চুঁচুড়ায় নিহত বিষ্ণু মালের পরিবারের সঙ্গে কথা বলছেন চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার হুমায়ুন কবীর।
ছেলেকে নৃশংস ভাবে খুন করেছে দুষ্কৃতীরা। পুলিশের কাছে তাঁদের চরম শাস্তির আর্জি জানালেন চুঁচুড়ার রায়বেড়ের নিহত বিষ্ণু মালের বাবা-মা। ধৃত দুই দুষ্কৃতীকে দিয়ে বুধবার ঘটনার পুনর্নির্মাণ করায় পুলিশ। ঘটনায় জড়িত অভিযোগে আরও দুই দুষ্কৃতীকে এ দিন গ্রেফতার করা হয়। এই নিয়ে মোট চার জনকে ধরা হল। তবে মূল অভিযুক্ত, কুখ্যাত সমাজবিরোধী বিশাল দাস এখনও অধরা। চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার হুমায়ুন কবীর জানান, বিশালের খোঁজে বিভিন্ন জেলার পাশাপাশি ভিন্ রাজ্যেও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। তার আরও কয়েক জন শাগরেদের খোঁজেও তল্লাশি চলছে।
বুধবার দুপুরে সিপি, ডিসি (চন্দননগর) তথাগত বসু-সহ কমিশনারেটের পদস্থ কর্তারা বিষ্ণুর বাড়িতে যান। মোবাইলে বিশালের ছবি দেখিয়ে তাঁর বাবা-মায়ের কাছে নানা প্রশ্নের উত্তর জানতে চান সিপি। ওই পুলিশকর্তার কাছে বিষ্ণুর বাবা গোপাল মাল এবং মা কুন্তীদেবীকে হাতজোড় করে বলতে শোনা যায়, ছেলেকে সুস্থ শরীরে পুলিশ ফিরিয়ে দিতে পারেনি। খুনিদের উপযুক্ত সাজা যেন হয়, সেটা যেন পুলিশ নিশ্চিত করে। ছেলের খুনিদের ফাঁসি চান তাঁরা। দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি দেওয়ার বিষয়ে পুলিশকর্তারা তাঁদের আশ্বস্ত করেন।
এলাকাবাসীর সঙ্গেও তদন্তকারী অফিসাররা কথা বলেন। পরে ধৃত কৃষ্ণ মণ্ডলকে পুলিশকর্তারা চাঁপদানি পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের রামমোহন সরণিতে তার বাড়িতে নিয়ে যান। সঙ্গে ছিল আর ক ধৃত রাজকুমার প্রামাণিকও। ওই বাড়িতেই বিষ্ণুকে তুলে এনে খুন করা হয় বলে অভিযোগ।
কৃষ্ণ এবং রাজকুমারকে দিয়ে ওই বাড়িতে ঘটনার পুনর্নির্মাণ করানো হয়। দিল্লি রোড লাগোয়া বৈদ্যবাটী খালের যে অংশে বিষ্ণুর কাটা হাত-পা উদ্ধার হয়, সেখানেও কৃষ্ণ-রাজকুমারকে নিয়ে যাওয়া হয়। কী ভাবে দেহাংশ সেখানে ফেলা হয়েছিল, ধৃতেরা তা দেখিয়ে দেয়। সেখান থেকে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করেন তদন্তকারীরা।
এ দিন বিনোদ দাস ওরফে কালা এবং রতন ব্যাপারী নামে আরও দুই দুষ্কৃতীকে বৈদ্যবাটী থেকে পুলিশ গ্রেফতার করে। পুলিশের দাবি, ধৃতেরা আদতে চুঁচুড়ার রবীন্দ্রনগরের বাসিন্দা। তারা সেখানকার দুষ্কৃতী টোটনের দলে ছিল। অভ্যন্তরীণ গোলমালের জেরে বিশালের দলে ভেড়ে। বিষ্ণু খুনে তাদের ঠিক কী ভূমিকা, পুলিশ দেখছে।
পুলিশ সূত্রের খবর, বিশাল এক তরুণীকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল। তরুণীর পরিবার ওই প্রস্তাব নাকচ করে দেয়। পরে বিষ্ণুর সঙ্গে মেয়েটির ঘনিষ্ঠতা হয়। তাতেই বিশাল খেপে যায়। অভিযোগ, বদলা নিতে গত গত ১০ অক্টোবর রাতে বিশাল এবং তার দলবল বিষ্ণুকে মোটরবাইকে তুলে আনে কৃষ্ণের বাড়িতে। ঘাড়ে চপারের কোপে এবং শ্বাসরোধ করে বিশাল তাকে খুন করে। চপার দিয়ে তাঁর হাত-পা কেটে ফেলা হয়। ধড়-মুণ্ড বিচ্ছিন্ন করা হয়। দেহাংশ প্লাস্টিকের প্যাকেটে মুড়ে নাইলনের ব্যাগে ভরা হয়।
বিশালের নির্দেশে শাগরেদরা ব্যাগে ভরা দেহাংশ বিভিন্ন জায়গায় ফেলে দেয়। ঘটনার ১৬ দিন পরে, সোমবার রাতে কৃষ্ণ এবং রাজকুমার গ্রেফতার হয়। উদ্ধার হয় কাটা হাত-পা। বাকি দেহাংশের খোঁজ চালাচ্ছেন তদন্তকারীরা। পুলিশ সূত্রের খবর, উদ্ধার হওয়া দেহাংশ এ দিন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত করা হয়।
ডিএনএ পরীক্ষার জন্য ওই দেহাংশ থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। বিষ্ণুর বাড়ির লোকের সঙ্গে ওই নমুনা মিলিয়ে তাঁর পরিচয়ের ব্যাপারে আরও নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy