গ্রামবাসীদের অভিযোগ শুনছেন জেলাশাসক। ছবি: সুশান্ত সরকার
কত মানুষের কত সমস্যা!
গরু-ছাগলের টিকা মিলছে না। পেঁয়াজ সংরক্ষণ হবে কী ভাবে? কালভার্টের বিশেষ প্রয়োজন। ঘরের আঁধার কি ঘুচবে না?...
চেনা সমস্যা। চেনা অভিযোগ। এতদিন প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরের কর্তাদের কাছ থেকে এ সব কথা সার্বিক ভাবে শুনেছেন জেলাশাসক। এ বার শুনলেন গ্রামবাসীরৈ মুখ থেকে সরাসরি।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন বিভাগের কর্তাদের নিয়ে জেলাশাসককে নির্দিষ্ট পঞ্চায়েতে ব্লকের প্রশাসনিক পর্যালোচনা সভা এবং শেষে জন-শুনানি আয়োজনের নির্দেশ দিয়েছেন সম্প্রতি। সেই নির্দেশমতোই বৃহস্পতিবার দুপুরে হুগলি জেলায় জেলাশাসকের প্রথম জন-শুনানি হয়ে গেল বলাগড় ব্লকের মহিপালপুর পঞ্চায়েত ভবনে। যে শুনানির পোশাকি নাম ‘গ্রামে চলো’।
নানা সমস্যা শুনে চটজলদি নানা পন্থা বাতলে দিলেন জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও। ‘নোট’ করিয়ে নিলেন নানা অভিযোগ,দাবি-দাওয়া।
বছর ঘুরছে। কিন্তু বাড়ি নিষ্প্রদীপ। কবে মিলবে বিদ্যুৎ? আবেদন করেও কোনও সাড়া না-মেলায় মামুদপুর গ্রামের সইফুল ইসলাম জেলাশাসকের সামনে প্রশ্নটা করেই ফেলেন। তা শুনে জেলাশাসক
বিদ্যুৎ দফতরের সংশ্লিষ্ট অফিসারকে বিষয়টি দেখতে বলেন। প্রতিবন্ধী-ভাতা না পেয়ে সরাসরি জেলাশাসকের কাছে চলে এসেছিলেন গোইপাড়ার নীলমণি মণ্ডল। জেলাশাসক তাঁর নামও সংশ্লিষ্ট দফতরের খাতায় নথিভুক্ত করিয়ে দেন।
জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ চাষ হয় বলাগড়ে। কিন্তু এখানে এখনও তেমন সংরক্ষণ কেন্দ্র গড়ে ওঠেনি। সে জন্য অনেক সময়েই চাষিরা দাম না-পাওয়ার অভিযোগ তোলেন। তাঁদেরই একজন শেখ নাজিমুল হক। এ দিন তিনি জেলাশাসককে হাতের কাছে পেয়ে তাঁর ক্ষোভ উগরে দেন। তিনি বলেন, ‘‘বলাগড়ে এত পেঁয়াজ চাষ হয়। কিন্তু এখানে সংরক্ষণের কোনও কেন্দ্র নেই। ফলে, পেঁয়াজ ফলিয়েও চাষি দাম পান না অনেক সময়ে।’’
ওই পেঁয়াজ চাষির অভিযোগ মন দিয়ে শোনেন জেলাশাসক। তারপর তিনি ওই চাষিকে প্রস্তাব দেন, ‘‘দেশজ পদ্ধতিতে পেঁয়াজ সংরক্ষণের কাজে উদ্যানপালন দফতর টাকা দিচ্ছে। সংশ্লিষ্ট চাষি রাজি থাকলে ওই প্রকল্পে তাঁকে যুক্ত করা যেতে পারে।’’
গ্রামবাসীরা এ দিন যে সুযোগ পেয়েছেন, সেই সুযোগ হাতছাড়া করতে চাননি পঞ্চায়েত প্রধান সৌরভ বিশ্বাসও। প্রশাসনিক পর্যালোচনা সভার আগে এই শুনানিতে তিনি জেলাশাসকের কাছে দু’টি আর্জি জানান। বেহুলা নদীর উপর সেতু এবং বাঘমারা এলাকায় কালভার্ট। জেলাশাসক দাবি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেন।
প্রধান সৌরভবাবু বলেন, ‘‘সালারপুর এবং নোয়াডাঙা এলাকায় বেহুলা নদীর উপর সেতুর বিশেষ প্রয়োজন। জেলাস্তরে যখন বৈঠক হয়, আমরা বারবার দাবি জানিয়েছি। কোনও কাজ হয়নি। বাঘমারা এলাকাতেও একটি কালভার্টের প্রয়োজন। না হলে জল ঢুকে চাষের জমি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আবেদন করেও কোনও সুরাহা পাইনি। তাই জেলাশাসককে জানালাম।’’
বলাগড় ব্লকের একেবারে প্রান্তে মহিপালপুর পঞ্চায়েত। জেলাশাসকের প্রথম কর্মসূচি হিসেবে এই গ্রামকে বাছা হল কেন? জেলা প্রশাসনের এক কর্তা জানান, এই পঞ্চায়েতে সংখালঘু, আদিবাসী সম্প্রদায়-সহ মোটামুটি সব শ্রেণির মানুষের বাস। তাই এই পঞ্চায়েতকে বাছা হয়েছে। এ দিনের কর্মসূচিকে ঘিরে প্রশাসনিক স্তরে রীতিমতো সাজো সাজো রব পড়ে গিয়েছে। জেলাশাসকের দফতরের পদস্থ কর্তাদের পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের সমস্ত বিভাগের সর্বোচ্চ কর্তারা হাজির ছিলেন।
দু’দফায় প্রায় পাঁচ ঘণ্টার জন-শুনানি শেষে জেলাশাসকের আশ্বাস এবং অভয়বাণীতে সন্তুষ্ট গ্রামবাসী। সইফুল এবং নীলমণি বলেন, ‘‘এতদিনকার সমস্যার সুরাহা বোধহয় শেষ পর্যন্ত মিলবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy