Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

শিশুদিবসে আশার আলো উলুবেড়িয়ার সামিরুল

সামিরুলের যখন চার বছর বয়স, সেই সময় পথ দুর্ঘটনায় হারিয়েছিল বাবা-মাকে। সামিরুলরা চার ভাই।  তাদের আশ্রয় হয় মাসি জাহানারার বাড়িতে। সেই বাড়ির পাশেই বাণীতলা ডাম্পিং গ্রাউন্ড।

মাসির সঙ্গে ব্যাগ কাঁধে স্কুলের পথে সামিরুল।

মাসির সঙ্গে ব্যাগ কাঁধে স্কুলের পথে সামিরুল।

সুব্রত জানা
উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৯ ০২:০৬
Share: Save:

উলুবেড়িয়ার শেখ সামিরুলকে মনে আছে? ডাম্পিং গ্রাউন্ড থেকে প্লাস্টিক কুড়িয়ে বিক্রি করে দিন কাটত যার। সেই আয় থেকেই পেটে দু’মুঠো গুঁজে পড়াশোনা করত সে।

এক বছর আগে শিশু দিবসের দিন আনন্দবাজারে সামিুরুলের লড়াইয়ের কথা প্রকাশের পর এগিয়ে এসেছিলেন অনেকে। এ বছরের শিশু দিবস অবশ্য অন্য রকম কাটবে তার। এখন আর সে নোংরা ঘাঁটে না। বাণীতলা গোপালচন্দ্র ঘোষ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়া সামিরুল পাশে পেয়েছে তার মাসি জাহানারা বেগমকে।

সামিরুলের যখন চার বছর বয়স, সেই সময় পথ দুর্ঘটনায় হারিয়েছিল বাবা-মাকে। সামিরুলরা চার ভাই। তাদের আশ্রয় হয় মাসি জাহানারার বাড়িতে। সেই বাড়ির পাশেই বাণীতলা ডাম্পিং গ্রাউন্ড।

এক ছেলে নিয়ে জাহানারার অভাবের সংসারে সামিরুলরা ছিল বোঝা। পেটের তাগিদে সকলকেই তাই কাজে নেমে পড়তে হয়েছিল। সামিরুলও প্রতিদিন সকালে বস্তা নিয়ে চলে যেত ডাম্পিং গ্রাউন্ডে। সেখানে প্লাস্টিকের বোতল, লোহা ভাঙা, টিন ভাঙা কুড়িয়ে বিক্রি করত। দিনে রোজগার হত ৪০-৫০ টাকা। সেই টাকা মাসিকে দিলে তবেই জুটত খাবার।

সামিরুলের বড় দাদা এখন বিয়ে করে আলাদা থাকেন। বাকি দু’ভাই মাসির সাথে জরির কাজ করে। মাসি তাদেরও স্কুলে ভর্তি করে দিয়েছিলেন। কিন্তু তারা স্কুল-ছুট।

সামিরুল পড়ার সুযোগ ছাড়েনি। জাহানারা বলেন, ‘‘বরাবর সামিরুলের পড়ায় আগ্রহ ছিল। তাই ওকে আর কাজ করতে দিই না। কাছেই একটা স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিয়েছি।’’ ভাইকে পড়াশোনা শেখাতে পেরে খুশি সামিরুলের দুই দাদাও। এক দাদা আমিরুল বলে, ‘‘আমার পড়তে ভাল লাগে না। আমাদের কাজের টাকা দিয়ে ভাইকে পড়িয়ে মানুষ করতে পারলে ভাল লাগবে।’’

স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা জানান, পড়ায় আগ্রহ রয়েছে সামিুরুলের। প্রতিদিন পড়া করে স্কুলে যায় সে। পরীক্ষায় ভাল ফলও করেছে।

বুধবার সকালে সামিরুলের বাড়ি গিয়ে দেখা গেল সে ব্যাগ কাঁধে স্কুলে যাচ্ছে। এক গাল হেসে সামিরুল বলে, ‘‘নোংরা আর ঘাঁটি না। প্রচুর বই পড়ি। বড় হয়ে চাকরি করব।’’

জাহানারার চোখে তখন জল।

অন্য বিষয়গুলি:

Sekh Samirul Children's Day
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy