—ফাইল চিত্র।
অনলাইন ক্লাস শুরু হওয়ায় ছেলের জন্য স্মার্ট ফোন কিনে এনেছিলেন। এখন সেই ফোনই রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে বহু অভিভাবকের। ছেলে বা মেয়ের ‘মোবাইল আসক্তি’ ছাড়াতে এখন কাউন্সিলর-দের কাছে ছুটতে হচ্ছে তাঁদের। হাওড়া হোক বা হুগলি, লকডাউন-এ স্মার্ট ফোন ব্যবহারের কুপ্রভাব পড়তে শুরু করেছে কিশোর-কিশোরীদের মনে।
হুগলি চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির চেয়ারম্যান শুভাশিস নন্দী জানাচ্ছেন, মোবাইলের প্রতি কিশোর-কিশোরীদের আসক্তি নতুন নয়। তবে লকডাউন-পর্বে পড়াশোনা মোবাইল-নির্ভর হয়ে পড়ায় তা অনেক বেড়ে গিয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘ঘরে ঘরে এখন এই সমস্যা। কেউ জানাচ্ছেন, কেউ জানাতে চাইছেন না। তবে অনেকেই এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে কাউন্সেলিং করাচ্ছেন।’’ তারপর যোগ করেন: ‘‘মোবাইল ব্যবহার আর মোবাইল আসক্তি এক নয়। কিশোর-কিশোরীরা অনলাইন ক্লাসের জন্য মোবাইল ব্যবহার শুরু করছেন। তারপর সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রবেশ ঘটছে তাদের। এমন ঘটনার কথাও শুনেছি যে, অনলাইন ক্লাসের লিঙ্ক চালু রেখে সোশ্যাল মিডিয়ায় বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করছে ছেলে-মেয়েরা। এই থেকেই শুরু হচ্ছে আসক্তি।’’
ছেলের স্কুলে অনলাইন ক্লাস শুরু হওয়ায় তার জন্য ধারদেনা করে একটি স্মার্ট ফোন কিনেছিলেন কোন্নগরের অয়ন ভৌমিক (নাম পরিবর্তিত)। এখন চেষ্টা করলেও ছেলেকে মোবাইল থেকে দূরে রাখতে পারছেন না। অগত্যা যোগাযোগ করেছিলেন চাইল্ড লাইনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘‘আমার স্মার্ট ফোনের প্রয়োজন নেই। ছেলের জন্য কিনেছি। কিন্তু এখন কী করব বুঝতে পারছি না।’’
স্মার্ট ফোনের কুপ্রভাব কিশোর মনে কতটা পড়েছে তা হুগলি জেলা চাইল্ডলাইনের কো-অর্ডিনেটর গোপীবল্লভ সামলের কথাতেই পরিষ্কার। তিনি বলেন, ‘‘পালিয়ে বিয়ে করার ঘটনা বরাবরই ঘটত। এখন মাসে ১৫-২০টি পালিয়ে এই ধরনের ঘটনা ঘটছে। তারা সকলেই কিশোর বা কিশোরী। অনেক ক্ষেত্রে বাধ্য হয়েই পরিবার বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে। ছেলে-মেয়েদের যোগাযোগের মাধ্যম হয়ে গিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া। ছেলে-মেয়েদের মোবাইল আসক্তি দূর করতে আমাদের কাছেও কাউন্সেলিং-এর জন্য আসছেন অনেকে। সংখ্যা বলা সম্ভব নয়। তবে রোজই অনেকে এই সমস্যার কথা আমাদের জানান।’’পরিত্রাণ কোন পথে?
শুভাশিসবাবু বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গ শিশু অধিকার রক্ষা কমিশনের টোল ফ্রি নম্বরে অনেকে যোগাযোগ করেন। ফোনেও কাউন্সেলিং হয়।’’ রাজ্য শিশু অধিকার রক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ছেলে-মেয়েদের মোবাইল আসক্তি ছাড়াতে বহু অভিভাবক আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। আমরা তাঁদের নানা পরামর্শ দিচ্ছি।’’
গোপীবল্লভ জানান, কিশোর-কিশোরীদের মোবাইল-আসক্তি দূর করতে তাঁরা অভিভাবকদের কয়েক দফা পরামর্শ দিচ্ছেন যেমন, ছেলে-মেয়ের হাতে স্মার্ট ফোন দেওয়ার সময় মোবাইল থেকে অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ সরিয়ে দিন বা সেগুলি ‘লক’ করে রাখুন। জোর করে মোবাইল ফোন কেড়ে না-নিয়ে ফোন ব্যবহারের সময় নির্দিষ্ট করে দিন। সেই সময় ছেলে-মেয়ের উপরে নজর রাখুন, যাতে তারা সোশ্যাল মিডিয়ায় ঢুকতে না-পারে। তিনি বলেন, ‘‘অনেকেই মোবাইল নম্বর আধার কার্ড বা ব্যাঙ্কের ডেবিট এবং ক্রেডিট কার্ডের সঙ্গে লিঙ্ক করিয়ে রাখেন। অনেকসময় মোবাইলে নানা ধরনের ‘লিঙ্ক’ আসে। অনেক ‘লিঙ্ক’ অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে অজানা নম্বর থেকে পাঠানো হয়। সেই ধরনের ‘লিঙ্কে ক্লিক’ করে জালিয়াতের হাতে টাকা খোয়ানোর নজিরও রয়েছে। তাই কিশোরদের হাতে মোবাইল থাকার সময়ে তাদের চোখে-চোখে রাখতে হবে।’’
হাওড়ার চাইল্ডলাইন-এর কোঅর্ডিনেটর বৈশাখী চট্টোপাধ্যায় জানান, প্রতিদিন গড়ে ১৫-২০ জন অভিভাবক চাইল্ডলাইনে ফোন করে ছেলেমেয়ের মোবাইল আসক্তি দূর করার উপায় জানতে চান। তাঁর মতে, ‘‘করোনা পরিস্থিতিতে আউট-ডোর গেম-এ ছেলে-মেয়েদের যুক্ত করা এখন ঝুঁকিসাপেক্ষ। তাই তাদের যতটা সম্ভব ইনডোর গেমে যুক্ত করার কথা আমরা বলি। ছেলে-মেয়েদের আঁকা শেখা বা লুডো এবং ক্যারামের মতো ইনডোর গেমে ব্যাস্ত রাখুন অভিভাবকেরা। তাদের অনেক বেশি সময় দিন বাবা-মায়েরা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy