Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

প্রশ্ন বিদায়ীদের সক্রিয়তা নিয়েও

নির্বাচনী বিধিনিষেধ উঠে যাওয়ায় এ বার গ্রামোন্নয়নের কাজ শুরু হবে। অগস্টের মাঝামাঝি পর্যন্ত তা করতে হবে বিদায়ী বোর্ডকেই। কিন্তু জেলা প্রশাসনের কর্তাদের একাংশের আশঙ্কা, হেরে যাওয়া বা টিকিট না-পাওয়া পদাধিকারীরা যদি অনীহা দেখান, তা হলে কাজ ব্যাহত হবে।

নুরুল আবসার
উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৮ ০২:৪০
Share: Save:

ওঁদের কেউ বিভ্রান্ত। কেউ দলের মুখাপেক্ষী। কেউ আবার অশান্তির আশঙ্কা করছেন। ওঁদের নিয়ে চিন্তায় প্রশাসনের কর্তারাও।

ওঁরা বিদায়ী পঞ্চায়েতের প্রধান বা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বা অন্য কোনও পদাধিকারী। কেউ হয়তো ভোটে হেরেছেন, কেউ টিকিটই পাননি। যে বোর্ডের মেয়াদ অগস্টের মাঝামাঝি পর্যন্ত রয়েছে, সেই বোর্ডে ওঁরা কতটা সক্রিয় থাকবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে জেলা প্রশাসনের অন্দরে।

হাওড়া জেলার কথাই ধরা যাক। সাঁকরাইল পঞ্চায়েত সমিতির বিদায়ী পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ তৃণমূলের তপন পাল টিকিট না-পেয়ে নির্দল প্রার্থী হয়ে দাঁড়িয়ে হেরেছেন। তিনি বলছেন, ‘‘বুঝতে পারছি না কী করব! বিডিও যেমন নির্দেশ দেবেন সে ভাবেই চলতে হবে।’’ শ্যামপুর-২ পঞ্চায়েত সমিতির বিদায়ী সভাপতি রঞ্জিত বেরা হেরে গিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘বর্তমান বোর্ডের যতদিন মেয়াদ আছে, দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করব করব।’’ জগৎবল্লভপুর পঞ্চায়েত সমিতির বিদায়ী সভাপতি মহম্মদ হাফিজুর রহমান এ বার টিকিট পাননি। তিনি বলেন, ‘‘আমি নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত কাজ করতে চাই। তবে, নবনির্বাচিতরা কাজে বাধা সৃষ্টি করতে পারেন। আমি জেলা নেতৃত্বকে জানিয়েছি। বাধা এলে পদত্যাগ করব।’’

ক’দিন আগেই আমতা-১ ব্লকের চন্দ্রপুর পঞ্চায়েতের বিদায়ী প্রধান সাহানারা বেগম মিদ্যার উপরে হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে দলেরই একটি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। সাহানারার অভিযোগ ছিল, ক্ষমতা তাঁদের হাতে তুলে দেওয়ার দাবি জানিয়ে হামলা হয়। তার পর থেকে সাহানারা পঞ্চায়েতে না-আসায় কাজকর্ম বন্ধ।

সামনেই বর্ষার মরসুম। নির্বাচনী বিধিনিষেধ উঠে যাওয়ায় এ বার গ্রামোন্নয়নের কাজ শুরু হবে। অগস্টের মাঝামাঝি পর্যন্ত তা করতে হবে বিদায়ী বোর্ডকেই। কিন্তু জেলা প্রশাসনের কর্তাদের একাংশের আশঙ্কা, হেরে যাওয়া বা টিকিট না-পাওয়া পদাধিকারীরা যদি অনীহা দেখান, তা হলে কাজ ব্যাহত হবে। চলতি মাস থেকে আসতে থাকবে নতুন বাজেট বরাদ্দের প্রথম কিস্তির টাকা। এমনিতেই নির্বাচনের জন্য এপ্রিলের গোড়া থেকে মে মাসের ১৭ তারিখ পর্যন্ত কোনও টাকা খরচ করা যায়নি। তারপরে যদি বিদায়ী পদাধিকারীদের অসহযোগিতায় কাজ পিছিয়ে যায় তা হলে আগামী কিস্তির টাকা পাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা হবে। তা ছাড়া, নতুন যাঁরা নির্বাচিত হলেন, তাঁরা পড়ে থাকা টাকা বিদায়ী বোর্ডকে খরচ করতে দিতে না-ও পারেন। তাঁরা চাইবেন, সেই টাকা যেন তাঁদেরই হাত দিয়ে খরচ হয়।

পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় স্বীকার করেন, কিছু ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে। তবে তিনি বলেন, ‘‘সমস্যা হলে স্থানীয় ভাবেই মেটাতে হবে। পঞ্চায়েতের চলতি বোর্ডকে মেয়াদের আগে কোনও মতেই ভাঙা যাবে না। সেই আইন নেই।’’ হাওড়া জেলা (সদর) তৃণমূল সভাপতি অরূপ রায় এবং (গ্রামীণ) সভাপতি পুলক রায় বলেন, ‘‘আমাদের দলের যাঁরা টিকিট পাননি বা হেরে গিয়েছেন তাঁদের দায়বদ্ধতা আছে। উন্নয়নমূলক কাজে কোনও সমস্যা হবে না।’’ তবু, প্রশাসনের আশঙ্কা যাচ্ছে না।

সাধারণত এমন ভাবে পঞ্চায়েত নির্বাচন হয়, যাতে পুরনো বোর্ডের মেয়াদ শেষ হতেই নতুন বোর্ড ক্ষমতা পায়। এ বারে তা হয়নি। ২০১৩ সালে আবার উল্টো ব্যাপার হয়েছিল। পঞ্চায়েত ভোটকে কেন্দ্র করে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে রাজ্য সরকারের টানাপড়েনে বোর্ডের মেয়াদ পেরিয়ে যায়। প্রশাসক বসাতে হয় রাজ্যকে। কিন্তু নির্বাচিত পঞ্চায়েত এসে যাওয়ার ফলে কাজের ঢল নেমেছিল। এ বারে এই আড়াই মাসে সেটা হওয়ার সম্ভাবনা কম বলে জেলা প্রশাসনের কর্তাদের একাংশ মনে করছেন।

অন্য বিষয়গুলি:

Uluberia Panchayat Samity
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE