বেচারাম মান্না এবং রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। ফাইল চিত্র।
ফের সিঙ্গুর নিয়ে মামলার খাতা খুলছে। কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হতে পারে বেচারাম মান্না, রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যদের মতো নেতা এবং কিছু সাধারণ চাষিকেও। কারণ, সেই জমি-আন্দোলন।
বাম আমলে সিঙ্গুরে জমি-আন্দোলন পর্বে অন্তত ১২৮টি ফৌজদারি মামলা হয়েছিল। তার মধ্যে ২১টি এখনও বিচারাধীন। ছ’বছরেরও বেশি সময় ওই সব মামলা আদালতে ওঠেইনি। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশমতো তার মধ্যে কিছু মামলার শুনানি শুরু হতে চলেছে বারাসতের বিশেষ আদালতে। বিধায়ক বেচারাম মান্না, রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যদের ডাক পড়ছে জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে। বিশেষ আদালতের সেই ‘সমন’ পৌঁছতে শুরু করেছে অভিযুক্তদের কাছে।
একটি জনস্বার্থ মামলার শুনানিতে সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট দেশের সব হাইকোর্টকে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের সাংসদ-বিধায়কদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা থাকলে বিশেষ আদালত বসিয়ে তার নিষ্পত্তি করার নির্দেশ দেয় বলে হাইকোর্ট সূত্রের খবর। প্রশাসন সূত্রের খবর, পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্যের মধ্যে মোট চারটি জায়গায় ওই বিশেষ আদালত তৈরি করতে বলেছে সুপ্রিম কোর্ট। পশ্চিমবঙ্গে ওই বিশেষ আদালত গঠনের জন্য বারাসত আদালতকেই নির্দিষ্ট করা হয়েছে। ওই বিশেষ আদালতে ইতিমধ্যে একজন বিচারক নিয়োগ করা হয়েছে।
আইনজীবীরা জানান, ১৯৫১ সালের জনপ্রতিনিধিত্ব আইন অনুযায়ী কোনও বিধায়ক বা সাংসদ ফৌজদারি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলে পদে থাকতে পারেন না। তাঁকে সেই পদে ইস্তফা দিতে হয়। নির্বাচন কমিশনও দোষী বিধায়ক বা সাংসদদের পদে বহাল রাখতে রাজি নয়। দীর্ঘদিন মামলা চলার সুযোগ নিয়ে অভিযুক্ত বিধায়ক-সাংসদেরা যাতে পদ আঁকড়ে থাকতে না-পারেন বা নতুন নির্বাচনে আবার পদ দখল করতে না-পারেন, সেই জন্যই বিশেষ আদালত গড়ে এই ধরনের মামলার সুরাহা করতে সব হাইকোর্টকে নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
জমি-আন্দোলন পর্বে তৃণমূল ছিল বিরোধী দল। সেই সময় টাটাদের প্রকল্প এলাকার পাঁচিল ভাঙা, পুলিশের উপরে হামলা, অবৈধ জমায়েত, অগ্নিসংযোগ-সহ বেশ কিছু ফৌজদারি মামলা হয়েছিল তৎকালীন বিরোধী নেতা তথা বর্তমান সিঙ্গুরের বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ, হরিপালের বিধায়ক বেচারাম, জাঙ্গিপাড়ার বিধায়ক স্নেহাশিস চক্রবর্তী-সহ বেশ কয়েক জনের বিরুদ্ধে। তাঁদের সঙ্গে অন্তত ৮৬ জন চাষিও মামলায় অভিযুক্ত।
ফের সেই সব মামলার খাতা খোলায় সিঙ্গুরের শাসকদলের একাংশ এবং অভিযুক্ত চাষিরা রীতিমতো ক্ষুব্ধ। ২০১১ সালে রাজ্যে প্রথমবার ক্ষমতায় এসেই তৃণমূল সরকার প্রথম ক্যাবিনেট বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়, সিঙ্গুরের সব মামলা তুলে নেবে। সেই প্রক্রিয়া শুরু হলেও পরবর্তী সময়ে তা গতি হারায়। এতেই প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় নেতাদের একাংশ।
এ নিয়ে রবীন্দ্রনাথবাবুর সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। মন্তব্য করতে চাননি বেচারাম। তবে, স্নেহাশিস বলেন, ‘‘জানি না কোনও সরকার এ ভাবে মামলা তুলে নিতে পারে কিনা! পুলিশ যেমন আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল, তেমন সিপিএম নেতারাও করেছিল। সেই সব মামলার কী হবে? সরকার ভাল আইনজীবী দিয়ে চাষিদের পাশে দাঁড়াতে পারে।’’
অভিযুক্ত এক চাষি তো সরাসরি সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরকেই দায়ী করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘মামলা সময়ে তোলা হল কিনা, কেউ দেখল না। এখন শুনানির জন্য আমাদের বারাসতে ছুটতে হবে?’’ আর এক চাষি বলেন, ‘‘একে তো আইনি জটিলতায় জমি এখনও হাতে এল না। আবার মামলার গেরো। প্রশাসনকে আগে অনেকবার জিজ্ঞাসা করেছিলাম। কোনও উত্তর পাইনি।’’
কী বলছে রাজ্য সরকার?
শিক্ষামন্ত্রী তথা তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সরকারের নানা স্তরে ব্যস্ততা থাকে। মামলা তোলা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে না পারুন, চাষিরা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করলে পারতেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে দেখছি কী ভাবে কী করা যায়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy