শ্রীরামপুরের রায়ঘাটে শনিবার ছবিটি তুলেছেন প্রকাশ পাল।
শহরাঞ্চলে কিছুটা চেষ্টাচরিত্র হয়েছে। কিন্তু গ্রামাঞ্চলে তার লেশমাত্র ছিল না। ফলে বিসর্জনের পরে দু’দিন পেরিয়ে গেলেও হুগলির গঙ্গার নানা ঘাটে পড়ে রয়েছে প্রতিমার কাঠামো। জলে ভেসে বেড়াতে দেখা গিয়েছে ফুল-বেলপাতা থেকে কাঠামোর খড়, কলাগাছ।
অথচ গত কয়েক বছর ধরেই গঙ্গাকে দূষণমুক্ত রাখতে বিসর্জনের সময়ে স্থানীয় পুরসভা এবং পঞ্চায়েতগুলিকে ব্যবস্থা নিতে বলে জেলা প্রশাসন। পুজোর ফুল-পাতা যাতে গঙ্গায় না পড়ে, সে দিকে নজর রাখা থেকে জল থেকে দ্রুত কাঠামো বা প্রতিমার অস্ত্রশস্ত্র তুলে ফেলার কথা বলা হয়। গ্রামীণ এলাকায় সচেতনতার বালাই নেই।
উত্তরপাড়ার দোলতলা ঘাটে আশপাশের বহু প্রতিমা নিরঞ্জন হয়। ডানকুনি বা রঘুনাথপুর থেকেও অনেক পুজোর প্রতিমা এখানে বিসর্জন দেওয়া হয়। ওই ঘাট যাতে সাফসুতরো থাকে সে দিকে পুর-কর্তৃপক্ষের নজর ছিল। প্রতিমা জলে নামানোর আগে ফুল-বেলপাতা নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলতে হয়েছে। বিসর্জনের পরে তড়িঘড়ি কাঠামো তুলে ফেলা হয়েছে। পুরপ্রধান দিলীপ যাদব নিজে সপার্ষদ ঘাটে উপস্থিত ছিলেন।
তবে দোলতলা ঘাটের দিকে নজর দিলেও উত্তরপাড়ার শিমূলতলা ঘাট, কলেজঘাট বা বাবুঘাটে পুর-কর্তৃপক্ষের ততটা নজর ছিল না। বৃহস্পতিবার বিসর্জন শেষ হয়ে গিয়েছে। অথচ শনিবারেও ওই সব ঘাটে আবর্জনা ভাসতে দেখা গিয়েছে। পুরপ্রধান দিলীপবাবু বলেন, ‘‘যেটুকু আবর্জনা রয়েছে, সোমবারের মধ্যে সব সরিয়ে ফেলা হবে।’’ তাঁর আশ্বাস, আগামী বছর সব ঘাট দ্রুত পরিষ্কার করার চেষ্টা করা হবে।
এ দিক থেকে ডাহা ফেল শ্রীরামপুর পুরসভা। বিসর্জনের পরে দু’দিন পেরিয়ে গিয়েছে। শ্রীরামপুরের রায়ঘাটে গঙ্গার হাল ফেরেনি। শনিবার দুপুরে সেখানে গিয়ে দেখা গেল, জলে ভাসছে অনেক কাঠামো। ফুল-বেলপাতা থেকে কলাগাছ ভাসছে। ঢিমেতালে সেই সব কাঠামো পাড়ে তোলার কাজ করছেন গুটিকতক যুবক। প্রতি বছরেই এই ঘাটে আবর্জনা ডাঁই হয়ে থাকে বলে অভিযোগ। অথচ দ্রুত সেগুলি তুলে ফেলতে সে ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। তবে শহরের অন্য ঘাটগুলি মোটের উপর পরিষ্কার ছিল।
চন্দননগর, চুঁচুড়ার অবস্থা অবশ্য তুলনায় ভাল। চুঁচুড়ার অধিকাংশ প্রতিমাই অন্নপূর্ণা ঘাটে নিরঞ্জন হয়। এ ছাড়া, জোড়াঘাট, চাঁদনীঘাট, ষাণ্ডেশ্বরতলাঘাট, প্রতাপপুর মল্লিকঘাট, কণকশালী বোসের ঘাটেও বিসর্জন হয়। পুরসভার পক্ষ থেকে সাড়ে তিনশো পুরকর্মীকে ওই সব ঘাটে নিয়োগ করা হয়েছিল। বিসর্জনের পরে জল থেকে কাঠামো তোলা থেকে শুরু করে গঙ্গায় ভেসে যাওয়া ফুল তোলা হয়েছে দ্রুতগতিতে। গঙ্গা থেকে তুলে এনে গোর্খা ময়দানের একপাশে সেগুলি রাখা হয়। পরে পুরসভার পক্ষ থেকে তা মৃৎশিল্পীদের কাছে বিক্রি করা হয়। বাঁশবেড়িয়ায় প্রতি ঘাটে ১০ জন করে পুরকর্মী নিয়োগ করা হয়েছিল। বৈদ্যবাটির প্রিয়দর্শিনী ঘাটে শনিবারেও সাফসুতরো করার কাজ চলেছে। ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নমিতা মাহাতোর আশ্বাস, ‘‘যেটুকু আবর্জনা রয়ে গিয়েছে, আজ রবিবারের মধ্যে তা পরিষ্কার করে ফেলার চেষ্টা করা হবে।’’
শহরাঞ্চলের এই চেষ্টার পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলের ছবিটা বেশ ফিকে। জিরাট, বলাগড়, গুপ্তিপাড়ার গঙ্গার ঘাটে সচেতনতা আদপেই চোখে পড়েনি। নজরদারি না থাকায় পুজো কমিটিগুলি গঙ্গাতেই ফুল-বেলপাতা ফেলেছেন। ভাসতে ভাসতে সেগুলি অন্যত্র গিয়েছে। শ্রীপুর-বলাগড়, সোমড়া বা গুপ্তিপাড়া ঘাট সর্বত্রই একই পরিস্থিতি। শনিবার দুপুরেও গুপ্তিপাড়া ফেরিঘাটে জেটির কাছে জলে কাঠামো পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছে।
স্থানীয় প্রশাসন অবশ্য দ্রুত গঙ্গা দূষণমুক্ত করার আশ্বাস দিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy