Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
শ্রমজীবী কর্তৃপক্ষের চিঠি প্রশাসনকে
Serampore COVID Hospital

হাসপাতালের কোভিড যোদ্ধাদের বেতন অমিল

বেতনের অনিশ্চয়তায় উদ্বিগ্ন হাসপাতাল কর্মীরা।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

প্রকাশ পাল
শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০২১ ০৫:০৬
Share: Save:

করোনা রোগীদের পরিষেবা দিয়ে শ্রীরামপুর শ্রমজীবী হাসপাতালের এখন শয্যাশায়ী অবস্থা!

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, কোভিড-চিকিৎসার খরচ বাবদ অন্তত ৪ কোটি টাকা (নভেম্বর পর্যন্ত) বকেয়া মেটায়নি স্বাস্থ্য দফতর। পরিস্থিতি এমন জায়গায়, নতুন বছরে মাসপয়লায় কর্মীদের বেতন দেওয়া গেল না। অর্থাৎ, করোনা-যোদ্ধাদের বেতন অনিশ্চিত। হস্তক্ষেপ চেয়ে শুক্রবার হুগলির জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাওকে চিঠি দেওয়া হয়েছে হাসপাতালের তরফে।

বেতনের অনিশ্চয়তায় উদ্বিগ্ন হাসপাতাল কর্মীরা। এক স্বাস্থ্যকর্মীর কথায়, ‘‘আমাদের বেতন খুব বেশি নয়। কিন্তু মাসের প্রথম দিনই তা দিয়ে দেওয়া হয়। সময়ে টাকা না পেলে তো সংসার চালাতে সমস্যা হবে।’’ প্রশ্ন উঠছে সাধারণ মানুষের মধ্যেও। করোনার সঙ্গে যাঁরা লড়াই করছেন, বেতন নিয়ে তাঁদের কেন অনিশ্চয়তায় ভুগতে হবে, প্রশ্ন সেটাই। হাসপাতালের সহ-সম্পাদক গৌতম সরকার বলেন, ‘‘বেলুড় এবং শ্রীরামপুরে আমাদের দু’টো হাসপাতাল রয়েছে। কর্মীদের বেতন দিতে না পারার পরিস্থিতি কখনও হয়নি। পরিস্থিতির কথা স্বাস্থ্য দফতর এবং প্রশাসনের অজানা নয়। কিন্তু কাজ হয়নি। টাকা জোগাড় করতে না পারলে বেতন দিতে পারব না! এমন চললে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়াও কঠি‌ন হয়ে পড়বে।’’

সমস্যার কথা মানছে প্রশাসন। জেলাশাসক বলেন, ‘‘পুরো বিষয়টি রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরকে জানানো হয়েছে। ফের বলব। তারা নিশ্চয়ই উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে।’’

শ্রীরামপুরের পিয়ারাপুরে গণ-উদ্যোগে তৈরি এই স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানকে এপ্রিল মাসের গোড়ায় করোনা হাসপাতাল করে প্রশাসন। ৮০টি সাধারণ এবং ২০টি সিসিইউ শয্যা হয়। প্রায় দু’হাজার করোনা রোগীর চিকিৎসা এখানে হয়েছে।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী মিলিয়ে ১১০ জন কাজ করছেন। সরকার সরাসরি তাঁদের বেতন দেয় না। তারা শয্যাপিছু নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা বরাদ্দ করে।হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, বকেয়া পুরো না-মিটিয়ে মাঝেমধ্যে অল্পস্বল্প টাকা দেওয়া হয়।

শয্যাভাড়া এবং বিভিন্ন সংগঠন বা সাধারণ মানুষের অনুদানে চিকিৎসক, কর্মীদের বেতন দেওয়া হচ্ছিল। সম্প্রতি রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর শ্রমজীবীর ১০টি সিসিইউ এবং ৩০টি সাধারণ শয্যা ছেড়ে দেয়। যদিও কোভিড-বিধি মেনে ওই শয্যাগুলিতে অন্য রোগের চিকিৎসা সম্ভব নয়। ফলে, শয্যাগুলি অব্যবহৃত থেকে যাচ্ছে। আর্থিক সঙ্কট বাড়ছে।

পুরো হাসপাতালই ছেড়ে দেওয়ার আর্জিতে সম্প্রতি জেলাশাসককে চিঠি দেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাঁদের যুক্তি, এখানে বহু গরিব মানুষের চিকিৎসা হত। কিন্তু কোভিড চিকিৎসার জন্য সে সব পরিষেবা বন্ধ করে দিতে হয়। অস্ত্রোপচারও বন্ধ।

সাধারণ রোগ, অর্থোপেডিক, স্ত্রী-রোগ, সার্জারি, ক্যানসার, ডায়ালিসিস, হার্টের স্টেন্ট বসানো, অ্যাঞ্জিওগ্রাফি, অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি প্রভৃতি পরিষেবা থেকে সাধারণ মানুষ বঞ্চিত হচ্ছেন।

হাসপাতালের সম্পাদক চিকিৎসক অনিল সাহার খেদ, ‘‘কী পরিস্থিতি ভাবুন! যে ছেলেমেয়েগুলো কোভিডের সঙ্গে লড়াই করে ওই রোগীদের সেবা করছেন, তাঁদের সামান্য বেতন মেটাতে আমরা অপারগ। আর সরকারই যখন বলছে কোভিড রোগীর সংখ্যা তলানিতে, তখন অল্প কিছু শয্যার জন্য আমাদের হাসপাতাল ধরে না রেখে ছেড়ে দেওয়া হোক। তাতে নন-কোভিড অসংখ্য মানুষকে আবার আগের মতোই পরিষেবা আমরা দিতে পারব।’’

এ প্রসঙ্গে জেলাশাসকের বক্তব্য, ‘‘রাজ্য সরকারের নিশ্চয়ই নির্দিষ্ট ভাবনা রয়েছে।’’

জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, করোনার নতুন স্ট্রে‌ন কতটা প্রভাব ফেলে, সে ক্ষেত্রে পরিকাঠামোর হেরফের করতে হবে কিনা, তা নিয়ে সরকার নিশ্চিত হতে চাইছে। সেই কারণে এখনই হাসপাতাল পুরো ছেড়ে দেওয়া হয়নি।

অন্য বিষয়গুলি:

Serampore COVID Hospital Salary Coronavirus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy