সেই জেটি। শনিবার, শিবপুরে। — দীপঙ্কর মজুমদার
কোটালের বানে ফের ভেঙে গেল শিবপুর লঞ্চঘাটের জেটি। এর জেরে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে গেল শিবপুর-চাঁদপালঘাট রুটের লঞ্চ চলাচল।
বছর দেড়েক আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে প্রায় ১ কোটি টাকা ব্যয়ে শিবপুর লঞ্চঘাটের সংস্কার করেছিল সেচ দফতর। পাল্টে দেওয়া হয়েছিল লঞ্চঘাটের খোলনলচে। এর পর গত বছর এমনই কোটালের বানে লোহার শিকল ছিঁড়ে ভেঙে পড়েছিল জেটি এবং সংযোগকারী চলাচলের রাস্তা বা গ্যাংওয়ে। ওই ঘটনার এক বছরের মধ্যে ফের একই ভাবে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হল জেটিটি। লঞ্চঘাটটির রক্ষণাবেক্ষণকারী সংস্থা হুগলি নদী জলপথ পরিবহণ সমবায় সমিতির দাবি, প্রতি বছর যে উচ্চতায় বান আসছে তাতে ফের একই ঘটনা ঘটতে পারে। তাই গোটা লঞ্চঘাটটি কংক্রিটের না করলে ফের বড় ধরনের বিপদের আশঙ্কা রয়েছে।
হুগলি নদী জলপথ পরিবহণ সমবায় সমিতি সূত্রে খবর, জেটিটি ক্ষতিগ্রস্ত হয় বৃহস্পতিবার। ওই রাতে আসা বানে ভাসমান জেটি বা পন্টুনটি উল্টে যায়। ভেঙে পড়ে গ্যাংওয়ে ও কংক্রিটের জেটির সংযোগকারী অংশ (ইয়ক স্টেজ)। জলের তোড়ে গ্যাংওয়েটি গিয়ে পড়ে পন্টুনের উপরে। ঘটনার পরে শুক্রবার সকাল থেকে লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সমস্যায় পড়েন নিত্যযাত্রীরা।
জেটিটি বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পিছনে অন্য কারণ দেখছেন জলপথ পরিবহণ সমবায় সমিতির কর্মচারীদের একাংশ। তাঁদের মতে, লঞ্চঘাটটির সৌন্দর্যায়ন করা হলেও জেটিটি ঠিক ভাবে মেরামত করা হয়নি। গ্যাংওয়ে ও কংক্রিটের জেটির সংযোগকারী ইয়ক স্টেজ নামে গুরুত্বপূর্ণ অংশটি নদীতে জল বাড়া-কমার সঙ্গে ওঠানামা করে। এই অংশটি লোহার চেন দিয়ে ৪টি অ্যাঙ্করের সঙ্গে বাঁধা থাকে। কর্মীদের একাংশের অভিযোগ, ওই অ্যাঙ্করগুলি যে ওজনের হওয়া দরকার তা ছিল না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মী বলেন, ‘‘চারটির মধ্যে দু’টি অ্যাঙ্করের ওজন হওয়া উচিত ১০ টন করে, অন্য দু’টির ৫ টন করে। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে অ্যাঙ্করগুলির ওজন আছে ৪-৫ টন করে। এ জন্য অতিরিক্ত জলের চাপ সহ্য করতে পারছে না জেটি। বড় বান এলেই ভেঙে পড়ছে।’’
হুগলি নদী জলপথ পরিবহণ সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক তথা হাওড়া পুরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর অনুপ চক্রবর্তী অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘অ্যাঙ্করের ওজন ঠিকই আছে। আসলে দেখা যাচ্ছে অন্য জেটির তুলনায় দ্বিতীয় হুগলি সেতু সংলগ্ন এই লঞ্চঘাটটিতে বানের অভিঘাত অনেক বেশি। ভাসমান জেটির পক্ষে তা
সহ্য করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই পুরোটাই কংক্রিটের জেটি করে দেওয়ার আবেদন জানিয়েছি রাজ্য সরকারের কাছে।’’
অনুপবাবুর বক্তব্যের সমর্থন মিলেছে রাজ্যের বিদায়ী সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথাতেও। তিনি বলেন, ‘‘ওই জায়গায় কংক্রিটের জেটি করাই ভাল। না হলে ফের বানের ধাক্কায় ভেঙে যাবে।’’
কিন্তু এখন কী ভাবে মানুষ নদী পারাপার করবেন? অনুপবাবু বলেন, ‘‘যত দ্রুত কাজ শুরু করা যায় তার চেষ্টা চলছে। আশা করা যায় সামনের সপ্তাহে শুরু হয়ে যাবে। আপাতত অনির্দিষ্ট কালের জন্য লঞ্চঘাটটি বন্ধ থাকছে। তবে রামকৃষ্ণপুর ঘাট থেকে লঞ্চ চালানো হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy