Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Khankul

কর্মিসভার জন্য চাল-আলু সংগ্রহে নামল আরএসপি

দলীয় কর্মশালার জন্য খানাকুলে এ ভাবেই খাদ্য এবং অর্থ সংগ্রহে নেমেছে আরএসপি।

খানাকুলে খাদ্যসামগ্রী সংগ্রহ করছেন এক বামকর্মী। — নিজস্ব চিত্র।

খানাকুলে খাদ্যসামগ্রী সংগ্রহ করছেন এক বামকর্মী। — নিজস্ব চিত্র।

প্রকাশ পাল
খানাকুল শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০২১ ০২:২৮
Share: Save:

সকাল থেকে বাড়ি বাড়ি ঘুরছেন ওঁরা। হাতের ব্যাগে জমা পড়ছে চাল-ডাল-আলু, টাকাও। পাঁচ, দশ, কুড়ি…।

দলীয় কর্মশালার জন্য খানাকুলে এ ভাবেই খাদ্য এবং অর্থ সংগ্রহে নেমেছে আরএসপি। ছবিটা নতুন নয়। সত্তর-আশির দশকে বামপন্থী দলগুলোকে এ ভাবেই পথে দেখা যেত। তারপর সেই রেওয়াজ যেন তাঁরা ভুলেই গিয়েছিলেন! দলীয় সংগঠন মজবুত করতে যেন সেই পুরনো দিনেই ফিরছেন হুগলির আরএসপি নেতৃত্ব।

দলের জেলা সম্পাদক মৃন্ময় সেনগুপ্তের কথায়, ‘‘এ ভাবে জনসংযোগও হয়। নানা কারণে হয়তো ধারাবাহিকতায় ছেদ পড়েছিল। কিন্তু, এটাই আমাদের চেনা পথ।’’ খানাকুলের গোবিন্দপুর গ্রামের আরএসপি কর্মী সু‌নীল চক্রবর্তীর দাবি, বাড়ি বাড়ি ভালই সাড়া মিলছে।

প্রবীণেরা জানেন, এক সময় বাম কর্মীরা সমাবেশের জন্য বাড়ি বাড়ি রুটি সংগ্রহ করতেন। পরবর্তী সময়ে এই ধারা থেকে একটু একটু করে পিছিয়ে আসেন তাঁরা। এ নিয়ে নেতাদের মধ্যে নানা ব্যাখ্যা রয়েছে। নয়া প্রজন্মের এক বাম নেতার কথায়, ‘‘রাজ্যের মসনদে থাকার সময় ক্ষমতার দম্ভ অনেকটাই ক্ষতি করেছিল। ভাবা হয়েছিল, আমরা মানুষের কাছে যাব কেন? মানুষ আমাদের কাছে আসবে।’’ পুরোটা না ভেঙেও মৃন্ময় এই কাজের পিছ‌নে ‘আত্মবিশ্লেষণের’ কথা বলছেন।

ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সম্পাদক নরেন চট্টোপাধ্যায় মনে করেন, ক্ষমতায় আত্ম-অহঙ্কার বাড়ে। কেননা, ক্ষমতাসীনের পাশে অর্থবান লোক জুটে যায়। দক্ষিণপন্থী দলগুলির ক্ষেত্রে এই জিনিস দস্তুর। কিন্তু বামপন্থীরা বাড়ি বাড়ি যাওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা সরে এলেও, অর্থবানদের দিকে তাকিয়ে থাকেনি। দলের জনপ্রতিনিধিদের থেকে লেভি বা কর্মীদের চাঁদায় সম্মেলনের খরচ চালানো হয়েছে।

প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ রূপচাঁদ পাল জানান, ষাট, সত্তর এবং আশির দশকের গোড়ায় তাঁরা দলীয় সমাবেশে রুটি সংগ্রহ করে নিয়ে গিয়েছেন। প্রধানত রুটি-গুড়। কখনও তরকারি। তাঁর দাবি, বামেরা ক্ষমতায় আসার পরে রাজ্যে পঞ্চায়েত ব্যবস্থার উন্নতি হয়। খাবারের পরিমাণ এবং গুণগত মানেও বদল আসে। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা কিন্তু মানুষের বাড়ি যাওয়ার রেওয়াজ থেকে পুরোপুরি সরে যাইনি। সম্প্রতি আমপান বা করোনার সময় দিনের পর দিন মানুষের থেকে খাদ্যসামগ্রী, অর্থ সংগ্রহ করে আর্ত মানুষকে খাবার, বস্ত্র, ওষুধ দিয়েছে বিভিন্ন বাম দল। সাম্প্রতিক সময়ে দলীয় কর্মসূচিতে বেরিয়ে সাধারণ মানুষের বাড়িতে রাত্রিবাস করেছেন আমাদের কর্মীরা। বিজেপি-তৃণমূলের মতো আমাদের টাকা নেই। অম্বানী-আদানিদের উপরে ভর করে চলি না আমরা।’’

প্রবীণ সিপিআই নেতা তিমির ভট্টাচার্য জানান, কয়েক দশক আগে বাড়ি বাড়ি ঘুরে চাল, ডাল, আনাজ সংগ্রহ করে মূলত খিচুড়ি-লাবড়া খাওয়ানো হত দলীয় সম্মেলন-সমাবেশে। তিনি মনে করেন, কর্মীর অভাব এবং সাংগঠনিক দুর্বলতার জন্য বাড়ি বাড়ি ঘোরার ক্ষেত্রে কিছুটা ছেদ পড়েছে। বর্ষীয়ান এসইউসি নেতা দিলীপ ভট্টাচার্য জানান, দলের কাজে গিয়ে বহু সময়েই সাধারণ মানুষের বাড়িতে আশ্রয় নিতে হয়েছে। দলীয় কর্মসূচিও চেয়েচিন্তেই পালন করা হয়েছে। সম্মেলনের জন্য এখনও বাজার থেকে প্রয়োজনীয় জিনিস সংগ্রহ করা হয়।

তৃণমূল-বিজেপি দু’পক্ষই অবশ্য বামেদের কটাক্ষ করছে। জেলা তৃণমূল সভাপতি দিলীপ যাদব বলেন, ‘‘রুটি সংগ্রহের রেওয়াজ একটা সময় বামেদের নিশ্চয়ই ছিল। কিন্তু সে তো ওরা কবেই ভুলে গিয়েছে। এখন আবার শুরু করলে মানুষ বুঝবে যে, ওরা নাটক করছে।’’ বিজেপি নেতা স্বপন পালের বক্তব্য, ‘‘আমাদের দলের সদস্য-চাঁদা আছে, কুপন দিয়ে মানুষের থেকে টাকা তোলা হয়। সেই টাকাতেই কর্মসূচি চলে। বাম নেতারা এটা বোধ হয় জানেন না। মানুষের বাড়ি ঘুরে ওরা এখন বাংলার রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক হতে চাইছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Khankul RSP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy