ক্রেতা নেই। গোঘাটের কামারপুকুর ডাকবাংলো বাজারে। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ
বৃহস্পতিবার সকালে বাজারে গিয়ে চোখ কপালে জ্যোৎস্না হাজরার। অবাক হয়ে আরামবাগের জয়রামপুরের ওই মহিলা দোকানিকে বলে ফেললেন, ‘‘সোমবার তো জ্যোতি আলু ২৫ টাকায় কিনলাম। এক ধাক্কায় ৩ টাকা বেড়ে গেল!’’ এক মাস আগে চন্দ্রমুখী আলুর দাম ছিল ২২ টাকা। বৃহস্পতিবার সেই দাম ৩০ টাকায় ঠেকেছে। কোথাও কোথায় সুযোগ বুঝে দোকানি আরও দু’-পাঁচ টাকা বাড়তি দাম হেঁকেছেন। হুগলির রবীন্দ্রনগরের বাসিন্দা পূর্ণিমা দাস বলেন, ‘‘স্বামী ট্রেনের হকার। ট্রেন চলছে না বলে কাজও বন্ধ। ধারদেনা করে চলছে। বাজারের যা অবস্থা এ বার শুকিয়ে মরতে হবে। এ ভাবে দাম বাড়তে থাকলে ডাল-ভাতের সঙ্গে আলুসেদ্ধ খাওয়ার উপায়টুকুও থাকবে না।’’
ঘরে-বাইরে চাহিদাকেই আলুর চড়া দামের কারণ ঠাওরাচ্ছেন কারবারিরা। তাঁরা বলছেন, এ বার আলুর মরশুমে পশ্চিমবঙ্গে হিমঘরে সাড়ে ৫৬ লক্ষ মেট্রিক টন আলু মজুত করা হয়। গত মে মাসে হিমঘরের দরজা খোলার পর থেকে ১৩ লক্ষ মেট্রিক আলু বেরিয়েছে। ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড, বিহারের মতো পড়শি রাজ্যে মাসে প্রায় ২ লক্ষ মেট্রিক টন আলু যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ থেকে। তার উপরে রাজ্যের স্কুলগুলিতে মিড-ডে মিলের আলু সরবরাহ করা হচ্ছে। পাশাপাশি, ফের লকডাউনের আবহে নানা জল্পনায় বাড়তি আলু কিনে জমিয়ে রাখার প্রবণতা তৈরি হয়েছে। সুযোগ বুঝে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী বাড়তি দাম নিচ্ছেন বলেও অভিযোগ। সব মিলিয়েই আলু মহার্ঘ্য!
হুগলি এবং বর্ধমানের বাজারই গোটা রাজ্যে প্রতি দিনের আলুর দামের নির্ধারক। বৃহস্পতিবার হুগলিতে ১ প্যাকেট (৫০ কেজি) চন্দ্রমুখী আলুর দাম ১৩০০-১৩৫০ টাকার মধ্যে ঘোরাফেরা করেছে। জ্যোতি আলুর দাম ছিল গড়পরতা একশো টাকা কম। রাজ্যের আলু ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক লালু মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এখন রাজ্যে কিছুটা বাড়তি চাহিদা রয়েছে। বাইরের রাজ্যেও চাহিদা যথেষ্ট। তবে আলু যথেষ্ট মজুত রয়েছে। হঠাৎ বাড়তি চাহিদার কারণেই দাম কিছুটা বেশি। পরিস্থিতির উপর নজর রাখছি।’’
সাধারণ মানুষের উদ্বেগ অবশ্য কমছে না। টোম্যাটো, কাঁচালঙ্কা, বেগুনের মতো আনাজে হাত দিয়েও ছ্যাঁকা লাগছে। এক মাসে ৩৫ টাকা থেকে এক কেজি টোম্যাটোর দাম পৌঁছে গিয়েছে ৮০ টাকায়। এ দিন জেলার বিভিন্ন বাজারে কাঁচালঙ্কা বিকিয়েছে দেড়শো টাকায়। পেঁয়াজের দামও বাড়তে শুরু করেছে। শেওড়াফুলি বাজারের পাইকারি বিক্রেতা গোপাল জানা বলেন, ‘‘এই সময় টোম্যাটো আসে মহারাষ্ট্র থেকে। জোগান পর্যাপ্ত নেই। তার উপরে ডিজেলের দাম বাড়ায় পরিবহণ খরচও অনেক বেড়েছে। ফলে টোম্যাটোর দামও অত্যাধিক।’’
ব্যবসায়ীদের একাংশের বক্তব্য, আমপানে জেলার আনাজ চাষে মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। তার ফলে জোগান পর্যাপ্ত না থাকায় কিছু আনাজের দাম বেড়েছে। কামারপুকুর বাজারের আনাজ বিক্রেতা দিলীপ লাহার বক্তব্য, ‘‘জোগান স্বাভাবিক হয়নি বেশি দামে আনাজ কিনতে হচ্ছে। খদ্দেরকেও বেশি দাম দিতে হচ্ছে।" যদিও, হুগলি জেলা নিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতির সচিব শেখ ফিরদোসুর রহমানের দাবি, ‘‘দাম নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে। জোগানের উপরে কাঁচা আনাজের দাম বাড়া-কমা নির্ভর করে। সেই অনুযায়ী দাম মোটেই বেশি নেই। ভিন্ রাজ্য থেকে আসা আনাজের বিষয়টি অবশ্য আলাদা।’’
অনেকেই অবশ্য মনে করছেন, পরিস্থিতির সুযোগে খুচরো ব্যবসায়ীদের একাংশ বেশি দাম নিচ্ছেন। বৈদ্যবাটীর বাসিন্দা জামিনীমোহন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘করোনা পরিস্থিতিতে বাজারে যাচ্ছি না। পাড়ায় আনাজের ভ্যান আসে। সেখান থেকেই কিনি। আনাজের দাম অনেকটা বেড়েছে। মনে হয় খুচরো বিক্রেতাদের উপরে কারও নিয়ন্ত্রণ নেই।’’ জ্যোৎস্না বলেন, ‘‘আনাজের দাম নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে দিন দিন। সাধারণ মানুষ কি খেয়ে বাঁচবে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy