প্রতীকী ছবি।
ফের চন্দননগরের বন্ধ গোন্দলপাড়া জুটমিলের এক শ্রমিকের মৃত্যু হল।
গত বৃহস্পতিবার রাতে গোন্দলপাড়ার পাঁচ নম্বর কুলি লাইনের বাসিন্দা, ওই জুটমিলের শ্রমিক সূরজ চৌধুরীর ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছিল। শনিবার মারা গেলেন দীনেশ মাহাতো (৪২)। তাঁর পরিবার সূত্রের খবর, তিনি হৃদরোগে ভুগছিলেন। মিল বন্ধ থাকায় ইএসআই-এর সুবিধা পাচ্ছিলেন না। খরচসাপেক্ষ চিকিৎসা বাইরে থেকেও করানো যাচ্ছিল না।
ওই এলাকার বাসিন্দা, মিল শ্রমিক রাজেশ জয়সোয়ারার খেদ, ‘‘এখন মৃত শ্রমিকদের নিয়ে নিয়মিত শ্মশানে যেতে হচ্ছে আমাদের। আর ভাল লাগছে না। মিল বন্ধ থাকায় ইএসআইয়ের সুবিধে পাচ্ছেন না শ্রমিকেরা।’’
২০১৮ সালের ২৭ মে ওই মিলে ‘সাসপেনশন অব ওয়ার্ক’-এর বিজ্ঞপ্তি ঝোলান কর্তৃপক্ষ। ফলে, সেখানকার হাজার চারেক শ্রমিকের পরিবার বিপাকে পড়ে। চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে মিল খুললেও তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। শ্রমিকরা বেতনও পাননি। কয়েক দিনের মধ্যেই ফের মিল বন্ধ হয়ে। অভিযোগ, গত এক বছরে বন্ধ এই জুটমিলের চার শ্রমিক আত্মঘাতী হয়েছেন। টাকার অভাবে অনেকে চিকিৎসা করাতে পারছেন না। সেই কারণে বিভিন্ন রোগে ভুগে মারা গিয়েছেন অন্তত ২০ জন। সেই তালিকায় উঠল দীনেশের নামও।
গোন্দলপাড়ার মতোই দীর্ঘদিন ঘরে বন্ধ শ্রীরামপুরের ইন্ডিয়া জুটমিলও। দু’টির শ্রমিক মহল্লায় হাহাকার শোনা যাচ্ছে রোজই। অন্তত বদলিতে যদি কোনও কাজ মেলে, সেই আশায় সকাল থেকেই তাঁরা গঙ্গার ও পারে ভাটপাড়া জুটমিল, অম্বিকা জুটমিল, হুকুমচাঁদ জুটমিলের গেটে গিয়ে বসে থাকছেন। অনেক সময় সারাদিন অপেক্ষার পরেও কাজ না-মেলায় ফিরে আসছেন।
গোন্দলপাড়া জুটমিলের শ্রমিক মহেশ দাস বলেন, ‘‘দিনের বেলায় অন্য মিলে গিয়ে কাজ পাচ্ছি না। তাই রাতের শিফ্টেও যাচ্ছি। ওই সব মিলের শ্রমিকেরা রাতে অনেকেই কাজ করতে চান না। তাই এক এক দিন ওখানে বদলিতে কাজ পেয়ে যাচ্ছি।’’ ওমপ্রকাশ সিংহ নামে আর এক শ্রমিকের ক্ষোভ, ‘‘সরকার আমাদের অন্তত বিনা পয়সায় রেশন এবং বাচ্চাদের পড়াশোনার খরচ দিতে পারত। বাচ্চাদের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গিয়ে ভবিষ্যৎটা একেবারে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কী যে করব বুঝতে পারছি না!’’
চন্দননগরের ‘অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক কল্যাণ সমিতি’র তরফে প্রশাসনের কাছে নিখরচায় রেশন চালুর আর্জি জানানো হয়েছে। সমিতির কর্ণধার বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘প্রায় দু’বছর মিল বন্ধ। শ্রমিকেরা খেতে পাচ্ছেন না। বাচ্চাদের পড়াশোনা করাবেন কী করে? রেশনের দাবি জানিয়ে ছিলাম। প্রশাসন কর্ণপাত করেনি।’’
প্রশাসনের সাড়া না মিললেও চন্দননগরের বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই গোন্দলপাড়ায় অন্তত ছ’হাজার কেজি চাল দেওয়া হয়েছে। ৩০টি শিশুকে মাসে এক হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছে পড়াশোনার খরচের জন্য। আড়াইশো শিশুকে বইখাতাও দেওয়া হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy