যুবক বললেন, ‘‘পারিবারিক ঐতিহ্য মেনেই আমরা রথের সময়ে থাকি। ধর্ম এক্ষেত্রে কোনও বাধা হয়ে দাঁড়ায় না’’ নিয়মমাফিক রথের সময়ে হাজিরা দেওয়াই নয়, রথের প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত থাকেন সাকু কাজি, নজরুলরা।
এমন সম্প্রীতির বাঁধনে খুশি স্থানীয় বাসিন্দা সইদ খান, সানাউল্লা খানেরা। সইদ খান বলেন, ‘‘সাকু কাজিদের সঙ্গে রায় পরিবারের সম্পর্ক আছে। আমরাও রথের রশিতে টান দিই। এখানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিশেষ নজির আছে।’’
এই গ্রামের বাসিন্দা তথা আমতা-২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সুকান্ত পাল বলেন, ‘‘শুধু রথের রশিতেই যে এলাকার মুসলিম মানুষরা টান দেন তা নয়। মুসলিমদের অনুষ্ঠানেও হিন্দুরা নিমন্ত্রিত হন পাত পেড়ে খান।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy